Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Utsashree Scheme

শিক্ষক-সঙ্কটে ‘উৎসশ্রী’র দিকে আঙুল কমিটির

শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে রাজ্য যে ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছিল, তাতে গত মার্চ পর্যন্ত ২৭,৫০৬ জন স্কুল বদল করেছেন। প্রাথমিক স্তরে ৯২২১ জন।

picture of teacher.

দু’বছর ধরে শিক্ষকের অভাবে জেলায়-জেলায় স্কুলগুলিতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

রবিশঙ্কর দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩০
Share: Save:

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই রাজ্যের শিক্ষক-বদলি নীতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন সামনে এল বিধানসভার বিদ্যালয় শিক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে।

দু’বছর ধরে শিক্ষকের অভাবে জেলায়-জেলায় স্কুলগুলিতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা ধরা পড়েছে ওই রিপোর্টে। আর সে জন্য শিক্ষক-বদলির লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের চালু করা ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পকেই দায়ী করেছে ওই কমিটি।

এই ‘শূন্যতা’ কতটা?

শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে রাজ্য যে ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছিল, তাতে গত মার্চ পর্যন্ত ২৭,৫০৬ জন স্কুল বদল করেছেন। প্রাথমিক স্তরে ৯২২১ জন। উচ্চ প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে ১৮,২৮৫ জন। ফলে জেলায়, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে বহু স্কুলে শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছে।

শিক্ষকের অভাবে জেলায়-জেলায় বহু স্কুলে যে কঠিন সমস্যা তৈরি হচ্ছে, বিধায়কদের অভিজ্ঞতায় তা বার বার সামনে এসেছে। সেই সমস্যা আরও নির্দিষ্ট ভাবে সামনে এসেছে এই রিপোর্টে। ২০২১-২২ এবং ২০২২- ২৩ শিক্ষাবর্ষ নিয়ে তৈরি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে বদলির কারণে বিশেষত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে ওই সমস্ত বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনে ব্যাঘাত ঘটছে।

কমিটির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা একটি জেলা ঘুরেছি। অন্যান্য জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতা এবং তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এই রিপোর্ট বিধানসভায় জমা দিয়েছি।’’

বদলি ছাড়া নিয়োগের অভাবেও সমস্যা বেড়েছে। কমিটিকে শিক্ষা দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৬৮৩৬টি। ২০২১-২২ সালে সেখানে ১০ হাজার নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৫১,৬৭২ এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৫৯২৯। তার পরে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে গোটা প্রক্রিয়া আরও জটিল, বিলম্বিত হয়েছে। কমিটির পরামর্শ, ‘টেট প্রতি বছর হওয়া উচিত।’ শিক্ষকের অভাব থাকা স্কুলে নিয়োগে অগ্রাধিকারের কথাও বলা হয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘গত মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা ২৮,৫৭০টি।’ সে ক্ষেত্রে অবশ্য পদোন্নতির মাধ্যমে তা পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে বলে শিক্ষা দফতর জানিয়েছে।

গ্রামাঞ্চলের উল্টো ছবি শহরাঞ্চলের সরকারি স্কুল নিয়ে কমিটির পর্যবেক্ষণে। কমিটি দেখেছে, ‘শহরাঞ্চলে বাংলা মাধ্যমের বেশ কিছু স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নগণ্য। কিন্তু সেখানে পরিকাঠামো ও শিক্ষক রয়েছেন।’ রাজ্য সরকার পরিচালিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চাহিদা থাকায় তা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়কদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে রাজ্যের ৮২,৭৭১টি স্কুলকে ‘কম্পোজ়িট গ্রান্ট’ বাবদ বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছিল ২৮৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। মিড ডে মিল, স্কুলে পানীয় জল ও অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে অবশ্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে স্থায়ী কমিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teachers West Bengal Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE