Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

টিকাকরণের লক্ষ্যে শনিবারের চেয়েও দূরে

প্রতিটি কেন্দ্রেই ১০০ জন গ্রাহকের টিকা নেওয়ার কথা থাকলেও এ দিন ১২০ জনের তালিকা তৈরি রাখা হয়েছিল।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৪৮
Share: Save:

প্রথম দিন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। তাই সোমবার, প্রথম দফার করোনা টিকাকরণের দ্বিতীয় দিনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের উপরে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। যদিও তা সম্ভব হয়নি। কোনও জেলা লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে, কোথাও লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। রাতে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০৭টি কেন্দ্র মিলিয়ে প্রতিষেধক নিয়েছেন ১৪,১১০ জন। যা শনিবারের থেকে কম (প্রতিষেধক নিয়েছিলেন ১৫,৭০৭ জন)! এ দিন ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা ছিল ২০ হাজার ৭০০ জনের। তা সত্ত্বেও অবশ্য গোটা দেশে টিকাকরণে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বঙ্গ।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যোগাযোগের সমস্যার জন্যই গ্রাহকের সংখ্যা কম। সর্বত্র কো-উইন অ্যাপ যথাযথ ভাবে কাজ করেনি। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও অনেকে ঠিকমতো মেসেজ পাননি। তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে টিকা নিতে আসার বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’’ এ দিন এসএমএস বিভ্রাটের জন্য সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছতে না পারার কথা জানিয়েছেন টিকা প্রাপকদের অনেকেই। সূত্রের খবর, প্রতিটি কেন্দ্রেই ১০০ জন গ্রাহকের টিকা নেওয়ার কথা থাকলেও এ দিন ১২০ জনের তালিকা তৈরি রাখা হয়েছিল। কারণ হিসেবে এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, কো-উইন অ্যাপ বি‌ভ্রাটের জন্য অনেক গ্রাহকই সময়মতো খবর পাচ্ছেন না। ফলে কম্পিউটারে তালিকা তৈরি করে ফোন করে জানানোর সময় অনেক গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাই অতিরিক্ত ২০ জনের নাম রাখা হয়েছিল। যাতে দিনের শেষে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছনো যায়।

এ দিনও কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে ১৪ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তার মধ্যে দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগণায় টিকা নেওয়ার পরে ৩৪ বছরের এক মহিলার কাঁপুনি ও বমি শুরু হলে তাঁকে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবার উত্তরবঙ্গে ৪৬ বছরের এক মহিলার শ্বাসকষ্ট ও বমিবমি ভাব দেখা দেওয়ায় তাঁকে ফালাকাটা মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, ‘‘সোমবারে সারা রাজ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ১০০০ জনের মধ্যে ১ জন। যা সাধারণত যে কোনও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবুও ওই দু’জনের সমস্যা একটু বেশি বলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’ এন আর এস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিসি রায় হাসপাতালের নার্স পিঙ্কি শূরের শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে। তবে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য আরও কয়েক দিন তাঁকে হাসপাতালে রাখা হবে।

এ দিন সকাল ৯টা থেকে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা ছিল। সেই মতো কলকাতার চারটি বেসরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি, পুলিশের পাইলট কার সকালেই পৌঁছে গিয়েছিল বালিগঞ্জে কলকাতা পুরসভার ভ্যাকসিন স্টোরে। কিন্তু স্টোরকিপার সময়ে না আসায় প্রায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করতে হয়। ৯টার কয়েক মিনিট আগে অবশ্য ভ্যাকসিনের গাড়ি রওনা দেয় ওই সব হাসপাতালের পথে।

তবে এ দিন কিছু জেলার বহু কেন্দ্র ১০০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়েছে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় শনিবার যেখানে ৫৭ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছিল, সেখানে এ দিন হয়েছে প্রায় ৮৩ শতাংশের! ভাল সাড়া মিলেছে মালদহেও। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, সোমবার ওই জেলার আটটি কেন্দ্রের অনেকগুলিতেই বিকেলের আগে ৮০ শতাংশ প্রতিষেধক দেওয়া হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরেও বিকেল ৪টের মধ্যে ৯০ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে। ছবিটা ইতিবাচক হুগলিতেও। জেলার ১২টি কেন্দ্রে ১৩৮৫ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল। নিয়েছেন ১০৮৭ জন। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, তালিকায় থাকা প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে আত্মবিশ্বাস জোগানোর চেষ্টা হয়েছে। তারই ফল মিলেছে।

আবার হাওড়া জেলায় যাঁদের ফোন করে ডাকা হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশেরই কো-উইন পোর্টালে নাম আসেনি। ফলে তাঁদের অনেকেই প্রতিষেধক নিতে রাজি হননি। আবার অনেক ইচ্ছুক স্বাস্থ্যকর্মী নিজে থেকেই টিকা নিতে আসেন। তাঁদের নামও পোর্টালে না-থাকায় টিকা দেওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে মাত্র ৫০ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে। সিএমওএইচ ভবানী দাস বলেন, ‘‘৮টি কেন্দ্রে টিকাকরণ হচ্ছে। সব জায়গায় শোচনীয় অবস্থা।’’ বীরভূমেরই রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলায় ৫টি কেন্দ্রে ৬০০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়েছেন ১৮৭ জন।

শনিবার ঝাড়গ্রামে ১০০ শতাংশ গ্রাহকই টিকা নিলেও এ দিন সেখানকার চারটি কেন্দ্রে ৪৮০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মীই আসেননি। প্রথম দিন গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে আসা কিংবা দ্বিতীয় তালিকা থেকে শূন্যস্থান পূরণের যে উদ্যোগ ছিল, সে সবে ঘাটতির জেরেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে জানা গিয়েছে। একই কথা জানাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের স্বাস্থ্যকর্তারা। ওই জেলায় এ দিন ৫৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। আবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১টি কেন্দ্রে গড়ে ৩০-৪০ জন করে প্রতিষেধক নিয়েছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় ৬০-৮০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে গ্রহীতার সংখ্যা। তবে, এ দিন নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা থাকায় অনেকে আসেননি বলে জানা যাচ্ছে। কোচবিহার ও পুরুলিয়া আবার লক্ষ্যের ধারে কাছেই পৌঁছতে পারেনি। পুরুলিয়ার হুড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ১০০ জন প্রাপকের মধ্যে এসেছিলেন ১৪ জন। অথচ, শনিবার ওই কেন্দ্রে ৭৫ জন প্রতিষেধক নিয়েছিলেন। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রাপক তালিকায় থাকা এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘দুশ্চিন্তা রয়েছে। তাই যাইনি।’’ স্বাস্থ্য কর্তারা বলছেন, ‘‘একাংশের মধ্যে ভীতি রয়েছে। তা কাটাতে করে বোঝানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE