Advertisement
E-Paper

যাবে না যৌথ পথে, বাংলার রেল থমকেই

রাজ্যে রেল প্রকল্পগুলির কাজ এগোচ্ছে না, উল্টে কমে যাচ্ছে বরাদ্দ। কবে সেগুলির কাজ শেষ হবে তারও কোনও ঠিক নেই। এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিল রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য কয়েকটি রাজ্যে রেলের প্রকল্প রূপায়ণের জট ছাড়ানোর একটা চেষ্টা চালিয়েছিল সুরেশ প্রভুর মন্ত্রক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৭

রাজ্যে রেল প্রকল্পগুলির কাজ এগোচ্ছে না, উল্টে কমে যাচ্ছে বরাদ্দ। কবে সেগুলির কাজ শেষ হবে তারও কোনও ঠিক নেই। এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিল রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য কয়েকটি রাজ্যে রেলের প্রকল্প রূপায়ণের জট ছাড়ানোর একটা চেষ্টা চালিয়েছিল সুরেশ প্রভুর মন্ত্রক। ওড়িশা, কর্নাটক বা রাজস্থানের মতো একাধিক রাজ্য তাতে সাড়া দিয়ে এগিয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে রেল মন্ত্রকের প্রস্তাব। যার নিট ফল, বাংলার রেল প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ চলে গেল আরও অনিশ্চয়তার গর্ভে। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকারের এই মনোভাবের কারণে জট কাটার আশু কোনও সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছে না রেল মন্ত্রক। রাজ্যে একাধিক রেল কারখানা, মেট্রো প্রকল্প, নতুন লাইন বা ডাবলিং কবে শেষ হবে, জানে না কোনও পক্ষই।

কী প্রস্তাব দিয়েছিল রেল?

তাদের প্রস্তাব ছিল, প্রকল্পগুলির রূপায়ণে রাজ্যগুলিও এগিয়ে আসুক। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। অধিকাংশ প্রকল্পেই চাহিদা মতো অর্থ বরাদ্দ করা যাচ্ছে না। প্রকল্প রূপায়ণের সময়সীমাও পিছিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা দূর করতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে রেলের সঙ্গে ‘স্পেশ্যাল পারপাস ভেহিক্যাল’ (এসপিভি) বা একটি বিশেষ সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রভু। ওড়িশা, কর্নাটক, রাজস্থান তাতে সায় দেওয়ায় তাদের সঙ্গে এসপিভি গড়েছে রেল। এই সব রাজ্যের প্রকল্পগুলি সময়ে শেষ করতে বিশেষ পদক্ষেপও করেছে রেল।

কিন্তু বাংলা সে পথে নেই। কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার বেশ কয়েক মাস পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরেই প্রথম কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত মিলেছিল কিছুটা। মমতার দিল্লি যাত্রার পরেই তৃণমূল সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রতিনিধি দলটির দাবি ছিল, রাজ্যের বিভিন্ন রেল প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান বাড়ানো হোক। যাতে সেগুলি সময়ে শেষ হয়। ওই বৈঠকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন প্রভু।

তৃণমূলের ওই প্রতিনিধি দলের কাছেও এসপিভি গড়ে যৌথ প্রয়াস চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রভু। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা করি। তাঁর দলের সাংসদরা আমার কাছে আসায় আমি এসপিভি গঠন করে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’ রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

রেল মন্ত্রক বলছে, তাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় রাজ্যের সঙ্গে এই ধরনের এসপিভি বানানোর পক্ষপাতী তারা। এতে রেলের কোনও প্রকল্পে রাজ্যের অংশীদারি থাকবে ৫১ শতাংশ। বাকিটা থাকবে রেলের হাতে। প্রকল্পের খরচ ভাগাভাগি হবে সেই অনুপাতে। প্রকল্প শেষ হলে সেটির রক্ষণাবেক্ষণ করা, ভাড়া বিন্যাস তৈরি করার দায়িত্বে থাকবে রেল মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৮টি রাজ্যকে ওই প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রভু। রাজ্যের স্বার্থে সকলের আগে ওই প্রস্তাব মেনে নেয় ওড়িশা।

প্রস্তাব নাকচ করার পিছনে পশ্চিমবঙ্গের যুক্তি কী?

রাজ্যের বক্তব্য, এমনিতেই সরকারের মাথায় পাহাড়-প্রমাণ দেনা। সেই দেনা মেটাতে গিয়েই সব অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নেও যথেষ্ট অর্থ নেই। রাজ্য সরকারের পক্ষে নতুন করে রেলের প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করা সম্ভব নয়। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলছেন, ‘‘আমরা রাজ্যের প্রকল্পের জন্য অর্থ চেয়েছিলাম। কারণ, সেগুলি কেন্দ্রীয় প্রকল্প। বাজেটে ঘোষিত প্রকল্পের জন্য অর্থ দিতে কেন্দ্র দায়বদ্ধ।’’

তৃণমূল নেতৃত্বের নেতিবাচক জবাবে অস্বস্তিতে প্রভুও। তৃণমূল শিবিরের জবাব ও কেন্দ্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে প্রভু বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য এগিয়ে না এলে আমরা কী করব!’’ আপাতত তাই বাজেট বরাদ্দেই ভরসা রাখতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গকে। সে ক্ষেত্রেও বড় প্রশ্নচিহ্ন মমতা সরকারের জমি নীতি। গত কয়েক বছরে রাজ্যের রেলের প্রকল্পগুলির জন্য জমি অধিগ্রহণের যা গতি, তাতে রেল বাজেটে এ বার যে বরাদ্দটুকু পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে, তার পুরোটাও খরচ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে রেল মন্ত্রকের কর্তাদের।

west bengal rail suresh prabhu odisha karnataka rajasthan mamata bandopadhyay narendra modi chief minister prime minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy