কেন্দ্রীয় দলকে সহযোগিতা করার পরামর্শ দিয়ে রাজ্যকে চিঠি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের।
করোনা আবহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় দলের সফর ঘিরে তুঙ্গে উঠল কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত। রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলে প্রোটোকল ভেঙে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছে— এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরের দিনই নবান্নে চিঠি এল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে। কেন্দ্রের চিঠিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরাসরি অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হল, কেন্দ্রীয় দলকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য। যদিও ওই চিঠি নবান্নে পৌঁছনোর আগেই একই রকম ভাবে রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করলেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা। দিল্লিতে সাংবাদিকদের সামনে রাজ্যের ওই অসহযোগিতার প্রসঙ্গ তুললেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্রও। এ সবের পর রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। রাজ্যের অবস্থান তাঁদের জানিয়েছি।” যদিও দিনের শেষে কলকাতা পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই শহর ঘুরে দেখতে বেরোয় কেন্দ্রীয় ওই দল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা এ রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের নজরে এসেছে, কলকাতা এবং জলপাইগুড়িতে পৌঁছনো কেন্দ্রীয় দল রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছে না। এমনকি, তাদের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাদের কোনও জায়গা ঘুরে দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তারা কথা বলতে পারছে না। সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়েও দেখতে পারছে না ওই দল।’’ অভিযোগ তোলার পাশাপাশি রাজ্যকে ওই চিঠিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের বলে এবং শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় দল গিয়েছে। তার বিরোধিতা করা কার্যত ওই আইন এবং শীর্ষ আদালতের নির্দেশকে অমান্য করা। ওই চিঠিতে রাজ্যকে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শ মেনে কেন্দ্রীয় দলকে যেন প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হয়।
এই চিঠি নবান্নে পৌঁছনোর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকেই চলছিল কেন্দ্র রাজ্য দুই তরফেই তৎপরতা। সোমবার নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করে গুরুসদয় দত্ত রোডে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অতিথিশালায় ওঠে কলকাতায় আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তারা মঙ্গলবার সকালে ওই অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে আশপাশের এলাকা ঘুরে ফের ফিরে আসেন সেখানে। তার পরেই সেখানে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ পূর্ব) দেবস্মিতা দাস এবং অন্য পুলিশ আধিকারিকেরা। তাঁরা চলে যাওয়ার পর অতিথিশালাতেই থেকে যান কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। দুপুরে ওই দলের নেতা অপূর্ব চন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পাচ্ছি না। লকডাউনের জন্য আমাদের কোথাও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনও সহযোগিতা পাচ্ছি না।”
আরও পড়ুন: মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে পথে নামল কেন্দ্রীয় দল
মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে এই চিঠিই পাঠানো হয়েছে
অন্য রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাওয়া কেন্দ্রীয় দলের প্রসঙ্গও এ দিন তোলেন অপূর্ব চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘অন্য দলগুলো রাজ্যের সহযোগিতা পাচ্ছে। এখানে কেন সহযোগিতা করা হচ্ছে না তা আমরা বুঝতে পারছি না।” এর পরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত ওই সচিব জানান, তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন বিষয়টি নিয়ে। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফের ওই অতিথিশালায় পৌঁছন। সেখানে তিনি ওই কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যসচিব কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বৈঠক সেরে চলে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই কেন্দ্রীয় দল রাস্তায় নামে। তাদের কনভয়ের সঙ্গী হয় কলকাতা পুলিশ। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বিএসএফ জওয়ানরা। কেন্দ্রীয় দলটি বালিগঞ্জ থেকে বেরিয়ে যাদবপুর-প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড হয়ে বাইপাসের দিকে যায়। বাইপাস ধরে ঘোরাফেরার পর তাঁরা ফের একই রাস্তায় ফিরে এসে টালিগঞ্জের দিকে যান। তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে কারও সঙ্গে কথা বলেননি।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু বেড়ে ১৫, সক্রিয় আক্রান্ত পৌনে তিনশো
কেন্দ্রীয় দল যখন রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, নবান্নে তখন মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আমি ওঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। ওঁরা বলেছেন যে, বিভিন্ন জায়গায় যেতে চান। কথা বলতে চান। আমি বলেছি, লোকাল অফিসার দিয়ে দিচ্ছি। তিনিই ওঁদের নিয়ে যাবেন। তবে আমি রাজ্যের অবস্থানের কথা তাঁদের বলেছি। তাঁরা আমাদের সঙ্গে কথা বলে এলে অনেক ভাল হত। জলপাইগুড়ির দলটিকেও আমরা সমস্ত রিপোর্ট দিয়েছি। তাঁরাও কোথাও যেতে চাইলে আমরা বিবেচনা করব।” একই সঙ্গে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘কোনও কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে এলে প্রোটোকল অনুসারে মুখ্যসচিবের সঙ্গে সবার আগে দেখা করতে হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy