Advertisement
E-Paper

জন্মদিনে ছেলে তো নেই, সম্বল রেওয়াজটুকুই

সাতসকালে বাজারে গিয়ে তাঁর প্রিয় চিংড়ি কিনেছেন ছেলের বাবা সৌমেন মালিক। প্রতি বারের মতো বড় ছেলের জন্য জামা কিনেছেন মা গঙ্গা।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৭
স্মরণ: ছেলের জন্মদিনে এ ভাবেই আয়োজন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

স্মরণ: ছেলের জন্মদিনে এ ভাবেই আয়োজন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

সেলাইয়ের কাজ থেকে ছুটি নিয়েছেন মা। গ্রিল কারখানার কাজে যাননি বাবাও। ছেলের জন্মদিন যে!

সাতসকালে বাজারে গিয়ে তাঁর প্রিয় চিংড়ি কিনেছেন ছেলের বাবা সৌমেন মালিক। প্রতি বারের মতো বড় ছেলের জন্য জামা কিনেছেন মা গঙ্গা। স্নান সেরে পুজো দিয়ে, সকাল সকাল রান্না সেরে সাত পদ সাজিয়ে দিয়েছেন তাঁর সামনে।

একটু ভুল হল।

এ সবই সাজানো রয়েছে ছেলের ছবির সামনে।

ছ’মাস হল তাঁদের ছেলে, রাজ্য পুলিশের এসআই অমিতাভ মালিক তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। মধ্যমগ্রামের পাটুলির মালিক পরিবারে শুক্রবার গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে বিষাদের সেই ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে।

অমিতাভ মালিক। দার্জিলিং থানার এসআই গত বছরের ১২ অক্টোবরের রাতে গিয়েছিলেন আত্মগোপন করা বিমল গুরুংকে ধরতে। ১৩ অক্টোবরের সকালে ফিরেছিল তাঁর প্রাণহীন দেহ।

এ দিন ছিল অমিতাভর জন্মদিন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, টেবিলের উপরে অমিতাভর কম বয়সের ছবি। ছবির সামনে থালায় সাজানো তাঁর প্রিয় পদ। গঙ্গা বললেন, ‘‘প্রতি বারই জন্মদিনে ওকে জামা কিনে দিতাম। এ বারও দিয়েছি।’’

অমিতাভর ঘরে একটি নতুন খাট। পরিপাটি বিছানা। সেখানে অমিতাভর বড় ছবি। তবে ঘরে আগের থেকে আসবাব কিছুটা কম। সৌমেন জানালেন, ‘‘ছেলের বিয়ের সময়ে বউমার বাড়ি থেকে খাট-বিছানা-আলমারি-ড্রেসিং টেবিল এসেছিল। কিছু দিন আগে বউমা এসে সব নিয়ে গিয়েছে। অমিতাভর মৃত্যুর তিন দিন পরেই বউমা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।’’

ছেলের মৃত্যুর পরে মালিক পরিবারের রোজনামচাতেও কিছু বদল এসেছে। ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য এক সময়ে মেশিন কিনে ব্লাউজ সেলাই করার কাজ শুরু করেছিলেন গঙ্গা। অমিতাভ চাকরি পাওয়ার পরে তাতে ছেদ পড়েছিল। ফের সেই কাজ শুরু করেছেন। কেন? ‘‘সংসার চালাতে হলে কত কিছুই তো করতে হয়। তাই ফের কাজ করছি।’’ ফের কাজ নিয়েছেন অমিতাভর বাবাও। খড়িবাড়ির একটি মাছ প্রক্রিয়াকরণ সংস্থায় গ্রিল তৈরি এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র ঝালাই দেওয়ার কাজ করছেন তিনি।

সৌমেন জানান, মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তিনি পেয়েছেন। বলা হয়েছিল, পরে পুলিশের তরফ থেকেও পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সে টাকা কেউ তুলে নিয়েছে। কে তুলে নিয়েছেন? সে প্রশ্নে নীরব থাকেন তিনি।

তবে অমিতাভর ভাই অরুণাভকে অস্থায়ী চাকরি দিয়েছে সরকার। বয়স ১৮ হলে তাঁকে চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

অমিতাভর স্ত্রী বিউটি মালিকের সঙ্গে তা হলে কি কোনও যোগাযোগ নেই তাঁদের? গঙ্গা বলেন, ‘‘এক দিন এসে ওর বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছে বউমা। সেটাই স্বাভাবিক।’’ তবে সে দিন সঙ্গে করে পুলিশ নিয়ে আসায় ব্যথিত অমিতাভর মা। গঙ্গার আক্ষেপ, ‘‘এক শহিদ পুলিশকর্মীর বাড়িতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ পাঠাতে হল!’’

কী বলছেন বিউটি? তাঁর বক্তব্য, ‘‘জানি না ওঁরা আমায় নিয়ে কী বলছেন, তবে আমি এমন কোনও কাজ করিনি, যাতে আমার বিরুদ্ধে কিছু বলা যায়। আমার মনে হয় এ সব নিয়ে বাইরে কথা না বলাই ভাল।’’

Amitabha Malik Birthday Martyr Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy