Advertisement
E-Paper

রোজা ভেঙে রক্ত দিলেন লাভলিরা

তাঁদের এই উদ্যোগকে খোলা গলায় সাধুবাদ জানালেন কোচবিহার নতুন মসজিদ কমিটির সম্পাদক আবদুল জলিল আহমেদ। বললেন, “এমনটাই তো হওয়া উচিত। সবাইকেই অভিনন্দন।”

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৫:৩৭
কোচবিহারে রক্তদান শিবির। নিজস্ব চিত্র

কোচবিহারে রক্তদান শিবির। নিজস্ব চিত্র

সাতসকালেই চলে এসেছিলেন ওঁরা। রক্ত দেবেন বলে শিবিরে অপেক্ষা করছিলেন লাভলি বিবি, মিনু বিবি। রক্ত দেওয়ার জন্য রমজান মাসে রোজা ভাঙতে হল তো! মুচকি হাসলেন দু’জনেই। যে কাজের জন্য এসেছেন সেটা যে আরও জরুরি তা ওই হাসিতেই বুঝিয়ে দিলেন ওঁরা।

জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর গরমের মরসুম শুরু হতেই কোচবিহার শহরে রক্তের সঙ্কট শুরু হয়। এর জেরে জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জোগান কমে যায়। তার উপর এ বার পঞ্চায়েত ভোটের জন্য জেলায় মাস দুয়েক ধরে কোথাও রক্তদান শিবির করা যায়নি। ভোট মিটতেই এ ব্যাপারে তৎপর হয় শহরের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। লাভলি-মিনুরা এই গোষ্ঠীরই সদস্য। তাঁদের সঙ্গে আছেন লতা রায়, ঝুমকি শর্মারাও। এই গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যদের উদ্যোগেই বুধবার শহরে আয়োজন করা হয়েছিল রক্তদান শিবিরের।

তাঁদের এই উদ্যোগকে খোলা গলায় সাধুবাদ জানালেন কোচবিহার নতুন মসজিদ কমিটির সম্পাদক আবদুল জলিল আহমেদ। বললেন, “এমনটাই তো হওয়া উচিত। সবাইকেই অভিনন্দন।”

এ দিন রক্ত দিয়েছেন গোষ্ঠীর প্রায় আড়াইশো মহিলা সদস্য, যাঁদের অধিকাংশই গ্রামের বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে জনা পঞ্চাশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এ দিন রক্ত দেওয়ার পরে দুপুরে শিবিরের সামনে প্রশাসনের দেওয়া শংসাপত্র হাতে নিয়ে ঘরোয়া আড্ডায় মাততে দেখা গেল লাভলি-লতাদের। প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের এমন উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ জেলাশাসক কৌশিক সাহা। বললেন, ‘‘রক্তদান শিবির হলেও বাস্তবে এদিনের উদ্যোগ তো আসলে সম্প্রীতির উৎসব!”

এই শিবির করার ব্যাপারে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎসাহ দেখে পাশে তাদের দাঁড়ায় প্রশাসন। দু’পক্ষের আলোচনার পর এদিন কোচবিহার গ্রামোন্নয়ন কেন্দ্রে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়। জেলা গ্রামোন্নয়ন কেন্দ্রের আধিকারিক তমোজিৎ চক্রবর্তী এদিন জানান, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আড়াইশোর বেশি সদস্য মহিলা রক্ত দিয়েছেন। যাদের অন্তত কুড়ি শতাংশই সংখ্যালঘু পরিবারের মহিলা। কোচবিহার জেলা হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কে জোগান এখনও স্বাভাবিক নয়। মহিলাদের উদ্যোগে এরকম শিবির ধারাবাহিক ভাবে হলে রক্ত সমস্যা কিছুটা মিটবে।”

পুঁটিমারির বাসিন্দা লাভলি বলেন, “রক্ত দেব বলেই এদিন রোজা রাখিনি।” গোসানিমারির মিনু বলেন, “এই সুযোগ তো সবসময় আসে না। রক্ত দেব বলে রোজা রাখিনি।” একই কথা শোনালেন সুটকাবাড়ির হাসিনা বানু। লতা বলেন, “এই প্রথম রক্ত দিলাম। বড় একটা কাজ করার অনুভূতি হল।” বড়শাকদলের দুলু দেবশর্মা বলেন, “বেঁচে থাকার লড়াইয়ের বাইরেও যে কিছু করা যায় সেটা আজ অনুভব করলাম।”

Blood donation camp Coach Bihar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy