প্রতীকী ছবি।
কয়েক বছর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলার ধুম পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ওই ধরনের কিছু কলেজ সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে বন্ধ করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সেই জন্য আবেদন করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের কাছে। কেননা ছাত্রাভাবে ধুঁকছে বেশ কিছু বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
অথচ কয়েক বছর আগেও ছবিটা এমন ছিল না। প্রচুর টাকা খরচ করে ওই সব কলেজে পড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ এমন হল কেন?
রাজ্যে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে কমবেশি ৮০টি। আসন প্রায় ৩৭ হাজার। কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছিল, প্রথম সারির কয়েকটি কলেজ ছা়ড়া বাকিগুলিতে পর্যাপ্ত পড়ুয়া পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষাজগতের একাংশের বক্তব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের মূল লক্ষ্য চাকরি। কিন্তু ওই সব কলেজে খরচ করে প়়ড়লেও ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে চাকরি মেলে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির মান উন্নত করার জন্য কেন্দ্র বারবার নির্দেশ দিচ্ছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিংহ ২৩ মার্চ রাজ্যসভায় এই বিষয়ে অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই)-এর ১০ দফা নির্দেশিকার উল্লেখ করেন। সেই নির্দেশিকার অন্যতম বিষয় পড়ুয়াদের চাকরির যোগ্য করে তোলা।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বারে বারেই বলে থাকেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ারা চাকরি পাচ্ছেন না। কেন পাচ্ছেন না? তাঁরা যে-শিক্ষা পাচ্ছেন, তা কি শিল্প ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়?
কলেজগুলির পরিকাঠামো এবং শিক্ষকদের মানের দিকে আঙুল তুলেছেন জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ দত্তও। তাঁর মতে, ছেলেমেয়েরা এই সব পেশাদার কোর্স পড়তে আসেন পাশ করেই চাকরি পাওয়ার আশায়। কিন্তু এখন উৎপাদন শিল্প বা পরিষেবা, কোনও ক্ষেত্রেই চাকরির অবস্থা ভাল নয়। তাই প্রতিযোগিতা প্রবল। ‘‘সেই প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে হলে পড়ুয়াদের অনেক বেশি পারদর্শী হতে হবে। কিন্তু ওই সব কলেজের যা পরিকাঠামো, তাতে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সেই জন্যই ওই সব কলেজে ভর্তি হতে আর তেমন কেউ আগ্রহী হচ্ছে না,’’ বিশ্লেষণ সিদ্ধার্থবাবুর।
মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈকত মৈত্র জানাচ্ছেন, পড়ুয়ারা যাতে পাশ করে বেরিয়ে চাকরি পান, তার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ চলছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির সঙ্গে বিভিন্ন বণিকসভা এবং নানা পেশাদার সংগঠনের যাতে নিবিড় যোগাযোগ থাকে, সেই চেষ্টাও হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকেরা যাতে সময়োপযোগী তথ্য জেনে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, তার জন্য অনলাইনে তালিমের ব্যবস্থা হয়েছে। উপাচার্য জানালেন, ‘‘শিক্ষকেরা যাতে যোগ্য থেকে যোগ্যতর হয়ে উঠতে পারেন, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।’’
চাকরির বাজারে যে-মন্দা চলছে, সেই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিলেন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউশন (আপাই)-এর সভাপতি এবং জেআইএস গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তরণজিৎ সিংহ। ‘‘এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গেও আলোচনা চাইছি আমরা। শিল্প ক্ষেত্রে কিছুটা মন্দা চলছে। এটা বাস্তব সমস্যা,’’ বলেন তরণজিৎ। তাঁর মতে, যাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়েছেন, তাঁরা বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাঁদের দিকটাও দেখা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy