Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

৫ গুণ বেতন বাড়ল মন্ত্রীর সহকারীদের

মন্ত্রীদের মর্জিতে তাঁরা ঢোকেন তাঁদের সহকারী হয়ে। বছর ঘুরলেই তাঁরা ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মীর মর্যাদা পান। তাঁদেরই বেতন এক ধাক্কায় বেড়ে গেল পাঁচ গুণ। শতাংশের হিসেবে ৫০০!

‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মীদের বেতন এক ধাক্কায় বেড়ে গেল পাঁচ গুণ।

‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মীদের বেতন এক ধাক্কায় বেড়ে গেল পাঁচ গুণ।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০৩:৫০
Share: Save:

না কোনও পরীক্ষা। না ইন্টারভিউ!

মন্ত্রীদের মর্জিতে তাঁরা ঢোকেন তাঁদের সহকারী হয়ে। বছর ঘুরলেই তাঁরা ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মীর মর্যাদা পান। তাঁদেরই বেতন এক ধাক্কায় বেড়ে গেল পাঁচ গুণ। শতাংশের হিসেবে ৫০০!

সম্প্রতি এই হারেই মন্ত্রীদের সহকারীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

রাজ্যে যখন বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা এবং বেতন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাই করছে সরকারী কর্মী সংগঠনগুলির একটি অংশ। তাঁদের বক্তব্য, পরীক্ষার পরিবর্তে মন্ত্রীর ইচ্ছা এবং পছন্দের ভিত্তিতে সরকারি মহলে পা রাখেন সহকারীরা। এক বছর পরে তাঁরা ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ সরকারি চাকরি পেতে যখন লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী পরীক্ষা পাশের অপেক্ষায় থাকেন, তখন মন্ত্রীদের সহকারীরা বিনা পরীক্ষায় সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। সহকারী পদটি তার প্রথম ধাপ।

আরও পড়ুন: রাজ্যে কি আবার লগ্নি সংস্থার থাবা

এক-এক জন সহকারী এত দিন মাসে দু’হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। এ বার থেকে তাঁরা প্রতি মাসে পাবেন ১০ হাজার টাকা। প্রশাসনের অনেকেরই দাবি, বর্তমান সময়ের নিরিখে দু’হাজার টাকার মূল্য খুবই কম। তাই মানবিক দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আধিকারিক মহলের দাবি, বাম জমানা থেকেই এক জন মন্ত্রী বছরে দু’জন করে সহকারী নিয়োগ করতে পারতেন। তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় পর্বে, ২০১৭ সাল থেকে এক জন মন্ত্রীকে প্রতি বছর তিন জন করে সহকারী নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। পারিশ্রমিক অবশ্য ছিল মাসে দু’হাজার টাকা করেই।

আগে রাজ্য সরকারের ৬৩টি দফতর ছিল। ২০১৬-য় সেটা কমিয়ে ৫০ করা হয়। এই মুহূর্তে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য-সংখ্যা ৪৩। দফতর ৫০টি। এখন কোনও কোনও মন্ত্রীকে একাধিক দফতর সামলাতে হচ্ছে। তাই ৫০টি দফতরের জন্য তিন জন করে মোট ১৫০ জন সহকারীকে এক বছরে নিয়োগ করতে পারেন মন্ত্রীরা। ১০ হাজার টাকার হিসেবে বছরে ১৮ কোটি টাকা পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে সরকারকে। বিগত বাম সরকারের দীর্ঘ ৩৪ বছরে সরকারি চাকরিতে বহু নিয়োগ হয়েছিল এই ভাবেই।

এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘এলাকার গরিব, পরিশ্রমী ও সৎ যুবকদেরই সহকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। গ্রুপ ডি পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পান বলে ন্যূনতম মাধ্যমিক পাশ হতে হয় সংশ্লিষ্ট সহকারীকে।’’ ঘটনাচক্রে কয়েক মাস আগে ছ’হাজার গ্রুপ ডি পদের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতী। পরীক্ষার ফল বেরোয়নি এখনও।

সরকারি সূত্রের খবর, মন্ত্রীদের সহকারী নিয়োগের নতুন নিয়ম বেঁধে দিয়েছে রাজ্য। এ বার থেকে অর্থবর্ষের শুরুতে, এপ্রিলে সহকারী নিয়োগ করে ফেলতে হবে। অর্থ দফতরের আধিকারিকদের একটি অংশের দাবি, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নিয়োগ হলে প্রতি বছর ক’জন সহকারী নিযুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের জন্য কত টাকা বরাদ্দ করতে হবে, ক’জন সহকারী গ্রুপ ডি বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছেন— সবই সহজে বোঝা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE