Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকল্পের টাকা আটকে ভাল কাজের তিরস্কার!

সাধারণ ভাবে ভাল কাজ করতে পারলে পুরস্কার পাওয়ার কথা। কিন্তু কার্যত জুটছে তিরস্কার! ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঢের ভাল কাজ করে এখন এমনই দশা রাজ্যের, আরও নির্দিষ্ট করে বললে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

এই তার পুরস্কার! নাকি তিরস্কার?

সাধারণ ভাবে ভাল কাজ করতে পারলে পুরস্কার পাওয়ার কথা। কিন্তু কার্যত জুটছে তিরস্কার! ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঢের ভাল কাজ করে এখন এমনই দশা রাজ্যের, আরও নির্দিষ্ট করে বললে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের।

ওই দফতর সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এবং তার বড় অংশই শ্রমিকদের মজুরি। এ বছর সব মিলিয়ে ৬২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে কেন্দ্র থেকে। কিন্তু তার পরেও যে-পরিমাণ কাজ হয়েছে, সেই অনুপাতে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে পঞ্চায়েত দফতরের অভিযোগ। আর যথাসময়ে এই প্রাপ্য না-পাওয়াটাই তিরস্কারের মতো বাজছে।

তবে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারই যে সব চেয়ে ভাল কাজ করেছে, তা স্বীকার করছে কেন্দ্র। সোমবার রাজ্যসভায় তৃণমূল সদস্য মানস ভুঁইয়ার একটি প্রশ্নের জবাবে এ কথা মেনে নেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। তিনি জানান, ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে সব চেয়ে বেশি টাকা খরচও করেছে পশ্চিমবঙ্গ। প্রশ্ন উঠছে, যে-রাজ্য কাজে সর্বোত্তম, তাদেরই টাকা বকেয়া থাকছে কেন?

কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, অক্টোবর এবং নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গকে যথাক্রমে ৩০০ এবং ২৭০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসেই টাকা দিয়ে চলেছে কেন্দ্র। এখন কেন্দ্রীয় বাজেটের সংশোধিত ব্যয়ের হিসেব চলছে। তাই বরাদ্দ অনুমোদনে কিছুটা দেরি হচ্ছে। নতুন বছরে চলতি আর্থিক বছরের পুরো টাকা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব অমরজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘প্রতিটি রাজ্যকেই সমান ভাবে শক্তিশালী করতে চায় কেন্দ্র। যে-সব রাজ্যে বন্যা বা খরা হয়েছে, অনুদানের বেশিটাই তাদের দিতে হয়েছে। যেমন কেরলে বন্যার পরে কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্যের বেশিটাই চলে গিয়েছে।’’ ওই মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, শেষ অর্থবর্ষের প্রকল্প-নথি কেন্দ্রে জমা দিতেও কিছুটা দেরি করেছে পশ্চিমবঙ্গ।

রাজ্যের পঞ্চায়েতকর্তাদের বক্তব্য, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ১০০ দিনের প্রকল্পে যখন কাজ শুরু হয়, তখনই গত বছরের ২১০০ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। এ বছর ২৬ কোটি কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ইতিমধ্যেই যে কাজ হয়েছে, তাতে প্রায় ২৭ কোটি কর্মদিবস পূরণ হতে চলেছে। আর্থিক বছর শেষ হতে তিন মাস বাকি। শীতে ১০০ দিনের কাজে জোয়ার আসে। কিন্তু কেন্দ্র যা বরাদ্দ করেছে, তাতে এ বছরের মজুরি বা সরঞ্জামের খরচ উঠলেও বকেয়া মেটানো যাচ্ছে না। মজুরির যে-টাকা মেটানো হয়েছে, তার মধ্যে ২৭০০ কোটি টাকা শ্রমিকেরা কাজ করার আট দিনের মধ্যে পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বকেয়া মজুরির ৭৫০ কোটি টাকা পেতে শ্রমিকদের তিন মাসেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়োজনে মজুরির টাকা রাজ্য বাজেট থেকেই মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েত দফতরকে। কিন্তু সমস্যা সেখানেও। কারণ, ১০০ দিনের কাজ যাঁরা পান বা করেন, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দিল্লি থেকে টাকা জমা পড়ে। ফলে রাজ্য চাইলেও নিজস্ব বাজেট থেকে ওই মজুরি মেটানোর সুযোগ কম। কারণ, কাজ প্রাপকদের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের হাতে নেই। এক পঞ্চায়েতকর্তা বলেন, ‘‘নবান্ন থেকে কিছু টাকা মিললে আমরা মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দিল্লির কাছে বিশেষ অনুমতি চাইব।’’

এই টানাপড়েনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ‘‘সংবিধান বলছে, ১০০ দিনের প্রকল্পে যে যত কাজ চাইবে, সরকার তা দিতে বাধ্য। আমরা সেই কাজ করছি। কেন্দ্র এ বার টাকা দিক,’’ দাবি তুলেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE