কারও পদবি গান্ধী বা শাহ নয়। তবে পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ হতেই রাজ্যের দক্ষিণ থেকে উত্তর প্রান্তে ওঁরা পরিবার-যোগে টিকিট পেয়েছেন বলে ছড়িয়েছে জল্পনা। যাঁরা টিকিট পেয়েছেন, তাঁরা রাজনৈতিক যোগ্যতায় প্রার্থী হয়েছেন— প্রায় সব ক্ষেত্রেই এমন দাবি করা হয়েছে। যদিও তাতে টিপ্পনী আটকানো যায়নি।
বীরভূমের রামপুরহাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির ৫ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী পম্পা মুখোপাধ্যায়। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাই তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী অধ্যক্ষ নীহার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী। পম্পা ২০১৩-১৮ পর্যন্ত ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন।
মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূলের বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী টগর সাহা তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, ওই আসনের প্রার্থী ছিলেন কেরিনা খাতুন। তিনি আগেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বড়ঞা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রবীন ঘোষ বলেন, “এক জন প্রার্থীর পিছনে ‘ডামি’ হিসাবে প্রার্থী দেওয়া হয়। জেলা নেতৃত্বের নির্দেশেই বিধায়কের স্ত্রী মনোনয়নপত্র দিয়েছেন।’’ জেলার চার তৃণমূল বিধায়কের সন্তানেরাও এ বার জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে লড়ছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাসের ‘সম্পর্কিত’ দাদা পঞ্চায়েত সমিতিতে, তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েতে প্রার্থী। কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদারের একাধিক আত্মীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছেন। বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘যোগ্যতা থাকলে এবং মানুষ চাইলে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন।’’ উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক দেবেশ মণ্ডলের ছেলে পঞ্চায়েতে এবং বিধায়কের ভাই পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী। দেবেশ বলেন, ‘‘ভাই ও ছেলের স্বাধীনতা আছে রাজনীতি করার। দল তাঁদের যোগ্য মনে করেই টিকিট দিয়েছে।’’ জেলার বাগদার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের ছেলে জেলা পরিষদে প্রার্থী। বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ছেলেকে প্রার্থী করা হয়েছে।’’
হুগলি জেলা পরিষদে আরামবাগের একটি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের বোন। তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন, সাংসদের বোন হওয়ার সুবাদেই টিকিট। অপরূপার অবশ্য দাবি, ‘‘সুপারিশ করিনি। দলের সিদ্ধান্তেই বোন প্রার্থী হয়েছে।’’ উত্তর দিনাজপুরে রাজ্যের মন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মণের স্ত্রী, মন্ত্রী গোলাম রব্বানির ভাই, চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের ছেলে, নির্দল হিসাবে মেয়ে প্রার্থী হয়েছেন।
পুরুলিয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে আবার প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর বৌদি পদ্মাবতী মাহাতো তৃণমূলের প্রার্থী হলেও তাঁর ছেলে, জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ মেঘদূত মাহাতো এ বার প্রার্থী হননি। মেঘদূতের বক্তব্য, ‘‘দল বলেছে, পরিবারের এক জনের বেশি প্রার্থী করা যাবে না। মা প্রার্থী হয়েছেন বলে, সরে দাঁড়ালাম।’’
সিপিএমের আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক কিশোর দাসের মেয়ে পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিশোরের বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষ দাঁড়ালে, তাঁদের ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন তুলে দিতে বাধ্য করা হতে পারে। তাই পরিবারের লোকেদেরও প্রার্থী হিসেবে বেছে নিচ্ছি।’’ উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের ১০ নম্বর আসনে চাকুলিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমান কংগ্রেস নেতা আলি ইমরান রমজের (ভিক্টর) বোন কংগ্রেসের টিকিটের লড়ছেন।
পুরুলিয়ায় বিজেপির দুই বিধায়ক— বলরামপুরের বাণেশ্বর মাহাতোর স্ত্রী এবং কাশীপুরের কমলাকান্ত হাঁসদার স্ত্রী জেলা পরিষদে টিকিট পেয়েছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)