শুক্রবার শেষ বিকেল থেকেই ফের ঝড়, বৃষ্টি শুরু হয়েছে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। ঘন মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। সঙ্গে মেঘের গর্জন। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এটা কালবৈশাখী। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার। তার সঙ্গে ছিল স্থানীয় মেঘেরও প্রভাব।
এ দিনের কালবৈশাখীতে শিয়ালদহ শাখায় দারুণ ভাবে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বেশ কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। শিয়ালদহ মেন শাখাতেও ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। পূর্ব বর্ধমান ও বুদবুদে বাজ পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। কালবৈশাখীতে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু জায়গায় বহু গাছ উপড়ে পড়ে। তুমুল ঝড়ে গাছের বড় ডাল রাস্তায় এসে পড়ে পার্ক স্ট্রিটে। গাছ ভেঙে পড়ে বিবাদি বাগে। বরাত জোরে বোঁচে যান পথচারীরা।
কালবৈশাখীর দাপটে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ময়দান, মহাকরণ, বিবাদি বাগ এবং ই এম বাইপাসের বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে যায়। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের কাছে ঝোড়ো হাওয়াতে মুচিপাড়া থানার পুলিশের গাড়িতে গাছ পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়। কলকাতা পুরসভা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা রাস্তা থেকে গাছ সরাতে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছেন।
ঝড়-বৃষ্টির কারণে শিয়ালদহ এবং হাওড়ার শাখায় ট্রেন চলাচলেও প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ওভারহেডের তার ছিঁড়ে গিয়ে বিপর্যয় ঘটেছে। শিয়ালদহ-নদিয়া শাখায় এখনও ব্যাহত ট্রেন পরিষেবা। বালিগঞ্জ-বজবজ রুটেও ট্রেন চলাচল বন্ধ। শিয়ালদহের পাশাপাশি হাওড়া শাখাতেও একই সমস্যা। ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখাতেও বিপর্যস্ত ট্রেন পরিষেবা। হাওড়া-আমতা শাখাতে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। সন্ধের মুখে ঝড়-বৃষ্টির জেরে অফিসফেরত যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। ধীরে ধীরে পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় শিয়ালদহ স্টেশনে থিকথিকে ভিড়। যাঁরা কলকাতায় কাজে আসেন, তাঁরা স্টেশন চত্ত্বরে আশ্রয় নেন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই ভোগান্তি চলবে। বাগবাজারে ট্রেন লাইনে গাছ পড়ে চক্র রেলের পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর।
দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলিতেও কম বেশি ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার উপর দিয়ে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ার জন্যই এই দুর্যোগ।
দুপুর থেকেই চড়া রোদে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বাড়ছিল দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই। বেশ হাঁসফাঁস করছিল কলকাতা।
এরই মধ্যে স্বস্তির খবর দেয় হাওয়া অফিস। জানায়, কলকাতা সহ-দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়ায় কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হবে। কোনও কোনও এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও আবার ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। তবে টানা বৃষ্টি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আরও পড়ুন- বসন্তসন্ধ্যায় মেঘমল্লার কালবৈশাখীর
আরও পড়ুন- মেঘ সরছে, দোল-হোলিতে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া
বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও, আবহাওয়ার খুব একটা হেরফের হবে না। শনিবার সকাল থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে। অস্বস্তিকর গরমের মধ্যে ফের কাটাতে হতে পারে শহরকে।