খাবারে ভেজাল বা ক্ষতিকারক পদার্থ আছে কি না, তা দেখতে নতুন পাঁচটি পরীক্ষাগার তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে এগুলি তৈরি করা হবে শিলিগুড়ি, আসানসোল, দুর্গাপুর, খড়্গপুর ও বহরমপুরে। খরচ দেবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। তবে পরীক্ষাগারগুলি চালাবে কোনও বেসরকারি সংস্থা।
কেন এই পরিকল্পনা? সরকারের বক্তব্য, রাজ্যের বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলি চড়া দামে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করে। ফল জানতেও অনেক সময় লেগে যায়। তাই এমন কয়েকটি পরীক্ষাগার তৈরির প্রয়োজন, যেখানে পরীক্ষার খরচ তুলনামূলক কম হবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণও থাকবে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের এক কর্তা জানান, সরকারের পক্ষে এই ধরনের পরীক্ষাগার চালানো সম্ভব নয়। তারা শুধু সাহায্যকারীর ভূমিকায় থাকবে। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অনুদান পেলেই বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে আগ্রহপত্র চাওয়া হবে।’’
ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সম্প্রতি একটি বহুজাতিক সংস্থার প্যাকেটজাত খাবার নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। পাউরুটিতে ক্ষতিকারক পদার্থ থাকা নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল। এই প্রেক্ষিতে সরকারি পরীক্ষাগারে পরীক্ষিত ছাপ মারা খাবারের চাহিদা বাড়ছে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। এই কারণেই পরীক্ষাগার তৈরির বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া
হচ্ছে বলে জানান এক কর্তা।
ওই কর্তা আরও জানান, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের নমুনা পরীক্ষার কাজে পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই পিছিয়ে। পরিকাঠামো এবং লোকবলের অভাবে পরীক্ষার কাজ সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া খাদ্যপণ্যের মান যাচাইয়ের বিষয়টিও অবহেলিত। বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ-সহ অন্যান্য রাজ্যে যে ভাবে বিভিন্ন খাদ্যের উপাদান সংগ্রহ করে তার মান পরীক্ষা করা হয়, পশ্চিমবঙ্গ সে তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে। অথচ খাবারে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাও মনে করেন, খাদ্যে ভেজাল বা ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করে ইতিবাচক শংসাপত্র পেলে এর নিরাপত্তার দিকটিও সুনিশ্চিত হয়। স্বাস্থ্য দফতরের অধীন খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনারের অফিসের কর্তাদের অবশ্য দাবি, সমস্যা মেটাতে বিভিন্ন পদে লোক নেওয়া হচ্ছে। এতে সমস্যা অনেকটাই মিটবে। রাজ্য থেকে আম, আনারস, আলু-সহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যকে জীবাণুমুক্ত করে যাতে রফতানি বাড়ানো যায়, তার জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চুঁচুড়ায় একটি গামা বিকিরণ পরীক্ষাগার তৈরি করেছে।
প্রকল্পের যাবতীয় খরচ দিয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রক। সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে। পরীক্ষাগারটিকে বাণিজ্যিক ভাবে চালাতে এখন বেসরকারি সংস্থার খোঁজ চলছে।
রাজ্যে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছ’টি পরীক্ষাগার রয়েছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্র খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নির্ণায়ক পর্ষদের অধীন। স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে একটি পরীক্ষাগার রয়েছে। এ ছাড়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্রিয়াজাত বা সাধারণ খাদ্যপণ্যের মান পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি সব ক’টি বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি। এর বাইরে চারটি পরীক্ষাগার কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। সরকারের বক্তব্য, নতুন পরীক্ষাগার হলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেরও প্রসার ঘটবে।