Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

নীল তিমির গ্রাসে আরও যে কত জন

‘ব্লু হোয়েল গেম এর অপকারিতা’ নিয়ে সচেতনতা চলাকালীন শুক্রবার বারাসতের স্কুল থেকে আরও কিছু ছাত্রী আসক্ত বলে খোঁজ মিলেছে। বারাসত কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুলে এ দিন সব ছাত্রীদের ডেকে কথা বলা এবং হাত পরীক্ষা শুরু করেন শিক্ষিকারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২০
Share: Save:

কোথাও রচনা লিখতে দিয়ে, কোথাও বা হাত পরীক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন স্কুলে মিলছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’-এ আসক্ত পড়ুয়ার খোঁজ। যত বাড়ছে খোঁজ, ততই বেরিয়ে আসছে মারণ খেলায় আসক্ত নতুন নতুন নাম। কিন্তু এর সুরাহা কোথায়? এ খেলা বন্ধ করবে কে? বহু চেষ্টাতেও মিলছে না দিশা।

বৃহস্পতিবার বারাসত গার্লস স্কুলে দুই ছাত্রী ওই মারণ খেলায় আসক্ত বলে খবর এসেছিল। শুক্রবার আবার জানা গিয়েছে বারাসাত কালীকৃষ্ণ স্কুলের দুই ছাত্রী ওই খেলায় আসক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, আরও কিছু ছাত্রীও নিয়মিত এই খেলা খেলছে বলে খবর এসেছে। ব্লু হোয়েলে আসক্ত হুগলির রিষড়া স্কুলের এক ছাত্রেরও কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে হাওড়ার শ্যামপুরের অনন্তপুর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলের আর এক ছাত্রের।

‘ব্লু হোয়েল গেম এর অপকারিতা’ নিয়ে সচেতনতা চলাকালীন শুক্রবার বারাসতের স্কুল থেকে আরও কিছু ছাত্রী আসক্ত বলে খোঁজ মিলেছে। বারাসত কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুলে এ দিন সব ছাত্রীদের ডেকে কথা বলা এবং হাত পরীক্ষা শুরু করেন শিক্ষিকারা। দেখা যায়, একটি মেয়ের হাতে নীল তিমি আঁকা। সে জানায়, পরিচিত এক দাদার থেকে ব্লু হোয়েলের লিঙ্ক পেয়েছে। আর একটি মেয়ের হাত-পায়ে ব্লেড দিয়ে অজস্র কাটাকাটি ছিল। এর পরেই তাদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হয়।

প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছি। সন্দেহ হলেই তাদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা কমিটিকে জানাচ্ছি।’’ বারাসত গার্লস স্কুলেও এ দিন ছাত্রীদের কাউন্সেলিং করেন শিক্ষিকারা। প্রধান শিক্ষিকা পাপড়ি বসু বলেন, ‘‘একটু মনমরা মনে হলেই মেয়েদের সমস্যা জানতে চাইছি। মনোবিদেরাও ওদের সঙ্গে কথা বলছেন।’’

ওই দু’টি স্কুলের যে মেয়েরা এই মারণ খেলায় অনেকটা ধাপ এগিয়েছিল, তাদের থেকেই জানা যায় আরও কিছু মেয়ে খেলার প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। অনেকে আবার এতটা না বুঝেই ডাউনলোড করেছিল খেলা। সকলের পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ, সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদেরা। মনোবিদ রিনা ভঞ্জচৌধুরী বলেন, ‘‘গেমের চূড়ান্ত ধাপে কিছু মেয়ে জটিল পরিস্থিতিতে ছিল। কান্নাকাটি করছিল। এখন ওরা অনেক স্বাভাবিক।’’

গত কয়েক মাস ধরে যেমন অবস্থা হয়েছিল বালির বাসিন্দা, মাহেশের স্কুল পড়ুয়াটিরও। সদা চঞ্চল ছেলেকে বেশ কয়েক দিন ধরেই মনমরা লাগছিল। গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইলে ব্যস্ত থাকত সে। ভোরে উঠেই তুলে নিত মোবাইল। ছেলের এমন আচরণে চিন্তায় পড়ে যান বাবা-মা। শেষমেশ বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফোন আসে, ছেলে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের শিকার!

মা-বাবা জানান, পড়াশোনাতেও অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল বছর পনেরোর ছেলেটি। বৃহস্পতিবার ওই পড়ুয়া বাঁ হাত তুলতে চমকে ওঠেন শিক্ষক। দেখেন, কব্জির কয়েক ইঞ্চি নীচে মাছের অবয়ব আঁকা। কাছে ডেকে দেখা যায়, হাতে ব্লু হোয়েলের ১১ নম্বর ধাপের নীল তিমির ছবি। আসে পুলিশ। প্রধান শিক্ষক সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই ছাত্রের কাউন্সেলিং করতে বলা হয়েছে।’’ শুক্রবার ওই ছাত্র জানায়, দিন কুড়ি আগে তার মোবাইলে আচমকাই ব্লু হোয়েল গেমের লিঙ্ক আসে। কৌতূহলবশত ক্লিক করতেই সে জড়িয়ে পরে ওই খেলায়। ওই কিশোরের বাবা বলেন, ‘‘পড়াশোনার জন্য ইন্টারনেটের দরকার হয় বলে মোবাইলটা কিনে দিয়েছিলাম।’’ ঘটনা জানার পরেই ছেলের থেকে মোবাইল নিয়ে নিয়েছেন বাবা-মা।

বৃহস্পতিবার দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে নিয়ে হইচই হয় হাওড়ার শ্যামপুরের অনন্তপুর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে। স্কুল সূত্রের খবর, ক্লাসে বসে ট্যাব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল ছেলেটা। বারবার তাকাচ্ছিল ডান হাতের ক্রেপ ব্যান্ডেজ ঢাকা কব্জির দিকে। সন্দেহ হওয়ায় শিক্ষকেরা বিষয়টি জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। এর পরেই তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ দেখে কব্জিতে ‘ব্লু হোয়েল’ লেখা। পুলিশের দাবি, ওই পড়ুয়া কাউন্সেলিংয়ে জানিয়েছে, এক বন্ধু মারফত ‘ব্লু হোয়েল গেম’ ডাউনলোড করেছিল। প্রথমে নীল কালি দিয়ে ‘ব্লু হোয়েল’ শব্দটি লিখে ছবি তুলে পাঠিয়েছিল ওই অ্যাপে। কিন্তু ছবি গৃহীত হয়নি। জানানো হয়, রক্ত দিয়ে লিখতে হবে। তখন মশা মেরে তার রক্ত আলতার সঙ্গে মিশিয়ে কব্জিতে ‘ব্লু হোয়েল’ লেখে। এ বার তা গৃহীত হয়। পুলিশকে ওই ছাত্র জানিয়েছে, এক সময়ে খেলা থেকে সে বেরোতে চেয়েছিল। তখন তার বাবাকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Blue Whale Game Online Game Death Suicide ব্লু হোয়েল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy