Advertisement
E-Paper

মিছিলের ব্রিগেডকে বুথের ব্রিগেড করা যাবে তো! রবি বিকেলে প্রশ্ন নিয়ে ফিরলেন ‘শূন্য’তে থাকা কমরেডরা

সিপিএমে এই আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে যে, ব্রিগেড ডাকলে ভরে যায়, কিন্তু বুথে এজেন্ট পাওয়া যায় না কেন? এ ব্যাপারে শাখাস্তরের দলীয় সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করা হয় দলে।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৫৭
What did CPM achieve in DYFI\\\\\\\\\\\\\\\'s brigade rally.

রবিবারের ব্রিগেডে ভিড়ের শক্তি দেখাল সিপিএম। ছবি: ফেসবুক।

রবিবারের ব্রিগেডে ভিড়ের শক্তি দেখাল সিপিএম। কিন্তু সেই ভিড় কি বুথে প্রতিফলিত হবে? সিপিএমের কাছে এটাই এখন সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্ন। যে প্রশ্নের অবতারণা না-করে মঞ্চ থেকেই আগামীর কাজ বুঝিয়ে দিতে চাইলেন নেতৃত্ব। যেমন সিপিএম নেতা আভাস রায়চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় বললেন, ‘‘মাঠের ব্রিগেডকে বুথের ব্রিগেডে পরিণত করতে হবে।’’ কিন্তু লোকসভার আগে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত তা কি সম্ভব? সম্ভবত, রবিবার বিকেলে সেই প্রশ্ন নিয়েই নিজেদের বুথ এলাকায় ফিরে গেলেন সিপিএমের কর্মী, সমর্থকেরা।

৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রা শেষে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই একটি হিসেব দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, কোচবিহার থেকে যাদবপুর— ২৯১০ কিলোমিটার যাত্রায় সব মিলিয়ে ১২ লক্ষ মানুষ শামিল হয়েছিলেন। সিপিএম নেতাদের আশা ছিল, তার এক তৃতীয়াংশকেও যদি ব্রিগেডে হাজির করানো যায়, তা হলে শক্তি প্রদর্শন করা যাবে। কত ভিড় হয়েছিল তা নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকতে পারে। তবে রবিবারের ময়দানে সিপিএম যে ভাল জমায়েত করতে পেরেছে, তা মানছেন অনেকেই। যে দলের বাংলায় একটিও বিধানসভা বা লোকসভা আসন নেই, তাদের এই জমায়েত তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি। যদিও এ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘ভিড় তো হল বুঝলাম। কিন্তু যাঁরা এলেন তাঁরাই তো গিয়ে বিজেপিকে ভোট দেবেন। তা হলে সিপিএমের লাভটা কী হল?’’

রবিবার ব্রিগেডের বাম জমায়েতে বেশ কিছু ছবি দেখা গেল, যা সিপিএমের সংগঠনের জন্য ‘আশাব্যঞ্জক’ বলে মনে করছেন অনেক নেতাই। সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী অংশের একেবারে প্রান্তিক অংশের মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। ঝাড়গ্রামের এক আদিবাসী নেতা সভা শুরুর আগে ঘরোয়া আলোচনায় বলছিলেন, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দিক থেকেই আদিবাসী অংশের মধ্যে প্রভাব কমছিল। মাঝের ১২-১৩ বছর যা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। কিন্তু এ বার আমরা বেশ ভাল জমায়েত করতে পেরেছি।’’ মাঠ ঘুরেও তা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।

সিপিএমে এই আলোচনা অনেক দিনই রয়েছে, ব্রিগেড ডাকলে ভরে যায়, কিন্তু বুথে এজেন্ট পাওয়া যায় না কেন? এ ব্যাপারে শাখাস্তরের দলীয় সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করা হয়। আবার নিচুতলার অনেকের ক্ষোভ রয়েছে মাঝারি নেতাদের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন হল, সেই ফাঁক কি লোকসভার আগে পুরণ করতে পারবে সিপিএম? যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা টি-২০ নয়। আমরা টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছি।’’ অর্থাৎ আজ বললেই কাল বদলে যাবে না সবটা। ধৈর্য ধরে ক্রিজে টিকে থাকতে হবে। তবে মিনাক্ষী এ-ও বলেছেন, ‘‘আমাদের দলে সিরাজের মতো খেলোয়াড়ও আছে। যারা দেড় দিনে টেস্ট ম্যাচ শেষ করে দিতে পারে।’’

ব্রিগেডের সভা থেকে তৃণমূল-বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছেন বাম নেতানেত্রীরা। ফের নতুন করে তৃণমূল-বিজেপি সেটিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন নেতারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানিয়েছেন সেলিম, মিনাক্ষী, আভাসরা। পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়েছেন তাঁরা। আভাস তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘শুভেন্দু ঢেকুর তুললেও তৃণমূলের চুরির গন্ধই বার হয়।’’ তবে ব্রিগেডের সমাবেশ থেকে কংগ্রেস বা আইএসএফ নিয়ে কোনও কথাই প্রায় শোনা যায়নি বাম যুব নেতাদের মুখ থেকে। লোকসভায় একক লড়াইয়ের বার্তাই ঠারেঠোরে দিয়ে রেখেছেন তাঁরা। বোঝা গিয়েছে, কংগ্রেস নিয়ে এখনই কোনও কথা বলতে চাইছে না সিপিএম। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের অবস্থান দেখে তবেই মুখ খোলা হবে।

প্রজন্মের সেতুবন্ধনেরও সাক্ষী থাকল রবিবারের ব্রিগেড। মঞ্চের নীচে বসে সবার ভাষণ শুনলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। আর মঞ্চে দলের নেতা হিসেবে রইলেন সেলিম এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ আভাস। আর সমাবেশের বেশিরভাগ জুড়ে রইলেন এই প্রজন্মের মিনাক্ষী, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সৃজন ভট্টাচার্যেরা। মাঠে দেখা গেল— এসএফআই করা নাতির কাঁধে ভর করে মাঠে এসেছেন সাতের দশকে সিপিএমের সদস্যপদ পাওয়া কোনও বৃদ্ধ, কিংবা বাবার কাঁধে চেপে সুদূর চন্দ্রকোনা থেকে আসা কোনও শিশু। এ-ও দেখা গিয়েছে, ২০১১ সালের পরে দলের সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়া অনেক মুখও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সভায় এসেছেন, কেউ কেউ আবার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে।

সব মিলিয়ে রবিবারের ব্রিগেড চলে ডিওয়াইএফআই তো বটেই, গোটা সিপিএম শিবিরকেই আশা জাগিয়েছে ভবিষ্যতের জন্য। তবে ভিতরেও প্রশ্ন একটাই, বুথস্তরে কী হবে?

Brigade DYFI Brigade Rally CPM DYFI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy