Advertisement
০২ মে ২০২৪
Anubrata Mandal

রাত ১১টা থেকে ভোর ৩টে, রাখাল, সোনার বাংলা...! কেষ্টর বিরুদ্ধে ইডির চার্জশিট ২০ কথায়

গরু পাচারের পুরো কাজটিই নিয়ন্ত্রিত হত একটি হোটেল থেকে। হোটেলটির নাম সোনার বাংলা। এর মালিকানা ছিল এনামুলের সহযোগী ওই তিন ভাইয়ের। যাঁরা একসঙ্গে জেএইচএম ব্রাদার বলে পরিচিত।  

what did ED Says in their Chargesheet against Anubrata Mondal

অনুব্রতের বিরুদ্ধে চার্জশিটে গরু পাচার সংক্রান্ত এমনই অনেক জানা অজানা তথ্য পেশ করেছে ইডি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ২২:০৭
Share: Save:

হাট থেকে ‘হোটেল’ হয়ে রাখাল বালকের হাতে পৌঁছত পাচারের গরু। রাতের অন্ধকারেও নির্ভুল পথ চিনে তারা পেরিয়ে যেত ভারত-বাংলাদেশ সীমারেখা। আর এই গোটাটাই হত এক বিশেষ ‘সেটিং’-এ। যে সেটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিএসএফের ভূমিকাও। অনুব্রতের বিরুদ্ধে চার্জশিটে গরু পাচার সংক্রান্ত এমনই অনেক জানা অজানা তথ্য পেশ করেছে ইডি। সেই তথ্যে চোখ রাখল আনন্দবাজার অনলাইন।

  • ঘটনার সূচনা ২০১৫ সালে। সেই সময় লালগোলা, ডোমকল, জাঙ্গিপুর, ঔরঙ্গাবাদের শুল্ক দফতরে গরুর নিলামের দায়িত্বে ছিলেন এনামুল হক এবং তাঁর সহযোগী জেএইচএম ভাই বলে পরিচিত জাহাঙ্গির আলম, হুমায়ুন কবীর এবং মেহদি আসান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন শেখ আব্দুল লতিফ এবং আরও কয়েকজন।
  • সাধারণত সীমান্তে পাওয়া বেওয়ারিশ গরুরই নিলাম হয়। সেই টাকা যায় সরকারি তহবিলে। নিলামে কেনা গরু বিক্রি করে যেহেতু বিশেষ লাভ হত না দ্রুত এই দলটি গরু পাচারের কাজে জড়িয়ে পড়েন।
  • তখন শুল্ক ভবনে গরুর নিলাম হত নামমাত্র। এনামুল আর তাঁর সঙ্গীরা নিজেদের নামে বা চেনা-পরিচিতদের নামে ওই গরু কিনে নিতেন।
  • নিলামের গরু ছাড়াও সীমান্তের কাছে থাকা বিভিন্ন জেলার হাট থেকে গরু সংগ্রহ করা হত। ইলমবাজার পশু হাট, বীরভূম পশু হাট, বীরভূমের পাকুর পশু হাট, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘী, ওমরপুর পশু হাট, উত্তর দিনাজপুরের ডালগোলা পশুহাট থেকে গরু আনাত এনামুলেরা।
  • এর মধ্যে বীরভূমের হাট থেকে গরু কেনা এবং বীরভূমের উপর দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়ার কাজের দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল লতিফ ওরফে হিঙ্গল।
  • গরু পাচারের পুরো কাজটিই নিয়ন্ত্রিত হত একটি হোটেল থেকে। হোটেলটির নাম সোনার বাংলা। এর মালিকানা ছিল এনামুলের সহযোগী ওই তিন ভাইয়ের। যাঁরা একসঙ্গে জেএইচএম ব্রাদার বলে পরিচিত।
  • এই সোনার বাংলা হোটেলই পরে হয়ে ওঠে গরু পাচারের কেন্দ্র।
  • হোটেল ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বদলে সোনার বাংলায় চালু হয় মার্বেলের ব্যবসা। কিন্তু সেটা ছিল লোক দেখানো। আসলে ভিতরে নিজের অফিস খুলেছিলেন এনামুল।
  • ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছেই ছিল সোনার বাংলা। সেখানেই তৈরি হয় গরু পাচারের সিন্ডিকেট।
  • প্রথমে সোনার বাংলার কাজ সামলাতেন তিন ভাইয়ের একজন—হুমায়ুন ওরফে পিন্টু হাজি। পরে দায়িত্ব বদলায়।
  • বিভিন্ন হাট থেকে গরু নিয়ে আসা ট্রাকের চালকদের আসতে হত এই সোনার বাংলার অফিসে। এখান থেকেই ঠিক হত কোন সীমান্তে কোন গাড়ি যাবে। যেমন, মুর্শিদাবাদের বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অন্তর্ভুক্ত বিওপি নিমতিতা, বিওপি খান্ডুয়া, বিওপি গিরিয়া।
  • যে ট্রাক ড্রাইভাররা গরু আনতেন তাঁদের একটি টোকেন দেওয়া হত। যাতে পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসন এই গরুর ট্রাকের যাতায়তে কোনও বাধা না দেয়।
  • এর পর সীমান্ত এলাকায় এই গরু তুলে দেওয়া হত স্থানীয় রাখালদের হাতে। যাঁদের কাছে এই সীমান্ত এলাকা হাতের তালুর মতো চেনা।
  • রাত ১১ টা থেকে ভোর ৩টে ছিল গরু পাচারের সময়।
  • এ ব্যাপারে এনামুল এবং তাঁর সঙ্গীরা আগেভাগে বিএসএফের সঙ্গে ‘সেটিং’ বা বোঝাপড়া করে রাখতেন।
  • বিএসএফের পরোক্ষ সাহায্যেই রাতের অন্ধকারে ভারতের সীমান্ত থেকে গরু নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে দিতেন ওই রাখালেরা।
  • ইডি চার্জশিটে জানিয়েছে, বীরভূমের পশুহাট থেকে গরু কেনা এবং তা সুরক্ষিত ভাবে নজর বাঁচিয়ে মুর্শিদাবাদে পাঠানোর দায়িত্বে ছিল অনুব্রতের।
  • নিরপত্তার এই দায়িত্বের বদলেই এনামুলদের কাছ থেকে টাকা আসত অনুব্রতের কাছে।
  • এনামুল এবং লতিফ এ ব্যাপারে অনুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তাঁর দেহরক্ষী সহগল হোসেনের ফোনে।
  • এনামুল এবং সহগলের যোগাযোগের প্রমাণ হিসাবে কল ডিটেলস এর বিস্তারিত তথ্যও রয়েছে চার্জশিটে।
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE