Advertisement
E-Paper

যোগ্য কারও চাকরি যেতে দেব না! ৮ দফা দাবি শোনার পর কী কথা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, কী কী পরামর্শ চাকরিহারাদের

নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, যোগ্য কারও চাকরি তিনি বাতিল হতে দেবেন না। আদালতের রায়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৩৩
What promises did Mamata Banerjee made in the meeting with people who lost jobs

নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি বাতিল হতে দেবেন না, সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে। যদি আদালতে সমস্যার সমাধান না-হয়, আইন মেনেই তিনি ‘যোগ্য’দের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবেন। আপাতত স্কুলগুলিতে চাকরিহারাদের স্বেচ্ছায় পরিষেবা (ভলান্টারি সার্ভিস) চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বৈঠক শেষের কিছু ক্ষণের মধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। রায়ের ‘মডিফিকেশন’ চেয়ে তাদের আবেদন, যত দিন না নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে, অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ যত দিন না সম্পূর্ণ হচ্ছে, তত দিন ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের চাকরিতে বহাল রাখা হোক।

এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। এই চাকরিহারাদের একাংশের সঙ্গে সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠক করেন মমতা। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসেরা। মমতার সামনে মঞ্চে উঠে আট দফা দাবি পড়ে শোনান চাকরিচ্যুতদের প্রতিনিধিরা। নিজেদের অবস্থান জানিয়ে রাজ্য সরকারের সাহায্য চান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, আগে যোগ্যদের সমস্যার সমাধান করবেন। তার পর যাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, তাঁদের বিষয়টিও তিনি দেখবেন।

চাকরিহারাদের আট দফা দাবি

  • সঠিক তথ্য ও নথি নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
  • সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন, তাঁর বেঞ্চে রিভিউ পিটিশন দেওয়া যাবে না।
  • রায় পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-হওয়া পর্যন্ত কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্তের চিঠি দেওয়া যাবে না। স্বমহিমায় চাকরিতে বহাল রাখতে হবে।
  • এই সময়ের মধ্যে নতুন করে পরীক্ষার কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না। পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে যেতে চাইছেন না চাকরিহারারা।
  • যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক করে, যোগ্যদের পরিচ্ছন্ন তালিকা নিয়ে রিভিউ প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
  • সকল যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ করতে হবে।
  • সব বিরোধী দল চাকরিহারাদের প্রতি সহমর্মী। তাদের নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের আবেদন।
  • আদালতে দক্ষ আইনজীবীর অভাব বোধ করেছেন চাকরিহারারা। তাঁদের পক্ষে দক্ষ আইনজীবীর ব্যবস্থা করে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

মমতার আশ্বাস

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, সেই যোগ্য প্রার্থীদের রাজনৈতিক রং না-দেখেই পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘আদালতের রায়ে আমার হৃদয় পাথর হয়ে যাচ্ছে। আমি লাল-নীল-গেরুয়া কোনও রং দেখব না। তাতে আমাকে ওরা জেলে ভরলে ভরুক। আমরা সব সময় চাই, কোনও যোগ্য ব্যক্তির চাকরি যেন না-যায়।’’ যোগ্যদের কারও চাকরি কেড়ে নিতে দেবেন না, চ্যালেঞ্জ করে জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমি বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।’’ যোগ্যদের জন্য বিকল্প বন্দোবস্তের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কোনও রাখঢাক নেই। আইন অনুযায়ীই যা করার করব। পথের মধ্যে থেকেই পথ খুঁজে নিতে হবে।’’ কিন্তু বিকল্প কী ব্যবস্থা করবেন, তা এখনই খোলসা করতে চাননি মমতা। জানিয়েছেন, আগে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত আবেদন জানাবে। রায়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে শীর্ষ আদালতের থেকে। সেখানে সুরাহা না-মিললে বিকল্পের পথে হাঁটবে সরকার। মমতা বলেন, ‘‘আদালতের কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাইব। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে, যাঁরা স্কুলে পড়াতেন, তাঁদের জন্য আদালতের ব্যাখ্যা কী। স্কুল কে চালাবেন? বাকি কাজ কে চালাবেন? কাউকে না খাইয়ে মারার অধিকার তো কারও নেই। চাকরি দিতে পারবেন না, আমার অনুরোধ তাঁরা যেন চাকরি কেড়ে না নেন। তার পর শিক্ষা দফতর যা করার করবে।’’

চাকরিহারাদের কী পরামর্শ

আপাতত চাকরিহারাদের নিজ নিজ স্কুলে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরামর্শ, যত দিন না তাঁদের কাছে সরকার থেকে বরখাস্তের চিঠি যাচ্ছে, তত দিন স্বেচ্ছায় পরিষেবা দিন চাকরিহারারা। তাতে আদালতের অবমাননা হবে না। কারণ, স্বেচ্ছায় পরিষেবা সকলেই দিতে পারেন। আদালত যদি তাতেও নিষেধ করে, তখন মাস দুয়েকের মধ্যেই যোগ্যদের জন্য বিকল্প বন্দোবস্ত করে দেবে রাজ্য সরকার। যোগ্যদের কাউকে চাকরি হারাতে হবে না। তবে বিকল্প কিছু করার আগে আইনি পরামর্শ মেনে আদালতে আবেদন জানাতে চায় সরকার। মানবিকতার খাতিরে আদালত যেন যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা রাজ্যকে দিয়ে দেয়, সেই আবেদনও জানান তিনি। মমতার কথায়, ‘‘আমরা দু’মাসের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। যোগ্যদের কারও চাকরি বাতিল হবে না। কিন্তু আমরা চাইব, তার আগে মানবিকতার খাতিরে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের হাতে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা তুলে দিক। রায়ের ব্যাখ্যা দিক। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার অধিকার কারও নেই।’’

আইনজীবী কারা?

চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল এবং আদালতের রায়ের ব্যাখ্যা চাওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার কোন কোন আইনজীবীকে নিয়োগ করবে, সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে সেই তালিকা দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, কপিল সিব্বল, রাকেশ দ্বিবেদী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত ভূষণ এবং দেবাঞ্জন মণ্ডল রাজ্য সরকারের হয়ে যোগ্যদের সমর্থনে আইনি লড়াই চালাবেন।

‘অযোগ্য’দের কী পরামর্শ

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উল্লেখ, যাঁরা প্রশ্নাতীত ভাবে ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ (টেন্টেড), তাঁদের চাকরি তো যাবেই, সেই সঙ্গে বেতনও ফেরত দিতে হবে। এই ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, আগে যাঁরা যোগ্য, তাঁদের বিষয়টি দেখা হোক। তার পর ‘অযোগ্য’দের বিষয়েও তিনি বিবেচনা করবেন। কেন তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে, কারা তদন্ত করেছে এবং কী কী প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা দেখা হবে। মমতার কথায়, ‘‘যাঁদের ‘অযোগ্য’ বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী তথ্য আছে আমি দেখব। আবার আপনাদের ডাকব। সত্যি যদি তাঁরা ‘অযোগ্য’ বলে প্রমাণিত হন, আমার তখন কিছু করার থাকবে না। কিন্তু কাকে কেন অযোগ্য বলা হয়েছে, কে তদন্ত করেছে, আলাদা করে সেটা দেখতে হবে। আলাদা করে সেটা নিয়ে আমি কথা বলব। সকলে নিশ্চিন্তে থাকুন।’’

বিরোধীদের আক্রমণ

সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরেই নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে বিরোধীদের একহাত নিয়েছিলেন মমতা। মামলা করার জন্য সিপিএমকে এবং রায়ের জন্য বিজেপিকে দুষেছিলেন তিনি। সিপিএম নেতা তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে সোমবারও নাম করেই আক্রমণ করেন মমতা। জানান, পূর্বতন সরকারের আমলে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। অনেকে দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু সব জেনেও ক্ষমতায় আসার পর কারও চাকরি তিনি খাননি। মমতার কথায়, ‘‘অনেক বদহজম সত্ত্বেও আমি কখনও সিপিএমের কারও চাকরি খাইনি। ২০২২ সাল থেকে এই নোংরা খেলা শুরু হয়েছে। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কেন এই মামলা করলেন? ওঁকে উত্তর দিতে হবে। সিপিএমকে এর জবাব দিতে হবে।’’ নাম না-করে বিজেপিকেও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তারা প্রচার চালাচ্ছে, ২০২৬-এর ভোটের পর চাকরি দেওয়া হবে। মমতা বলেন, ‘‘যাত্রাপালার মাধ্যমে কেউ কেউ আপনাদের ভুল বোঝাচ্ছে। এরা দু’মুখো কেউটে। এদের বিশ্বাস করবেন না। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো আমরা লড়ব। আঘাতের প্রত্যুত্তর ফিরিয়ে দেব। কেউ প্ররোচিত হবেন না। মনে রাখবেন, মাথার উপরে আমাদের সরকার আছে। কারও প্রতি অবিচার হবে না।’’

Mamata Banerjee Bengal SSC Recruitment Verdict SSC recruitment scam Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy