Advertisement
E-Paper

কাদের বেতন ফেরত দিতে হবে, কাদের নয়? চাকরিহারাদের জন্য কী সিদ্ধান্ত, সুপ্রিম কোর্টের রায় পড়ল আনন্দবাজার ডট কম

২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রেখেছে। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রায় সাত হাজার চাকরিহারাকে বেতনও ফেরত দিতে হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৪৪
Who will have to return salary and who will not, explained as per Supreme Court Verdict

২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে রায় ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এই সংক্রান্ত মামলায় এর আগে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, সেই রায় অনেকাংশেই বহাল রেখেছে দেশের শীর্ষ আদালত। হাই কোর্টের রায়ে সামান্য কিছু বদল আনা হয়েছে মাত্র। এই প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারার মধ্যে এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁদের এত দিনের বেতনও ফেরত দিতে হবে। তাঁরা কারা, রায়ে তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ৪১ পৃষ্ঠার রায়ের প্রতিলিপি পড়ে তার হদিস পেতে চেষ্টা করল আনন্দবাজার ডট কম।

বেতন ফেরত দিতে হবে কাদের?

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রশ্নাতীত ভাবে যাঁরা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগী’ (টেন্টেড), তাঁদের চাকরি বাতিলের সঙ্গে বেতনও ফেরত দিতে হবে। তাঁদের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের রায় সম্পূর্ণ বহাল থাকছে। এই ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার।

Who will have to return salary and who will not, explained as per Supreme Court Verdict

কী ভাবে ‘অযোগ্য’ চিহ্নিতকরণ?

  • এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে প্রচুর সাদা খাতা উদ্ধার করেছে সিবিআই। অর্থাৎ, কোনও প্রশ্নের উত্তর না-লিখে সাদা খাতা জমা দিয়েই তাঁরা পাশ করেছেন এবং চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা গিয়েছে।
  • এসএসসির নিয়োগের জন্য যে প্যানেল গঠন করা হয়েছিল, চাকরিপ্রাপকদের অনেকের নামই ছিল না সেই প্যানেলে। অর্থাৎ, প্যানেলের বাইরে থেকে তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। তাঁদেরও ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
  • এ ছাড়া, এসএসসির নিয়োগ প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেউ কেউ তার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। তাঁরাও আদালতের চোখে ‘অযোগ্য’ হিসাবে চিহ্নিত। মূলত এই তিন ধরনের চাকরিপ্রাপক ‘চিহ্নিত অযোগ্য’। তাঁদের চাকরি তো বাতিল হলই, সেই সঙ্গে বেতন ফেরতেরও নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। এ প্রসঙ্গে আদালতের বক্তব্য, ‘‘চিহ্নিত অযোগ্যদের চাকরি বাতিলের যে রায় হাই কোর্ট দিয়েছে, তাতে নাক গলানোর কোনও কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। তাঁরা যা বেতন পেয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ হয়েছে। ফলে এটি প্রতারণা। এই রায় পরিবর্তনের কোনও কারণ নেই।’’

বেতন ফেরত দিতে হবে না কাদের?

২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার অন্যতম প্রধান জটিলতা ছিল ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’ বাছাই। আদালত জানিয়েছে, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যে কারচুপি হয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু উদ্ধার করা যায়নি উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট। তার ফলে অধিকাংশ ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’ প্রার্থীকে চিহ্নিতই করা যায়নি। যে কারণে সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করতে হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, যাঁদের চিহ্নিত করা যায়নি, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে তাঁদের চাকরি বাতিল হবে। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ‘‘অবৈধতার জন্য সমগ্র নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত যথার্থ। এই নিয়োগ ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদের বিরোধী। যে প্রার্থীদের অযোগ্য বলে চিহ্নিত করা যায়নি, তাঁদের নিয়োগ বাতিল হবে। কিন্তু তাঁদের কোনও বেতন ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’

রায়ে আর কী বলা হল?

  • সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বুধবার প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত যে রায় তারা দিয়েছে, যে যে পর্যবেক্ষণ আদালত শুনিয়েছে, এই সংক্রান্ত তদন্তে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। তদন্ত যেমন চলছিল, তেমনই চলবে।
  • সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে হাই কোর্টের যে রায়, তা বহাল রাখা হয়েছে। তবে তাতে প্রয়োজনমতো কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।
  • এসএসসির দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর অপেক্ষমাণ তালিকার প্রার্থীদের (ওয়েটলিস্টেড ক্যান্ডিডেটস) জন্য কিছু বাড়তি পদ (সুপারনিউমেরি পোস্ট) তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন মিলেছিল সেই পদগুলির জন্য। এই সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। তা চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। বুধবার আদালত জানিয়েছে, ওই মামলা আলাদা করে শোনা হবে। আগামী ৮ এপ্রিল ওই মামলার পরবর্তী শুনানি। মূল মামলাকারীর আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘একটা বিশাল দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হয়েছে অযোগ্যদের চাকরি বাঁচানোর জন্য। সেই শুনানি আগামী ৮ এপ্রিল হবে। এখানে দেখা যাবে কী ভাবে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বেআইনি নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত পদ তৈরি করল।’’
  • এ ছাড়া, ২০১৬ সালের এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত অন্য যা যা মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছিল, একসঙ্গে এই রায়ের মাধ্যমেই সেগুলির নিষ্পত্তি করে দেওয়া হল।

মূল মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘‘আদালত বলেছে, চিহ্নিত অযোগ্যদের বেতন ফেরত দিতে হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। যাদের চাকরি গেল, তারা তাতে যোগ দেবে এবং বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় পাবে। অর্থাৎ, হাই কোর্টের রায় বহাল থাকল। যোগ্য-অযোগ্যদের চিহ্নিত করা যায়নি। আদালত তো চিহ্নিত করতেই চেয়েছিল। বার বার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের বিষয়ে নানা রকমের তথ্য এসেছে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হল।’’

ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়ে লেখা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে আদালত। কিন্তু এই তিন মাসের সময়সীমা সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আদালতের রায়ের প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে, চাকরিহারা যে প্রার্থীরা আগে কোনও সরকারি দফতরে বা সরকার পোষিত দফতরে চাকরি করতেন, তিন মাসের মধ‍্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে তাঁদের চাকরি ফেরত দিতে হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

Bengal SSC Recruitment Case Supreme Court SSC recruitment scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy