Advertisement
E-Paper

পরিচয়পত্র কবে পাবেন সব মৎস্যজীবী, প্রশ্ন

মুম্বইয়ে তাজ হামলার পর থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছিল গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া। কিন্তু গত চার বছরেও সেই কাজ শেষ হয়নি দেশে। এ রাজ্যে, বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কাজ এখনও অনেকটাই বাকি।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০০:২৪

মুম্বইয়ে তাজ হামলার পর থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছিল গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া। কিন্তু গত চার বছরেও সেই কাজ শেষ হয়নি দেশে। এ রাজ্যে, বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কাজ এখনও অনেকটাই বাকি। এখনও পরিচয়পত্রের বাইরে রয়ে গিয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ মৎস্যজীবী। নিরাপত্তার দিক থেকে যা বড়সড় ফাঁক। তবে মৎস্য দফতরের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, এ কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। কিন্তু‌ কেন্দ্রীয় সরকার আর দু’তিন মাসের মধ্যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে চায় বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই এ বারও সেই কাজ শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে মৎস্য ইউনিয়নগুলি। কারণ, বর্যার ভরা মরসুমে বেশিরভাগ মৎস্যজীবীই সমুদ্রে থাকবেন।

মৎস্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর (সামুদ্রিক) সন্দীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কাজ প্রতি বছরই করা হচ্ছিল। কিন্তু যে সময়ে ছবি তোলার জন্য ডাকা হয়, অনেক সময়ে মৎস্যজীবীরা আসেন না। বেশ কিছু মৎস্যজীবী পেশা পরিবর্তন করেছেন। তাই আবার নতুন করে আবেদনপত্র নেওয়া হচ্ছে। এ বছরই শেষবারের মতো এই কাজ হবে।’’

২০১১ সালে সিদ্ধান্ত হলেও বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র তৈরির কাজ এ রাজ্যে শুরু হয়েছিল ২০১২ সাল থেকে। কেন্দ্রের চাপে পড়ে এর আগেও মৎস্যজীবীদের কার্ড করানোর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু সেই দিনক্ষণ পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত জেলায় বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র রয়েছে মাত্র ১ লক্ষ মৎস্যজীবীর। যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৫০ শতাংশ বলে মৎস্য দফতরেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে। মৎস্য দফতরে নতুন আবেদনপত্র জমা রয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার মতো। এ বছর কাজে নেমে আরও প্রায় ২৫ হাজার মৎস্যজীবীর কার্ড করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে মৎস্য দফতর।

জেলার ১৭টি সামুদ্রিক মৎস্য ব্লকের মধ্যে পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ এবং সাগরেই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে এবং মাঝিমাল্লাদের সংখ্যা বেশি। কেবল গভীর সমুদ্রে মাঝ ধরতে যাওয়া মাঝিমাল্লারাই নয়, সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৬ রকম পেশার মানুষের এই পরিচয়পত্র পাওয়ার কথা। জাল বোনা, মাছ বয়ে নিয়ে যাওয়া, বন্দরে মাছের প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত অনেক রকমের শ্রমিক, বন্দরের কিছু কর্মীরাও এই পরিচয়পত্র পান। বায়োমেট্রিক কার্ডধারীরা রাজ্য সরকারের কাছেও নানা সময়ে কিছু অনুদানও পেয়ে থাকেন।

প্লাস্টিকের তৈরি ওই কার্ডে মাইক্রোচিপে মৎস্যজীবীদের যাবতীয় তথ্য দেওয়া থাকে। উল্টো দিকে উপকূল থানা থেকে শুরু করে উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং নৌবাহিনীর হাতেও ওই কার্ডের তথ্য জানার জন্য কার্ড রিডার দেওয়া থাকে। কিন্তু এখনও বেশ কিছু মৎস্যজীবীর এই পরিচয়পত্র না থাকায় গভীর সমুদ্রে গিয়ে নানা সময়ে তাঁদের উপকূলরক্ষী বাহিনী বা নৌবাহিনীর জওয়ানদের হাতে হেনস্থা হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে একাধিক ট্রলার মালিকের। পরিচয়পত্রের কাজ শেষ না হওয়ায় নিরাপত্তার দিক থেকেও বড়সড় ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। তবে মৎস্য দফতরের কর্তারা যেমন কাজে দেরির জন্য মৎস্যজীবীদের একটি অংশকে দায়ী করছেন, তেমনি মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিও পাল্টা দোষ চাপাচ্ছে দফতরের উপরেই। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার পরেও কার্ড পাননি অনেকে।

পশ্চিমবঙ্গ ইউনাইটেড ফিসারমেন ইউনিয়নের নেতা বিজন মাইতির কথায়, ‘‘প্রত্যেক বছর কার্ডের কাজের জন্য এমন‌ সময়ে মৎস্যজীবীদের ডাকা হয়, যে সেই সময়ে হয় তাঁরা সমুদ্রে থাকেন, না হলে কাজের এতটাই চাপ থাকে যে হাজির হতে পারেন না। এটা মাছের মরসুম শুরু হওয়ার আগে করার কথা বলেছিলাম আমরা।’’ এ বারও জুলাই আগস্টে কাজ হওয়ার কথা। তখন মাছ ধরা চলবে পুরোদমে।

কেন কাজ করা গেল না? সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎকুমার বাগ বলেন, ‘‘আমাদেরও ইচ্ছে ছিল, এই কাজ মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময়ে করে ফেলার। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের সিদ্ধান্ত এবং যে সংস্থাগুলি কাজ করবে, তাদের অসুবিধার জন্য এই কাজের সময় পিছিয়ে গেল। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে দ্রুত কাজ সেরে ফেলা যায়।’’

fisherman fishing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy