Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

অধীর-সেলিমকে কোনও জবাব দিলেন না অভিষেক, ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির সদস্যের নিশানায় বিজেপি

ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের প্রচারে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছিলেন অধীর চৌধুরী এবং মহম্মদ সেলিম। কিন্তু শনিবার ধূপগুড়ির জনসভায় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আক্রমণের কোনও জবাব দিলেন না।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৪
Share: Save:

শুক্রবার ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের প্রচারে এসে চড়া সুরে বাংলার শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। কিন্তু শনিবার ধূপগুড়ির জনসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আক্রমণের কোনও জবাব দিলেন না। বরং তাঁর নিশানায় আগাগোড়া রইল বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার। অভিষেকের এমন কৌশলী বক্তৃতায় খানিকটা চাপেই পড়েছে বাংলার সিপিএম-কংগ্রেস, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

শনিবার ধূপগুড়ির ফণীর মাঠে অভিষেকের সভা ছিল। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এখন সব জায়গায় হারছে। যে পাঁচটা জায়গায় উপনির্বাচন হচ্ছে, পাঁচটাতেই হারবে ওরা। আর তা দেখেই গ্যাসের দাম ২০০ টাকা কমানো হয়েছে। বলা হচ্ছে রাখির উপহার। আমি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই, রাখি কি পাঁচ বছরে এক বার আসে?’’ এর পরেই অভিষেকের সংযোজন, ‘‘জোড়া ফুলে ভোট দিলে প্রধানমন্ত্রীর দম্ভ চূর্ণ হয়ে যাবে। মোদী ভাবছেন রিমোট কন্ট্রোল আছে। আপনাদের হাতে ইভিএম আছে। রিমোট কন্ট্রোলের থেকে ইভিএমের জোর কত বেশি তা বুঝিয়ে দিন। মনে করে দেখুন, বিজেপি বাংলায় হেরে যাওয়ার পর ৫ টাকা করে ডিজেল-পেট্রলের দাম কমেছিল। ২০২৪ সালে বিজেপি জিতলে গ্যাসের দাম ৩ হাজার টাকা হবে। ইন্ডিয়া জিতলে ৫০০ টাকায় গ্যাস পাওয়া যাবে।’’

শনিবাসরীয় প্রচারসভায় এক বারই কংগ্রেস ও সিপিএমের নাম করেছেন অভিষেক। পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী দলগুলির মনোনয়ন দাখিলের পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘১৯৭৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর এই প্রথম কোনও নির্বাচন হয়েছে যেখানে শাসকদলের থেকে বেশি মনোনয়ন দিয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম প্রায় দেড় লক্ষ মনোনয়ন জমা দিয়েছে। আর তৃণমূল দিয়েছে ৭৫ থেকে ৭৮ হাজার মনোনয়ন।’’ এ ছাড়া ধূপগুড়ির প্রচার সভায় সিপিএম বা কংগ্রেসের নাম উল্লেখ করেননি অভিষেক। বরং বক্তৃতায় ধূপগুড়ির স্থানীয় দাবিদাওয়ার উপরেই জোর দিয়েছেন। ধূপগুড়ি ব্লককে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মহকুমা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন অভিষেক। সঙ্গে ধূপগুড়ির সরকারি হাসপাতালে উন্নত সরঞ্জাম এনে তাকে মহকুমা পর্যায়ের হাসপাতাল তৈরি করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার ধূপগুড়িতে কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্টের প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের সমর্থনে প্রচারে এসে তৃণমূলের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়েছিলেন অধীর এবং সেলিম। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর বলেছিলেন, ‘‘সারা দেশে লুট করছে মোদীর বিজেপি। আর রাজ্যে লুট করছে দিদির তৃণমূল।’’ অধীর আরও বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজবংশীদের অপমান করেছেন। আমি আপনাকে একটা কথা বলি দিদিভাই। সবাই আপনার ঘরের ভাইপো হয়ে জন্মায় না, আপনার বাড়ির খোকাবাবু হয় না। কাউকে খেতে না দিতে পারেন, কিন্তু অপমান করবেন না।’’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক দাবি করেছিলেন, ‘চাকরি চুরি’র সব কথা মমতা এবং অভিষেক জানতেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘যদি পার্থ (চট্টোপাধ্যায়) জেলে যায়, তা হলে পিসি-ভাইপো জেলে যাবে না কেন।’’ বুধবার সকালে দিল্লিতে রাহুলের সঙ্গে অভিষেকের বৈঠক নিয়ে শুক্রবারের সভাতেও টিপ্পনী করেন সেলিম। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভাইপো এখন দেখছে আইনে পারছে না, তাই দিল্লিতে কাকভোরে লাইন করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও লাইন করেই তিনি বাঁচতে পারবেন না।’’

আবার শুক্রবারই মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজ এলাকার একটি বিলাসবহুল হোটেলে বিজেপি-বিরোধী ২৮টি দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের বৈঠকে তৈরি হয় ১৩ জনের কো-অর্ডিনেশন (সমন্বয়) কমিটি। ওই কমিটিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন অভিষেক। ওই জোটের অন্যতম শরিক কংগ্রেস ও সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের সায় নিয়েই তৈরি হয়েছে এই কমিটি। বাংলার রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোটের কথা মাথায় রেখেই অভিষেক রাজ্য স্তরে কোনও বিতর্ক চান না। এমন কোনও বক্তৃতা বা পদক্ষেপ করতে চান না, যাতে জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অসুবিধা হয়। তাই ধূপগুড়ির ভোট প্রচারে এসে অধীর-সেলিমের কোনও আক্রমণের জবাব দেননি তিনি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়িতে উপনির্বাচন। ওই নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের সমর্থনেই শনিবার প্রচারে গিয়েছিলেন অভিষেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE