Advertisement
E-Paper

বীরভূমে তৃণমূলের ঝাঁ চকচকে দলীয় কার্যালয় কোন গৌরী সেনের টাকায়, খুঁজছে ইডি

যে কার্যালয় পাঁচ বছর আগে রথযাত্রার দিন উদ্বোধন করেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেই পার্টি অফিসের আকার ও ঝকমকে ব্যাপারস্যাপার দেখে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, কোথা থেকে এসেছে এত টাকা?

বাসুদেব ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪০
TMC Party office

বোলপুর তৃণমূল কার্যালয় রবিবার। ছবি- বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

তিন তলা ভবনটির অধিকাংশ ঘর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মেঝেয় দামি মার্বেল। রয়েছে ফলস সিলিং। নজর-ক্যামেরা বসানো প্রায় সর্বত্র।

শপিং মল নয়। বোলপুর শহরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। যে কার্যালয় পাঁচ বছর আগে রথযাত্রার দিন উদ্বোধন করেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। হালকা সবুজ রঙের সেই পার্টি অফিসের আকার ও ঝকমকে ব্যাপারস্যাপার দেখে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, কোথা থেকে এসেছে এত টাকা? প্রশ্ন শুনে অনুব্রতের জবাব ছিল, ‘‘২০১৩ সালে আমি এই বাড়ি ন্যায্য মূল্যে কিনেছিলাম।’’ সেই বাড়িই এ বার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) নজরে! কোন গৌরী সেনের টাকায় এই বিলাসবহুল দলীয় অফিস তৈরি হল, তারই তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

সূত্রের খবর, ভবন তৈরিতে কয়েক কোটি টাকা খরচের উৎস কী, তা তদন্ত করে দেখতে চায় ইডি। সেই সূত্রেই অনুব্রতের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত বোলপুর শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি শিবনাথ রায় (কাউন্সিলর)-সহ চার জনকে দিল্লিতে তলব করেছে ইডি। ৩ অক্টোবর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে তাঁদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। কোন পথে এত টাকা এসেছিল, মূলত সেটা জানতেই এই চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ইডি সূত্রের খবর। শিবনাথ সমন পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ওই দলীয় কার্যালয়ে থাকা মা কালীর (যা কেষ্ট-কালী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে) বিপুল অঙ্কের গয়নাও তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুরের বিশাল দলীয় কার্যালয়টি প্রথমে তৃণমূল নেতা তথা পুর-প্রতিনিধি শিবনাথ রায় এবং বোলপুর পুরসভার তিন কর্মীর নামে কেনা হয়েছিল। পরে অনুব্রতের তৈরি করে দেওয়া ট্রাস্টের নামে সেটি হস্তান্তর করা হয়। শিবনাথ-সহ ওই চার জনকেই তলব করা হয়েছে। রবিবার শিবনাথ বলেন, “ইডির সমন পেয়েছি। তদন্তে সব রকম ভাবে সহযোগিতাও করব। তবে এত তাড়াতাড়ির মধ্যে দিল্লি যাওয়া সম্ভব নয় বলে ই-মেল করে জানিয়েছি ইডি-কে।” কেন ডাকা হয়েছে প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় কেনার সময় অনুব্রত আমাদের কয়েক জনকে বেশ কিছু জায়গায় সই করিয়েছিলেন। আমার মনে হয় তার জন্যই ডেকে পাঠানো হয়েছে।” তিন পুরকর্মীর মধ্যে দু’জনের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তৃতীয় জন কিছু বলতে চাননি।

বিজেপির বোলপুর সংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের দাবি, “অনুব্রতের অনুগামীরা কালো টাকার সঙ্গে যুক্ত আছেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আরও বহু জনকে ডাকবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “যা কালো টাকা বা যা বেআইনি সম্পদ, তার সবটা অনুব্রত একা নয়, সবাই মিলেই করেছেন। সুতরাং সত্য উদ্ঘাটন করতে গেলে সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।" তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বোলপুরের জেলা পার্টি অফিসের ট্রাস্টি সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ওই চার জনকে ডাকা হয়েছে বলে জেনেছি। বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’

এক দিকে যখন এই দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের নজরে, তখন অন্য দিকে জেলার একাধিক দলীয় কার্যালয় থেকে মুছে যাচ্ছে বীরভূমের অনুব্রতের নাম ও ছবি! নানুরের হোসেনপুরের পরে এ বার বোলপুরের বাহিরি-পাঁচশোয়া এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে অনুব্রতের নাম ও ছবি আগেই মোছা হয়েছিল বলে খবর। সেই চুনকাম করা অংশের উপরে সম্প্রতি সাঁটানো হয়েছে তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবনির্বাচিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের ছবি। এমন ঘটনায় ফের তৃণমূলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, দলের জেলা সভাপতি থাকা সত্ত্বেও কি অনুব্রতের অস্তিত্ব ধীরে ধীরে ‘মুছেই’ ফেলতে চায় দল?

TMC Bolpur Anubrata Mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy