Advertisement
০২ মে ২০২৪
Samirul Islam TMC

‘নো ভোট টু বিজেপি’র নেতৃত্বে ছিলেন, বীরভূমের কৃষক-সন্তান সামিরুলকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে তৃণমূল

রাজ্যসভার প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরেও তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতা বুঝতেই পারেননি, কে সামিরুল ইসলাম! অনেকে বলছেন, আগে তাঁর নাম শোনেননি। কেউ আবার বলছেন নাম শুনেছেন।

Who is Samirul Islam whom TMC nominated to the Rajya Sabha

(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামিরুল ইসলাম (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ১৪:৪৫
Share: Save:

পেশায় রসায়নের অধ্যাপক। নেশায় সংগঠক। তাঁর মূল কাজ অনগ্রসর শ্রেণিকে সংগঠিত করা। কোভিডের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার জন্য একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিল তাঁর সংগঠন। বস্তুত, সংগঠনের ভূমিকা তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। রবিবার রাতে যখন রাজ্যসভায় প্রার্থী হওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব, তখনও তিনি বলেছিলেন, সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তারা সম্মতি দিলে তবেই তিনি রাজি হবেন।

সংগঠনের নাম ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’। প্রার্থীর নাম সামিরুল ইসলাম। তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রার্থী। সোমবার সকালে যাঁর নাম ঘোষিত হয়েছে আরও পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে। সোমবারেই তিনি রাজ্য বিধানসভায় গিয়ে মনোনয়নপত্রে সইসাবুদ সারবেন।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডল থেকে টুইট করে রাজ্যসভার প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে বাংলার শাসকদল। তালিকার চতুর্থ নামটি দেখে তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাও বুঝতেই পারেননি, কে সামিরুল ইসলাম! কেউ বলছিলেন, নামই শোনেননি। কেউ আবার বললেন, নাম শুনেছেন। কিন্তু আলাপ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগানই তৃণমূল-সামিরুল ‘সেতুবন্ধন’ করে দিয়েছিল। তবে কোনও কালেই রাস্তায় নেমে সক্রিয় ভাবে তৃণমূল করেননি ৩৫ বছর বয়সি গড়িয়া দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের রসায়নের অধ্যাপক।

১৯৮৭ সালে বীরভূমের রামপুরহাট থেকে বেশ কিছুটা দূরে দুনিগ্রামে জন্ম সামিরুলের। সেই এলাকা হাসন বিধানসভার অন্তর্ভুক্ত। পড়াশোনা শুরু দুনিগ্রাম হাইস্কুলে। মাধ্যমিকের পর ভর্তি হন রামপুরহাট হাইস্কুলে। সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক। সামিরুল তার পরে চলে আসেন কলকাতায়। মণীন্দ্র কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক। তারপর দিল্লি আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর। সামিরুলের স্ত্রী আইনজীবী। তবে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে খুব একটা আগ্রহী নন তিনি। প্রশ্ন করায় বললেন, ‘‘ও সব থাক না!’’ তবে বাবার কথা বলতে গিয়ে তাঁর গলায় শ্লাঘা ধরা পড়ছিল, ‘‘বাবা চাষ করতেন। কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। আমি একেবারে প্রান্তিক চাষির ছেলে।’’ দুনিগ্রামের বাড়িতে সামিরুলের মা এখন থাকেন। তিনি অসুস্থ।

সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে সামিরুল বলেন, ‘‘রবিবার রাতে প্রথম তৃণমূল নেতৃত্ব আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি তাঁদের জানাই, আমার যে মূল সংগঠন, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ, তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তারা রাজি হওয়ায় আমি সম্মতি দিই।’’ সামিরুল এ-ও জানিয়েছেন যে, গোটা বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে সোমবার সকালে। দুপুরে বিধানসভায় পৌঁছে মনোনয়নপত্রে সই-সাবুদ করেন তিনি। তবে তার আগে পর্যন্ত জানতেন না, তৃণমূলের কোন কোন বিধায়ক তাঁর প্রস্তাবক, কারা সমর্থক। বিধানসভায় পৌঁছে জানতে পারেন।

সামিরুলের মূল কাজের বিষয় অনগ্রসর শ্রেণিকে সংগঠিত করা। অতিমারির সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন সামিরুল। সেই উদ্যোগে জড়িয়ে ছিল তাঁর সংগঠনও। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ‘নো ভোট টু বিজেপি স্লোগান’ তৈরি, প্রচার এবং একটা সার্বিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে সামিরুলের ভূমিকা নজর কেড়েছিল শাসকদলের। ২০২১ সালের প্রাক্ বিধানসভা পর্ব সামিরুল এবং তৃণমূলকে কাছাকাছি এনেছিল বলেই বলছেন অনেকে। ভোটের পর থেকে ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর সঙ্গে তৃণমূল ধারাবাহিক সমন্বয় রেখে চলেছিল বলেও খবর। সামিরুলের অবশ্য বক্তব্য, কোভিড-পর্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে পর্যবেক্ষণ কমিটি গড়েছিল, তা তাঁকে তৃণমূলের প্রতি বিশেষ ভাবে আকর্ষিত করেছিল।

সক্রিয় ভাবে সংসদীয় বা পরিষদীয় ভোটের রাজনীতি না-করলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ‘সক্রিয়’ অংশগ্রণ ছিল সামিরুলের। সিএএ, এনআরসি বিরোধী আন্দোলন, কৃষক সংগ্রাম— সবেতেই যুক্ত থেকেছেন। কিন্তু কখনও দলীয় রাজনীতির বৃত্তে ছিলেন না। কিছুটা স্বাধীন ভাবেই কাজ করতেন। তা হলে তিনি কেন দলীয় রাজনীতির গণ্ডিতে যুক্ত হলেন? জবাবে সামিরুল বলেন, ‘‘দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমায় বলেছেন, আরও সোচ্চারে বাংলার অধিকার, অনগ্রসর মানুষের হক আদায়ের কথা বলতে হবে। আমি সেটাই করতে চাই।’’ পাশাপাশিই সবিনয়ে জুড়লেন, ‘‘আমার কোনও ভুলভ্রান্তি হলে সাংবাদিকরাও যেন শুধরে দেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajya Sabha TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE