এমন জরিমানা আগেও করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জুড়ে যাওয়া অন্য একটি মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম টেনে এনেছিলেন অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ। বৃহস্পতিবার সেই মামলার সূত্রে অভিষেক এবং কুন্তল দু’জনকেই মাথাপিছু ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। যে টাকা অভিষেকদের জমা দিতে হবে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে। কিন্তু কেন জরিমানা করা হল অভিষেক এবং কুন্তলকে, এ বার জানা গেল তার কারণ।
আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, অভিষেকের আবেদন ধোপে না টেকার জন্যই এই ‘শাস্তি’। কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ইডি এবং সিবিআইকে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন অভিষেককে জেরা করার ব্যাপারে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই আদালতে পাল্টা আবেদন করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভা সাংসদ অভিষেক। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। সুপ্রিম কোর্ট আবার হাই কোর্টে মামলাটি ফেরায়। এর মধ্যে হাইকোর্টে মামলাটির এজলাস বদলায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলাটি যায় বিচারপতি অমৃতা সিন্হার এজলাসে। এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সিন্হার এজলাসে। বিচারপতি সিন্হার রায়ে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা বা প্রত্যাহারের যে আবেদন অভিষেক করেছিলেন, তার কোনও সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই কারণেই জরিমানা।
মামলা ধোপে না টিকলে আদালতের তরফে এই ধরনের জরিমানা করার বহু নজির রয়েছে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের তরফে। নন্দীগ্রাম বিধানসভার রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন মমতা। বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে উঠেছিল মামলাটি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিচারপতির এজলাস বদলের আবেদন জানান। বিচারপতি চন্দ সেই অনুরোধ রাখলেও তাঁর এজলাসে আস্থা না রাখার জন্য ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন মমতাকে। এ ক্ষেত্রেই তা-ই হয়েছে।
অন্য দিকে, কুন্তলের মামলাটিতেও সারবত্তা খুঁজে না পাওয়ায় তাঁকে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
নিয়োগ মামলায় অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন কুন্তল। এ ব্যাপারে তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়ে থানায় চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। কাকতালীয় ভাবে, কুন্তল যেদিন এই অভিযোগ করেন তার আগের দিনই, কলকাতার শহিদ মিনারে ছাত্র এবং যুব তৃণমূলের এক সমাবেশে অভিষেক দাবি করেছিলেন, মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষের মতো নেতারা যখন কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে ছিলেন, তখন তাঁদেরকেও অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।
কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলাটি এর পর কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠলে তিনি বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জনের একই ধরনের দাবি কাকতালীয় হতে পারে না। এই মামলায় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি বলেছিলেন, দরকারে অভিষেককেও জেরা করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআই। যার বিরোধিতা করেছিলেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার অভিষেক এবং কুন্তলকে জরিমানা করে আদালত বোঝাল তাঁদের আবেদনে কোনও সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy