ময়নাগুড়ির সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
‘‘চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত হলে আপনার এত ভয় কেন?’’— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে শুক্রবার এই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাফাল-কাণ্ডে দুর্নীতি নিয়ে এ দিনই একটি সরকারি নথি সামনে আসার পর দিনভর উত্তপ্ত ছিল জাতীয় রাজনীতি। সেই আবহে এ দিন বিকেলে উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়িতে সভা করতে এসে সারদা, নারদ, রোজভ্যালি প্রসঙ্গে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তোলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন তোলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই যাওয়ার পর মমতার ধর্না নিয়েও।
মোদী বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী প্রতারক-লুটেরাদের বাঁচাতে দিনদুপুরে ধর্নায় বসেছেন। যারা টাকা লুট করেছে, তাদের রক্ষা করতে চান? গরিবের উপর যারা জুলুম করেছে, তাদের রক্ষক হতে চান?’’ এর পরেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘গরিব মানুষের টাকা যারা লুট করেছে, প্রতারণা করেছে, চৌকিদার তাদের কাউকে ছাড়বে না। যিনি যতই ধর্না দিন, তাঁর পাশে যত দলই এসে দাঁড়াক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় দুর্নীতিগ্রস্তদের মঞ্চ হয়েছে। সবাই এসে সেখানে মোদী-মোদী করছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত, অভিযুক্ত যাঁরা, তাঁরাই মোদীকে ভয় পান।’’
মমতার ধর্নাকে সমর্থন করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস প্রতারিতদের স্বার্থের কথা বলে তৃণমূল, বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই রাস্তায় নেমেছে। কংগ্রেসের ঘরের বিভাজনকেও এ দিন উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা বলছেন, রাজ্যে অরাজকতা চলছে। কিন্তু দিল্লিতে বসে মিস্টার বঢরার আত্মীয় দিদির সুরে গান গাইছেন!’’
মমতা তাঁর এ বারের ধর্নাকে ‘সত্যাগ্রহ’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, তিনি রাজনীতি করতে পথে বসেননি। তাঁর আন্দোলন ছিল সংবিধানকে ‘রক্ষা’ করার স্বার্থে, যা মোদী সরকার ‘ধ্বংস’ করছে।
আরও পড়ুন: ‘দুর্নীতির গুরু বাণী দিচ্ছেন!’
মোদী এ দিন ‘সত্যাগ্রহ’ প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গাঁধীজি সত্যাগ্রহ করেছিলেন। নেতাজি বিদেশের মাটি থেকে লড়াই চালিয়েছিলেন ব্রিটিশকে উৎখাত করে স্বাধীনতা আনতে। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রতারণায় অভিযুক্তদের আড়াল করতে ধর্না দিচ্ছেন!’’
আরও পড়ুন: আজ ‘ঠান্ডা’ শিলংয়ে প্রশ্ন রাজীবকে
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া এক নেতার নাম সারদা-কাণ্ডে জড়িত। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই। সেই নেতাকে এ দিন মোদীর মঞ্চে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। মোদী তাঁর সঙ্গে করমর্দনও করেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে মোদীর মঞ্চেই এমন এক জন অভিযুক্ত, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর হুঙ্কার এবং মমতা ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা কতটা সঙ্গত? এমনকী, অসমেও সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত যে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতাকে তৎকালীন কংগ্রেস মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে তিনি বিজেপি সরকারের এক জন প্রভাবশালী মন্ত্রী।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি যাওয়া নেতার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আমাকে সিবিআই আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। আমি তদন্তে সব রকমের সহযোগিতা করেছি। তখন তৃণমূলে ছিলাম। বিজেপি তখন কিন্তু সিবিআই-কে বলেনি, যে আমাকে গ্রেফতার করতে হবে।’’ সিবিআইয়ের তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার কথা বলেছেন অসমের ওই মন্ত্রীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy