Advertisement
E-Paper

ইডির তরফ থেকে বিপদ পুরো কাটেনি পার্থের? সব মামলায় জামিন পেয়েও কেন নভেম্বরের আগে মুক্তি নেই প্রাক্তন মন্ত্রীর!

শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ শেষ মামলাটিতেও তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু পার্থ এখনই জেল থেকে বেরোতে পারছেন না। তাঁর বাড়ি ফেরার পথে এখনও কিছু ‘কাঁটা’ রয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৫৭
নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের যে ক’টি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সব ক’টি থেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ শেষ মামলাটিতেও তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু পার্থ এখনই জেল থেকে বেরোতে পারছেন না। তাঁর বাড়ি ফেরার পথে এখনও কিছু ‘কাঁটা’ রয়েছে। নিয়োগের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিম্ন আদালতে চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ। ফলে পুজোর আগে পার্থের বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, ইডির নজরেও রয়েছেন পার্থ।

মামলার শুরু কোথায়

নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের করা একটি মামলায় জামিন চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পার্থ। শান্তিপ্রসাদ সিংহ, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন কর্তারাও জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। হাই কোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। দুই বিচারপতি পার্থের জামিনের সিদ্ধান্তে একমত হতে পারেননি। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় পার্থের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ রায়। এর পর মামলাটি যায় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর তৃতীয় বেঞ্চে। তিনিও আবেদন খারিজ করে দিলে পার্থ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কী

শীর্ষ আদালতে মাস তিনেক পার্থের জামিন মামলা বিচারাধীন ছিল। গত ১৮ অগস্ট আদালত পার্থের আবেদন মঞ্জুর করে। কিন্তু সেই সঙ্গে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট অনুমতি দিলেও পার্থের জামিনের বন্ড নিম্ন আদালত সঙ্গে সঙ্গে ছাড়তে পারবে না। চার সপ্তাহের মধ্যে চার্জগঠন করতে হবে। তার পরের দু’মাসে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বয়ান নিতে হবে। তার পরে পার্থকে জামিন দেওয়া যাবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই চার্জগঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সিবিআই। আলিপুর আদালতে এখন চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া।

নভেম্বরের আগে নয়

সুপ্রিম কোর্টের ১৮ অগস্টের নির্দেশ মানলে আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। সর্বোচ্চ ওই সময় পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখা যাবে। যদি তার আগে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বয়ান নেওয়া সম্পন্ন হয়ে যায়, তবে তার আগেই পার্থকে মুক্তি দিয়ে দিতে হবে। নিম্ন আদালতে পার্থের মামলায় আট জন সাক্ষীর তালিকা জমা দিয়েছে সিবিআই। তাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

ইডির তরফে বিপদ কী

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছাড়াও ইডির তরফে পার্থের একটি ‘কাঁটা’ রয়ে গিয়েছে। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে ইডি। এর আগে এই মামলায় পার্থকে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু ইডি এখনও তাঁকে এসএসসি মামলায় গ্রেফতার করেনি। এই মামলায় তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে ইডি। গ্রেফতার করা হয়েছে ‘মিড্‌লম্যান’ প্রসন্ন রায়কে। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে খবর, এসএসসি মামলাতেও ইডির আতশকাচের নীচে রয়েছেন পার্থ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি ১৮ নভেম্বরের আগে তারা পদক্ষেপ করে, তবে পার্থের বিপদ বাড়তে পারে।

কোন কোন শর্তে জামিন

শুক্রবার ১০ লক্ষ টাকার বন্ডে পার্থের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। বলা হয়েছে, এই সমস্ত শর্তের কোনওটি লঙ্ঘন করলে পার্থের জামিন বাতিল করতে পারবে নিম্ন আদালত। শর্তগুলি হল—

  • পার্থকে নিম্ন আদালতে নিজের পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে।
  • আদালতের অনুমতি ছাড়া নিম্ন আদালতের এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না।
  • প্রতিটি শুনানির দিন আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
  • সাক্ষীকে ভয় দেখানো বা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা যাবে না।
  • সপ্তাহে এক বার তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে হবে।
  • কোনও সরকারি পদে নিযুক্ত হতে পারবেন না। তবে বিধায়ক হিসাবে কাজ করতে পারবেন।
  • কোনও অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হওয়া যাবে না। এ ছাড়া, সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন না।
  • নিম্ন আদালত এবং তদন্তকারী সংস্থাকে মোবাইল নম্বর দিতে হবে। তাদের অনুমতি ছাড়া নম্বর পরিবর্তন করা যাবে না।

হাই কোর্ট কী বলল

পার্থকে জামিন দিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। অযোগ্য প্রার্থীরা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন, যোগ্যেরা বঞ্চিত হয়েছেন। তথ্যপ্রমাণ, সাক্ষীদের বয়ান এবং কল রেকর্ডের ভিত্তিতে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, পার্থ এবং মানিক ভট্টাচার্যের নির্দেশে এই দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু পার্থ এখন আর শিক্ষামন্ত্রী নন। তাঁর পালানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। তদন্তের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সিবিআই এবং আদালতের কাছে রয়েছে। তাই তদন্তের জন্য আর তাঁকে জেলে রাখার প্রয়োজন নেই। এই ধরনের অভিযোগে তদন্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ দিন ধরে কাউকে জেলে আটকে রাখা যায় না। আইনের চোখে তা অন্যায়। মানিক-সহ অন্য অভিযুক্তেরাও জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তাই এ ক্ষেত্রেও জামিন দেওয়া উচিত বলে আদালত মনে করছে।

SSC Recruitment Case Partha Chatterjee ED Calcutta High Court Bengal Recruitment Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy