Advertisement
E-Paper

‘নিজের লোক’ খুঁজতেই কি বারবার বদলি

রদবদলের তালিকায় অস্থিরতা সব চেয়ে বেশি হচ্ছে পুলিশকে নিয়ে। এ-পর্যন্ত জনা পঞ্চাশ অফিসারকে বদলি করেছেন মমতা। কিন্তু সেই তালিকা পাল্টাতে হয়েছে বারবার। এর চরমতম উদাহরণ বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের পদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:৩৫
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

লন্ডনের আবহাওয়ার থেকেও দ্রুত বদলাচ্ছে রাজ্য পুলিশের বদলি তালিকা। নির্বাচনী বিধি উঠে যাওয়ার পরেই পুলিশ প্রশাসনকে আবার ঢেলে সাজা শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতেই সিদ্ধান্তগ্রহণে এক ধরনের অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। প্রশাসনের অন্দরে অনেকের ধারণা, কাদের উপরে ‘ভরসা’ রাখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী হয়তো সেই সংশয়ে ভুগছেন।

রদবদলের তালিকায় অস্থিরতা সব চেয়ে বেশি হচ্ছে পুলিশকে নিয়ে। এ-পর্যন্ত জনা পঞ্চাশ অফিসারকে বদলি করেছেন মমতা। কিন্তু সেই তালিকা পাল্টাতে হয়েছে বারবার। এর চরমতম উদাহরণ বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের পদ। ওই পদে চার দিনে চার জনকে বসানো হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি উঠে যাওয়ার পরে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার করা হয়েছিল জ্ঞানবন্ত সিংহকে। কিন্তু প্রশাসনের অন্দরের খবর, বিভিন্ন কারণে সিদ্ধিনাথ গুপ্তের উপর ‘অসন্তুষ্ট’ হওয়ায় এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই পদে আনা হয় জ্ঞানবন্তকে। যাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম আস্থাভাজন হিসেবেই দেখা হয় প্রশাসনের অন্দরে।

তার পরে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার পদে পরপর তিন দিন তিন জনকে বসানো হয়েছে। কারণ, কারও নামে আদেশনামা বেরোলেই শাসক দলের কেউ না কেউ তাঁর নামে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন।

প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের ধারণা, বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে রয়েছে কলকাতা বিমানবন্দর এবং পূর্ব কলকাতার একাধিক হোটেল। নির্বাচনী প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, ওই সব হোটেল থেকে টাকার লেনদেন হয়েছে। ভোটের সময় বিধাননগরের কমিশনার এন রমেশবাবুকে সতর্কও করা হয়েছিল এই ব্যাপারে। ফলে এই কমিশনারেটের শীর্ষ পদে অফিসার বাছাই অনেক ভেবেচিন্তে করা হয়েছে বলে অনেক আধিকারিকের ধারণা।

দু’বার বদল হয়েছে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার পদেও। প্রশাসনের অন্দরের খবর, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল চৌধুরীর ভূমিকায় অখুশি থাকায় ভোটের পরে তাঁকে বদলি করে সরকার। সেই জায়গায় আনা হয় দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার এক মন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে কথা না-শোনার অভিযোগ আনায় তাঁকেও বদলে দেওয়া হয়। এখন ব্যারাকপুরের সিপি হয়েছেন তন্ময় রায়চৌধুরী।

একই ভাবে সন্ধ্যার নির্দেশে যাঁকে যেখানে বসানো হল, সকালে তা বদলে গেল। আবার অনেককে বদলি করেও ফেরানো হল পুরনো পদে।

কিঞ্চিৎ কম হলেও আইএএস অফিসারদের বদলি নিয়েও জলঘোলা কম হয়নি। এক প্রার্থীর অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী সরিয়ে দিয়েছেন দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ের জেলাশাসককে। যাঁদের নতুন দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে, তাঁরাও সেখানে যেতে রাজি নন। কলকাতার কাছের এক জেলার জেলাশাসককে দূরে পাঠিয়ে দেওয়ায় তিনি আপাতত ছুটিতে। আবার মধ্যবঙ্গের এক জেলাশাসককে কলকাতার কাছাকাছি আনায় তিনিও খুশি নন। ফলে জেলাশাসকদের তালিকাতেও ফের রদবদল উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিব সঞ্জয় থাড়েকে অবসরের পরেও ২০২২ সালের মে পর্যন্ত অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি হিসেবে ওই দফতরেই রেখে দেওয়া হবে। আজ, শুক্রবার তাঁর অবসর।

এ দিন সাত জন আইপিএস অফিসারের নিয়োগের ক্ষেত্রেও ফের রদবদল হয়েছে। সারদা মামলায় সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া অর্ণব ঘোষকে দু’দিন আগেই সিআইডি-র স্পেশ্যাল সুপার করা হয়েছিল। সেই নির্দেশিকা বাতিল করে এ দিন তাঁকে ফের ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট করা হয়েছে।

এই দোলাচলের কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা কোনও মহল থেকেই মেলেনি। তবে যে-সব গুঞ্জন ঘুরছে, তার মধ্যে সব চেয়ে জোরালো হল, তৃণমূলের দুই নেতার টানাপড়েন। ইদানীং দলে ও সরকারে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা এক মন্ত্রী তাঁর পছন্দের তালিকার উপরে জোর দিচ্ছেন বলে খবর। কিন্তু সেই তালিকা অনেক ক্ষেত্রেই দলের এক যুব নেতার পছন্দের সঙ্গে মিলছে না। তাঁর দিক থেকে অন্য রকম চাপ আসছে। ফলে চাপ ও পাল্টা চাপের টানাপড়েনে বারবার সিদ্ধান্ত বদল হচ্ছে নবান্নের চোদ্দো তলায়।

Police Administration IPS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy