Advertisement
E-Paper

এত ঔদ্ধত্য কেন, ধমকালেন মমতা

সংসদে খুব একটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় না তাঁকে। আপাত দর্শনেও নিরীহ। কিন্তু আরামবাগের সেই তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার সামান্য যানজটে আটকে পড়ায় মোটরবাইকে সওয়ার এক দম্পতির উপর যে প্রবল হম্বিতম্বি করেছেন, দিদি না বললে কে জানত?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৬
কালীঘাটের বৈঠকে। (বাঁ দিক থেকে) অরূপ বিশ্বাস, অমিত মিত্র, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সী। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

কালীঘাটের বৈঠকে। (বাঁ দিক থেকে) অরূপ বিশ্বাস, অমিত মিত্র, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সী। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

সংসদে খুব একটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় না তাঁকে। আপাত দর্শনেও নিরীহ। কিন্তু আরামবাগের সেই তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার সামান্য যানজটে আটকে পড়ায় মোটরবাইকে সওয়ার এক দম্পতির উপর যে প্রবল হম্বিতম্বি করেছেন, দিদি না বললে কে জানত?

বাঁকুড়ায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ সেই হাসপাতাল গড়ে তুলতে কাকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করা হবে, তাতে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী নাকি নাক গলাচ্ছেন! তা-ও হাটখোলা করে দিলেন দিদিই!

এবং শুক্রবার হাটের মাঝে ধমকও খেলেন উভয়েই।

এ দিন তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সূত্রের খবর, এই দুই ঘটনার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেই মমতা সেখানে জানান, দলের নেতাদের ঔদ্ধত্য তিনি বরদাস্ত করবেন না। তৃণমূলের কোনও জনপ্রতিনিধি মানুষের সঙ্গে উদ্ধত ব্যবহার করেছেন বলে খবর পেলে পরের ভোটে টিকিট পর্যন্ত কেটে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন দিদি। আর সেই সঙ্গে জানান, আগামী দিনে যদি সরকারি কাজে নাক গলানোর খবর পান, তা হলে কেউ বাঁচাতে পারবে না!

তৃণমূলের এক নেতার কথায়, গোড়া থেকেই এ দিন বকাঝকার মুডেই ছিলেন দিদি। বৈঠক শুরুই করেন অপরূপার প্রসঙ্গ তুলে। আরামবাগের সাংসদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাকে কোথা থেকে কোথায় তুলে এনেছি, ভুলে গেছ! তোমার গাড়ি আটকে গেছে বলে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করবে?’ হতভম্ব অপরূপাকে সামনে রেখে দিদি বলেন, ‘‘শোনো মানুষের সমস্যা মেটানোই জনপ্রতিনিধিদের কাজ, ঔদ্ধত্য দেখানো নয়!’’ তার পরে মমতা তুলে আনেন বাঁকুড়ায় নির্মীয়মাণ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের প্রসঙ্গ। তার পর জেলা

সভাপতি অরূপবাবুকে উঠে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনিই নাকি ঠিক করে দিচ্ছেন, ওখানে ঠিকাদার কে হবে? আমি মাথা খাটিয়ে জেলায় জেলায় প্রকল্প ঠিক করব, আর সেখানে আপনারা ঠিকাদার ঢুকিয়ে ‘দাদাগিরি’ করবেন, এ সব চলবে না।

সূত্রের মতে, অরূপের দৃষ্টান্ত তুলে মমতা এ দিন পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সরকারি কাজে কোনও রকম মাথা গলানোর অভিযোগ যেন আর না আসে। কোনও কাজে স্থানীয় নেতার লোককে দিয়েই কাজ করাতে হবে, তাদের থেকেই মালমশলা চুন-সুড়কি কিনতে হবে, এ ধরনের খবরদারি যেন দলের কেউ না করেন। তার পর সর্তক করে এ-ও বলেন, এখনই সমঝে যান। নইলে বিপদ আছে। বস্তুত, ‘বিপদের’ নমুনা বোঝাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইলের দুই ব্লক সভাপতিকে এ দিনই সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মাত্র ৪৫ মিনিট এই বৈঠকের পরই শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র ও লোকসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গাড়িতে তুলে নবান্নের পথে রওনা হন মমতা। কিন্তু তাঁর ধমক নিয়ে দলে গুঞ্জন চলতে থাকে সারা দিন। তৃণমূলে মমতা ঘনিষ্ঠ এক নেতা পরে বলেন, দিদি বুঝতে পারছেন, রাজ্যে রাজনৈতিক বিরোধী বলতে আর কেউ নেই। তৃণমূলের ক্ষতি করতে পারে তৃণমূলই। এক শ্রেণির নেতা ও জন প্রতিনিধির উদ্ধত আচরণে দলের ক্ষতি হচ্ছে। একই ভাবে সরকারি কাজে তৃণমূল নেতারা নাক গলানোয় কাজের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাই দলকে পই পই করে সতর্ক করছেন তিনি। সতর্কীকরণের প্রক্রিয়া আগামী দিনেও চলবে।

arrogance TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy