Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Jhalda Municipality

বার বার ধাক্কা খেয়েও কেন ঝালদা পুরসভার দখল রাখতে চায় তৃণমূল, উঠছে প্রশ্ন

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য এই লড়াইয়ের বীজ পুরসভার ইতিহাসেই লুকিয়ে বলে মনে করছেন। একটা সময় পালা করে ঝালদা পুরসভা বাম কিংবা কংগ্রেসের দখলে থাকত।

ঝালদা পুরসভা।

ঝালদা পুরসভা। ফাইল চিত্র।

প্রশান্ত পাল  , দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
ঝালদা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৮
Share: Save:

পুরবোর্ড গঠন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ঝালদার কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি তপন কান্দু। তার ১০ মাস পরে হাই কোর্টের নির্দেশে তপনের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু শনিবার ঝালদার পুরপ্রধানের দায়িত্ব নিলেন। এতে বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল, মনে করছেন অনেকেই।

তবে রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভা দখলে রাখার পরেও জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ার ১২টি ওয়ার্ডের ছোট পুরসভা ঝালদার দখল রাখতে তৃণমূল কেন এতটা মরিয়া, কেনই বা রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন নির্দেশে হাই কোর্টকে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, এর পিছনে কি রয়েছে অহংয়ের লড়াই? না বিরোধীদের হাতে পুরসভা গেলে দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার ভয়?

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কোনওটাই মানতে নারাজ। পুরুলিয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলছেন, ‘‘কারও অহং রক্ষা করার চেষ্টা তৃণমূল করছে না। তবে বোর্ড গঠনের সময় আমরা ঝালদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলাম। ফলে, বোর্ড কেন হাতছাড়া হল, তা দল অবশ্যই দেখছে।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য এই লড়াইয়ের বীজ পুরসভার ইতিহাসেই লুকিয়ে বলে মনে করছেন। একটা সময় পালা করে ঝালদা পুরসভা বাম কিংবা কংগ্রেসের দখলে থাকত। অতীতে নির্দল পুরপ্রতিনিধি থাকাকালীন সুরেশ আগরওয়াল অন্য দলের পুরপ্রতিনিধি ভাঙিয়ে পুরসভায় অনাস্থা এনে যখন নিজে পুরপ্রধান হয়েছিলেন, তখন বিভিন্ন দলের সদস্য মিলে বোর্ড গড়েছিলেন। ২০০৮ সালে ১০ মাসের জন্য পুরপ্রধান হন সুরেশ। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৫ সালের পুরভোটে কিন্তু তৃণমূল এখানে কোনও আসন পায়নি। তবে ২০১৬ সালে কংগ্রেস, বাম ও নির্দল পুরপ্রতিনিধিরা তৃণমূলে যোগ দেন। তখনও সুরেশই পুরপ্রধান হন। বোর্ড হারায় কংগ্রেস। এ বার নির্দল পুরপ্রতিনিধিদের টেনে এনে তৃণমূলের পুরপ্রধান সুরেশকে অপসারিত করে কংগ্রেস যেন ‘মধুর প্রতিশোধ’ নিল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সুরেশ এই পরাজয় মানতে পারেননি। তাই কখনও তিনি নির্দল শীলা চট্টোপাধ্যায়ের পুরপ্রতিনিধি পদ বাতিলের জন্য প্রশাসনে আবেদন করেছেন, তো কখনও হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা করেছেন। কখনও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ তাঁকে ‘সাহায্য’ করেছে।

পুরুলিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো ও নতুন পুরপ্রধান পূর্ণিমা কান্দু বলছেন, ‘‘শাসকদল কেন মরিয়া, স্পষ্ট নয়। হতে পারে অহংয়ের লড়াই। কিংবা এই পুরসভায় হয়তো এমন কিছু দুর্নীতি হয়েছে, আমরা এলে যা প্রকাশ্যে আসার ভয় রয়েছে ওদের।’’ যদিও সুরেশের দাবি, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ ঠিক নয়। যা ঘটছে, তাতে ঘোড়া কেনাবেচা হয়েছে স্পষ্ট।’’

তবে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এতে আখেরে তৃণমূলের ক্ষতির আঁচ করছেন নেতা-কর্মীদের একাংশ। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কর্মকারও মানছেন, ‘‘পুরসভা নিয়ে যা ঘটছে তা ঝালদার মানুষ একেবারেই ভাল চোখে দেখছেন না।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেনের অবশ্য যুক্তি, ‘‘সব দলই যে কোনও বোর্ড ধরে রাখতে কিছু কৌশল কাজে লাগায়। সেটাই রাজনীতির দস্তুর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhalda Municipality TMC Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE