Advertisement
E-Paper

‘বালিশের তলায় রক্ত দেখে সন্দেহ হয়, তখনও বুঝিনি এ সব আমার স্বামী করেছে!’

জানতেন না, শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর তাকে খুন করে তাঁর স্বামী তত ক্ষণে পুঁতে দিয়ে এসেছে নদীর চরে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:২২
‘ধর্ষক’ স্বামীকে ধরতে পুলিশকে সাহায্য করেছেন কুমারগ্রামের রিঙ্কি দাস—নিজস্ব চিত্র

‘ধর্ষক’ স্বামীকে ধরতে পুলিশকে সাহায্য করেছেন কুমারগ্রামের রিঙ্কি দাস—নিজস্ব চিত্র

বাপেরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন রিঙ্কি দাস। রাস্তায় দেখা হওয়া প্রতিবেশীরা তাঁকে জানান, পাড়ার এক নাবালিকা নিখোঁজ। রিঙ্কি তাকে দেখেছেন কি না, তা-ও জিজ্ঞেস করেন ওই প্রতিবেশীরা। তখনও তিনি জানতেন না, আট বছরের ওই নাবালিকা নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর স্বামীর ভূমিকার কথা। জানতেন না, শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর তাকে খুন করে তাঁর স্বামী তত ক্ষণে পুঁতে দিয়ে এসেছে নদীর চরে!

রিঙ্কি এসে দেখেন, তাঁর স্বামী বাড়িতেই রয়েছে। উঠোনে এক জোড়া জুতো পড়ে থাকতে দেখে, তিনি সেই জুতো পাশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখান। জানতে চান, সেটা নিখোঁজ হওয়া নাবালিকার কি না? নিখোঁজ নাবালিকার পরিবার জানায়, জুতো জোড়া তারই। শেষমেশ এই জুতোই ধরিয়ে দেয় রিঙ্কির স্বামী শম্ভুকে। বুধবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

শম্ভুর বিরুদ্ধে পকসো (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেসেন্স) আইনে মামলা করা হয়। অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার আদালতে হাজির করানো হয়। কিন্তু সেখানে পকসো মামলার জন্য কোনও ব্যবস্থা না থাকায়, বিচারক দু’দিন পুলিশি হেফাজতের কথা বলে অভিযুক্তকে শনিবার জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে হাজির করানোর নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের বারবিশা লালস্কুল এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকারই একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত ওই শিশুটি। মঙ্গলবার বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যায়। তার পর থেকেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৯টায় পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করেন শিশুটির বাবা। নির্যাতিতা ও নিহত শিশুটির বাবা পেশায় দিনমজুর। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে খেয়ে খেলতে বার হল। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরও সে বাড়ি না ফেরায় খুঁজতে বার হই। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি। রাতে শম্ভুর স্ত্রী এক জোড়া চটি নিয়ে এসে জানায়, তাদের ঘরে ওই চটি জোড়া পড়েছিল। সেটাই পুলিশকে জানাই।’’

আরও পড়ুন: মেচেদা লোকালের সেই দেহ বউবাজারের ব্যবসায়ীর, টাকার জন্যই খুন বলে সন্দেহ

রিঙ্কি জানিয়েছেন, তিনি ওই দিন সন্ধ্যায় বাপের বাড়ি থেকে ফিরেছেন। এসে জানতে পারেন ওই নাবালিকা নিখোঁজ। বাড়িতে এসে দেখেন উঠোনে একজোড়া জুতো পড়ে। তাঁর নিজের দুটো ছেলে রয়েছে। নিখোঁজ শিশুটির সঙ্গে তারা খেলত। বাচ্চাদের জুতো দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ওই নাবালিকার বাড়িতে যান। জানতে চান, জুতো ওই বাচ্চাটিরই কি না? জানা যায়, ওই জুতো নিখোঁজ বাচ্চাটির। পুলিশকেও সে কথা জানান তার বাবা। রিঙ্কি বলেন, ‘‘তখনও জানতাম না কী ঘটে গিয়েছে। ওদের বাড়ি থেকে ঘরে আসি। রাতে ছেলেকে বিছানায় শোওয়াতে গিয়ে দেখি, বালিশের তলায় চাপ চাপ রক্ত। ছেলের নাক দিয়েও রক্ত পড়ে। ভেবেছিলাম সেটাই। ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করি। ও ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, নাক দিয়ে রক্ত পড়েছে কি না? কিন্তু ছেলে বলে, তার নাক থেকে রক্ত পড়েনি। আমার কেমন যেন একটা সন্দেহ হয়। কিন্তু, ও এমনটা যে করেছে, সেটা বুঝতে পারিনি।’’ এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসে রিঙ্কিদের বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে এসে ওকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করে পুলিশ। তার পর ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।’’

আরও পড়ুন: স্টার হোটেলে পানশালা রাতভর খোলা, আবগারি দফতরে যুব লিগ

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে তারা শম্ভুর কাছে চটি জোড়ার ব্যাপারে জানতে চায়। কিন্তু প্রথমে তার কাছ থেকে অসংলগ্ন উত্তর পাওয়ায় সন্দেহ হয়। এর পরেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারবিশা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। টানা জেরায় সে এর পর সব স্বীকার করে নেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর পর রাত আড়াইটা নাগাদ অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ নদীর চরে যায়। সেখানেই শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অভিযুক্ত পেশায় দিনমজুর। পুলিশ জানিয়েছে, রায়ডাক নদীতে বালি-পাথর তোলার কাজ করে সে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, শিশুটিকে নিজের ফাঁকা বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত। এর পর প্রমাণ লোপাটের জন্য শিশুটির শ্বাসরোধ করে খুন করে এবং দেহটি রায়ডাক নদীর চরে বালিতে পুঁতে দেয়। ভোররাতে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।

খবর ছড়িয়ে পড়তেই অভিযুক্ত যুবকের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

Murder Crime Rape Kumargram Alipurduar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy