Advertisement
E-Paper

ঠান্ডা মাথায়, ছক কষেই খুন স্বামীকে

গত রবিবার ওই দেহ উদ্ধার হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৯
ধৃত: কুমকুম মালি ও সুমন কুমার। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত: কুমকুম মালি ও সুমন কুমার। —নিজস্ব চিত্র।

দিল্লি থেকে বন্ধুকে ডেকে এনে রীতিমতো ছক কষেই স্বামী আশুতোষ মালিকে খুন করেছিল স্ত্রী কুমকুম। এমনকি, আগুনে পুড়িয়ে স্বামীর দেহকে শনাক্তের অযোগ্য করে ফেলতে সঙ্গীর হাতে কেরোসিনও তুলে দিয়েছিল ওই তরুণীই। বেলুড়ের নিস্কো হাউজিংয়ের আবর্জনার স্তূপ থেকে আশুতোষের দগ্ধ দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের সামনে। গত রবিবার ওই দেহ উদ্ধার হয়েছিল।

আশুতোষকে খুনের অভিযোগে সোমবার রাতেই কুমকুম মালি ও তার বন্ধু সুমন কুমারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, শনিবার দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছয় সুমন ও তার এক বন্ধু। কুমকুমের কথা মতো ওই সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে তারা বালি স্টেশনে আসে। এর পরে কুমকুমের বাড়িতে পৌঁছে যায়। তবে রাত ১০টা নাগাদ আশুতোষের ফেরার সময় হতেই এলাকায় চলা একটি জলসার ভিড়ে গা-ঢাকা দেয় ওই দু’জন।

আশুতোষ বাড়িতে ফিরতেই তাঁকে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দেয় কুমকুম। আশুতোষ জ্ঞান হারান। বেশ কিছু ক্ষণ পরেও জ্ঞান না ফেরায় রাত ১২টা নাগাদ ফের সুমনদের বাড়িতে ডাকে ওই তরুণী। তিন জনেরই ধারণা হয়, আশুতোষ বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছেন। ঘরে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের তার দিয়ে আশুতোষের হাত-পা বেঁধে ফেলে সুমনেরা। এর পরে রাত তিনটে নাগাদ একটি বস্তায় আশুতোষের দেহটি ঢুকিয়ে ফেলা হয়। দেহ লোপাটের জন্য সাইকেল জোগাড় করে রেখেছিল কুমকুম। তাতে বস্তাটি চাপিয়ে বাড়ির প্রায় ৩০০ মিটার দূরে আবর্জনার স্তূপের কাছে পৌঁছয় সুমনেরা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশ জেরায় জেনেছে, বস্তাটি আবর্জনায় ফেলে তার উপরে কেরোসিন ছড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সুমন। বেশি করে কেরোসিন ছেটানো হয়েছিল আশুতোষের মুখে। এর পরে রাস্তায় সাইকেলটি ফেলে বেলুড় স্টেশনে গিয়ে হাওড়ায় পালিয়ে যায় সুমন। রবিবার সকালে তার বন্ধু দিল্লি চলে গেলেও সুমন চলে আসে কুমকুমের বাড়িতে।

কুমকুম ও সুমনের দাবি, তারা কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আশুতোষকে আঘাত করেনি। সে ক্ষেত্রে মৃতের বুকে ক্ষতের উৎস কী, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। পুলি‌শ জানায়, রবিবার সকালে বড়বাজারের দোকান-মালিককে ফোন করে স্বামীর খোঁজ করে কুমকুম। বিকেলে সেখানে গিয়েও খোঁজ করে, যাতে কেউ তাকে সন্দেহ না করেন।

পুলিশ জানায়, বছরখানেক আগে ভুল নম্বর ডায়াল করে সুমনের সঙ্গে পরিচয় কুমকুমের। কয়েক বার বিহারে গিয়ে দু’জন দেখাও করেছে। আশুতোষ ও কুমকুম, দু’জনেরই পৈতৃক বাড়ি সেখানে। ২১ বছরের ওই যুবককে দিদির ছেলে বলে পরিচয় দিয়েছিল ২৭ বছরের কুমকুম। মাস দশেক আগে বিহারে দুই ছেলেমেয়েকে রেখে পাঁচ বছরের আর এক ছেলেকে নিয়ে আশুতোষের সঙ্গে কলকাতায় আসে কুমকুম। বড়বাজারে দোকানে কাজ করতেন আশুতোষ। কয়েক মাস আগে বেলুড়ে ঘর ভাড়া নেন।

কুমকুমের একাধিক বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই অশান্তি হত দু’জনের। মঙ্গলবার নিশ্চিন্দা থানায় ওই যুবকের বাবা কেদার মালি বলেন, ‘‘ওদের অশান্তি দেখে দু’জনকেই দেশের বাড়িতে চলে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ওরা গেল না। ছেলেটাও শেষ হয়ে গেল।’’

সোমবার মর্গে পোড়া দেহটি শনাক্ত করতে না পারলেও সেটি আশুতোষের বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন কেদারবাবু। কুমকুমের আচরণে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। সে দাবি করে, দেহটি চিনতে পারছে না। এর পরে কুমকুমকে জেরা শুরু করেন তদন্তকারীরা। এর মধ্যেই কুমকুমের মোবাইলে বারবার ফোন করতে থাকে সুমন। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ হাওড়া স্টেশনের বাইরে গ্রেফতার করে সুমনকে। তার ওই রাতেই দিল্লির ট্রেন ধরার কথা ছিল।

মঙ্গলবার হাওড়া আদালতে তোলা হলে কুমকুম এবং সুমনকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

Crime Belur বেলুড়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy