Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
CPIM

CPIM: কমিটি নয়, পার্টিই সব, অবসরে বার্তা বিমানের

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ঠিকানায় তাঁর দলীয় সংসারে প্রতি দিনের মতোই ফের মিশে গেলেন ৮১ বছরের ‘অবসরপ্রাপ্ত’ নেতা।

নতুন রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে মহম্মদ সেলিমকে নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু,  সূর্যকান্ত মিশ্র।

নতুন রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে মহম্মদ সেলিমকে নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র। নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২ ০৭:২২
Share: Save:

সম্মেলন শেষে ততক্ষণে ফেরার পথ ধরে নিয়েছেন প্রতিনিধিরা। কাকাবাবুর নামাঙ্কিত বাড়িটার চার তলায় নতুন রাজ্য সম্পাদককে ঘিরে ছোট ছোট জটলা। দো’তলায় তৎপরতা দলের ছাত্র নেতাদের। যাঁরা এখন নতুন রাজ্য কমিটিতে এক ঝাঁক তরুণ মুখ হয়ে ঢুকেছেন। তাঁদেরই এক জন এগিয়ে গিয়ে অশীতিপর নেতার কাছে জানতে চাইলেন, ‘‘আপনার ঘরটায় একটু বসব? একটা ছোট অনুষ্ঠান আছে, নীলুদা (নীলোৎপল বসু) থাকবেন।’’ প্রশ্ন প্রায় শেষ হওয়ার আগেই জবাব এসে গেল— ‘‘বসো, বসো। আমার ঘর বলে কিছু নেই। সব পার্টির ঘর!’’

উত্তরদাতার নাম বিমান বসু। সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে টানা ৫১ বছরের ইনিংসের সমাপ্তির পরে তাঁর মুখে শুধু পার্টি আর পার্টি! দলের বয়স-নীতি মেনে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। দলের ২৬তম রাজ্য সম্মেলন বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্তি ঘোষণার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরে। সেখানেও নিজেকে নিয়ে একটা কথা বলেননি। বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে তাঁর অঙ্গাঙ্গী যোগের কথা ভেবে ‘ব্যতিক্রম’ ঘটাতে চেয়েছিলেন দলের নেতারা। রাজি হননি বিমানবাবুই। রাজ্য কমিটি থেকে অবসর গ্রহণের অল্প কিছু ক্ষণ পরে আলাপচারিতায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘কমিটি বা পদে না থাকলে জীবন বৃথা, এটা একটা মানসিকতা! এই মানসিকতা কাটাতে চেয়েছি বরাবর। আমি কমিটিতে থাকব না কিন্তু পার্টিতে তো আছি। পার্টির কর্মী হিসেবে সব কাজই করব।’’

সিপিএমের পলিটবুরোর এখনও বর্ষীয়ান সদস্য বিমানবাবু। কিন্তু সেটারও মেয়াদ আর সপ্তাহতিনেক! নিজেই বলছেন, ‘‘পার্টি কংগ্রেসেও আমি কোনও কমিটিতে থাকব না। ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। দল বেঁচে থাকে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মীদের উপরে। তাদের বেশির ভাগই কমিটিতে থাকে না। আমিও সে ভাবেও আজীবন পার্টির কর্মী হিসেবে কাজ করে যাব।’’ সহাস্যে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘এই রাজ্য সম্মেলনে দেখলাম, কোনও কমিটির সদস্য হিসেবে আমিই প্রবীণতম প্রতিনিধি! বুড়ো হয়ে গিয়েছি!’’

সেই ১৯৫০-এর দশকে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির আমলে সদস্যপদ নিতে গিয়ে বালিগঞ্জ এলাকায় প্রতিবাদ জানিয়ে ফিরে এসেছিলেন কিশোর বিমান। বলেছিলেন, ‘অ্যারিস্টোক্র্যাট স্টুপিডদের সঙ্গে পার্টি করব না’! অধুনা প্রয়াত নেতা জলি কলের হস্তক্ষেপে তাঁকে পরে পাঠানো হয়েছিল পার্ক সার্কাস এলাকায় দলের কাজ করতে। সেই থেকে শুরু হওয়া পথ নানা মোড় ঘুরে অবশেষে এসে পৌঁছল অবসরের প্রান্তে। দলে সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতারা সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটদের সামনে প্রস্তাব দিয়েছেন, সিপিএম যে ভাবে প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসুর পার্টি বলে পরিচিত, সেই ভাবে পরবর্তী কালে জনমানসে এটা বিমান বসুরও পার্টি। সেই লোকটাকে অন্তত যে ভাবে হোক ব্যতিক্রমী হিসেবেই রেখে দেওয়া হোক। বিমানবাবু বলে দিয়েছেন, তিনি ব্যতিক্রমী পথে গেলে বাকিদের কী পথ দেখাবেন! টানা বেশ কিছু বছর ধরে সাধারণ সভা থেকে শুরু করে দলের কোনও মঞ্চে সুয়োগ পেলেই বিমানবাবু বলে এসেছেন, কমিটির মোহ কাটাতে হবে। সেই তিনিই এখন ব্যতিক্রমের প্রস্তাব মানেন কী করে?

সম্মেলন শেষ হওয়া ইস্তক লাগাতার অনুরোধ আসছে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্বটা অন্তত ছাড়বেন না। বামফ্রন্ট টিকে আছে চেয়ারম্যানকে ঘিরেই। বিমানবাবু হেসে বলছেন, ‘‘দেখা যাক!’’ আসানসোল আর বালিগঞ্জ উপনির্বাচন সিপিএমেরই লড়ার কথা। ওই দুই আসনের প্রার্থী ঘোষণার আগে সম্মেলনের ফাঁকেও বাম শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিয়েছেন। ‘‘দায়িত্ব যা পেয়েছি, সাধ্যমতো পালন করেছি। পার্টিটা তো ছাড়ছি না!’’

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ঠিকানায় তাঁর দলীয় সংসারে প্রতি দিনের মতোই ফের মিশে গেলেন ৮১ বছরের ‘অবসরপ্রাপ্ত’ নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM Biman Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE