Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Nabanna

Nabanna: পরামর্শদাতা কি জেলা প্রশাসনেও?

সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারি দফতরে পেশাদার হিসেবে নিযুক্ত হতে চাইলে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:১০
Share: Save:

রাজ্যের ২৩টি দফতরে পেশাদার পরামর্শদাতা নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে নবান্ন। কিন্তু তাঁদের কয়েক জনকে কি জেলা স্তরের প্রশাসনেও নিয়োগ করা হতে পারে? এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই প্রশাসনের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে গিয়ে জানিয়েছেন, জেলাশাসকদের সহযোগিতা করতে পরামর্শদাতা পাঠাতে চায় নবান্ন।

সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারি দফতরে পেশাদার হিসেবে নিযুক্ত হতে চাইলে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে ৫০ জন পরামর্শদাতাকে নিয়োগ করা হবে। প্রথমে দু’বছরের চুক্তিতে নিয়োগ হলেও পরবর্তী কালে মেয়াদ বাড়তে পারে। সিনিয়র পরামর্শদাতা এবং পরামর্শদাতা, এই দু’টি গোত্রে নিয়োগ হবে। প্রথম গোত্রভুক্তেরা মাসে দু’লক্ষ ও দ্বিতীয় গোত্রভুক্তেরা মাসে দেড় লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পাবেন। মিলবে সরকারি গাড়িও।

জেলা স্তরে পরামর্শদাতা নিয়োগ নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। তবে প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান, নিয়োগ হওয়া ৫০ জনের মধ্যে ২০-২২টি জেলায় এক জন করে পরামর্শদাতা নিযুক্ত হতে পারেন।

তবে প্রশাসনিক মহলের অনেকের মতে, জেলাশাসককে পরামর্শ দেওয়ার কাজ সহজ নয়। কারণ, অভিজ্ঞ পেশাদার হলেও জেলার সামগ্রিক চরিত্র সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থেকে পদক্ষেপ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে পরামর্শদাতা কত দূর সফল হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

অনেকে এ-ও বলছেন, জেলাশাসক কিংবা অন্যান্য অফিসার দীর্ঘদিন বিভিন্ন জেলার নানা স্তরে কাজ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। ফলে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি হলেও দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে নিতে পারেন। বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে আসা পেশাদারেরা নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে দক্ষ হলেও জেলা স্তরে প্রকল্প বাস্তবায়নের সফল হবেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করে তাঁদের প্রশাসনিক দক্ষতা কাজে লাগানো যায় কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে।

বস্তুত, দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের শেষ লগ্ন থেকে রাজ্যে দুয়ারে সরকার এবং পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি চলছে। তৃতীয় তৃণমূল সরকারের সময় প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে। আগের প্রকল্পগুলিও সমানতালে চালু রয়েছে। বর্তমানে অতিমারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চাপও রয়েছে। তাই জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসকদের বিপুল চাপ সামলাতে হচ্ছে। প্রশাসনের একাংশের দাবি, পরামর্শদাতা নিযুক্ত হলে বিভিন্ন প্রকল্পে নজরদারির চাপ কমতে পারে। এ ছাড়া, জেলাস্তরেও মানুষ যা পরিষেবা পাচ্ছেন, তার গুণগত মান কতটা রয়েছে এবং তা আরও কতটা বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে মতামত পরামর্শদাতারা দিতে পারবেন।

তবে জেলাশাসকেরা জেলা স্তরের শীর্ষ আধিকারিক হিসেবে কাজ করেন। পরামর্শদাতা নিযুক্ত হলে কোথাও ব্যক্তিত্বের সংঘাত হবে কি না, সেই প্রশ্নও অবশ্য আধিকারিক মহলে ঘোরাফেরা করছে। তাঁদের বক্তব্য, কিছু ক্ষেত্রে জেলাশাসকদের থেকেও বেতন বেশি হবে পরামর্শদাতাদের। ফলে কোন পদের গুরুত্ব বেশি, তা নিয়ে ঠোকাঠুকি হতে পারে। তা ছাড়া, দু’জনের সিদ্ধান্তের অমিল হলে কার বক্তব্য অধীনস্থ অফিসারেরা শুনবেন, তা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। এর থেকে জেলা স্তরের শূন্য পদগুলি পূরণ করলে কাজের চাপও কমত, বিভ্রান্তিও হত না। যদিও প্রশাসনের পাল্টা যুক্তি, আমলা এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের দক্ষতার মেলবন্ধনে কাজের গুণমান বাড়বে বই কমবে না। এক সরকারি কর্তার কথায়, “নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে পরামর্শদাতাদের কাজের পরিধি এবং এক্তিয়ার নিশ্চয় বোঝা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE