Advertisement
E-Paper

বেচারামের ‘বিত্ত’ এবং প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন দলেই

২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক দিয়েছেন বিত্তবান না হয়ে বিবেকবান হওয়ার। সিঙ্গুরে প্রশ্ন উঠেছে, বেচার ক্ষেত্রে এই ডাক সফল হবে তো?

বেচারাম মান্না।

বেচারাম মান্না। —ফাইল ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪৯
Share
Save

সেটা ২০০৬ সাল। চাষির ছেলে ও চটকল শ্রমিক তিনি তখন জমিরক্ষা আন্দোলনে নেমেছিলেন সিঙ্গুরে। তখন জীবনযাত্রাও সাদামাঠা। পরে কী হল যে, সেই বেচারাম মান্নাই বনে গেলেন সিঙ্গুর-হরিপালের ‘একচ্ছত্র অধিপতি’, যাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীরা তো বটেই, সরব দলের একাংশও? তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশেরও।

২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক দিয়েছেন বিত্তবান না হয়ে বিবেকবান হওয়ার। সিঙ্গুরে প্রশ্ন উঠেছে, বেচার ক্ষেত্রে এই ডাক সফল হবে তো? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যাঁরা দলকে নিজেদের এলাকায় ‘লিড’ দেওয়াতে পারেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে দল। সেখানেও প্রশ্ন, তা হলে কি সিঙ্গুর ও হরিপাল থেকে ‘লিড’-এর ব্যবস্থা করে দেওয়া বেচার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে দল ব্যবস্থা নেবে না?

বেচারাম-ঘনিষ্ঠদের অবশ্য দাবি, সাংগঠনিক ক্ষমতার জেরে বেচারাম নিজের উচ্চতায় পৌঁছেছেন। রাজ্যে মন্ত্রী হয়েছেন। যদিও বেচারামকে নিয়ে অভিযোগ রয়েছে দলের মধ্যেই। আরামবাগের প্রাক্তন দলীয় সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের স্বামী, তৃণমূলের রিষড়ার পুরসদস্য সাকির আলি বলেন, “উনি (বেচারাম) কোটি কোটি টাকার মালিক। গত কয়েক বছরে সম্পত্তির পরিমাণ লাফিয়ে বেড়েছে। দলনেত্রী যখন নেতাদের স্বচ্ছতার কথা বলছেন, তখন দলীয় স্তরে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”

তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, সিঙ্গুরে পুকুর বুজিয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল করেছেন বেচারাম। সিঙ্গুর আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ, এক সময়ে বেচারাম-ঘনিষ্ঠ দুধকুমার ধাড়ার বক্তব্য, “সিঙ্গুরের বিবেকরা এখন আমার মতোই দলের বাইরে। কারণ, ঘুরপথে বড় ব্র্যান্ডেড স্কুল আর সম্পত্তি করতে আমরা আন্দোলনটা করিনি। টানা ২০ বছর দলের কাজ করেছি। যখন বিবেকের প্রশ্ন উঠেছে, দলে ঠাঁই মেলেনি।” তার পরেই তিনি যোগ করেছেন, “দলনেত্রী যা বলছেন, করে দেখালে স্যালুট করব।”

সেই ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের প্রচারে হরিপালে এসে বাম নেতা বিমান বসু বেচার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিরোধীদের এবং তৃণমূলেরও একাংশের অভিযোগ, সব জেনেও দল ব্যবস্থা নেয়নি। সে কথা উল্লেখ করেই বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিঙ্গুরে সিন্ডিকেট চলে বিধায়কের নেতৃত্বে। ওঁর সম্পত্তির উৎস খুঁজতে, আমার বিশ্বাস সিবিআই, ইডি তদন্ত হবেই।” এলাকার বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীরও অভিযোগ, বেচার সঙ্গে মতের অমিল হলেই ব্যবসায় গোলমাল শুরু হয়। ব্যবসায় বড় মার খাওয়ার আশঙ্কায় নিজেদের নাম প্রকাশে বা আর কোনও অভিযোগ জানাতেও তাঁরা অনিচ্ছুক। এক তৃণমূল নেতার কথাতেও, “সিঙ্গুর-হরিপাল, জেলার আরও কিছু জায়গায় বেচাদার একচ্ছত্র ক্ষমতা। ওঁর বিরুদ্ধে দলে মুখ খুলবেন কে!”

বেচারামের দাবি, “আমার প্যান, আধার নম্বর সবাই জানেন। আয়কর দিই। কোন ব্যাঙ্কে কত ঋণ রয়েছে, প্যান বা আধারের মাধ্যমে সবাই সব দেখে নিতে পারেন।” দলীয় সংগঠনে ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জনসমর্থনহীন, দুর্নীতিগ্রস্তদেরই ছিটকে যেতে হয়।”

বেচা যা-ই বলুন, নিজে সিঙ্গুরের বিধায়ক, স্ত্রী করবী মান্নাকে হরিপাল থেকে প্রার্থী করে বিধানসভায় জিতিয়ে আনা, তাঁকে ফের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী করা— দলে বেচার প্রতিপত্তি নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ নেই। এখন প্রশ্ন উঠেছে, যে বেচারাম দলকে ভোটে জেতাচ্ছেন, তাঁর ‘বিবেক জাগ্রত করা’ কি সম্ভব হবে তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

becharam manna TMC Singur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}