Advertisement
E-Paper

১৪ বছর ধরে লাগাতার ধর্ষণ স্বামী ও ভাশুরের, থানার দ্বারস্থ বধূ

রাতেই বালিগঞ্জ পার্ক থেকে এক ব্যবসায়ী পরিবারের দুই ভাই সুরঞ্জন সেন ও নীলাঞ্জন সেনকে গ্রেফতার করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২২
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলছিল ভাশুর ও স্বামীর অত্যাচার আর ধর্ষণ। সেই সঙ্গে পণের দাবিতে উৎপীড়ন। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে যুবতী গৃহবধূ কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই বালিগঞ্জ পার্ক থেকে এক ব্যবসায়ী পরিবারের দুই ভাই সুরঞ্জন সেন ও নীলাঞ্জন সেনকে গ্রেফতার করা হয়।

খাস কলকাতার এই ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশকেও হতবাক করে দিয়েছে ওই গৃহবধূর বিবৃতি। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের পরে পরেই ভাশুর তাঁকে ধর্ষণ শুরু করেন। তরুণী বধূ সেটা স্বামীকে জানালে তিনি জানিয়ে দেন, এটা তাঁদের পারিবারিক প্রথা! এখানে ভাইয়েরা পরস্পরের স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। ঘরের বৌ বিষয়টি যাতে কাউকে না-বলেন, সেই জন্য তাঁকে শাসাতে থাকেন স্বামী। সেই সঙ্গে দাম্পত্য মিলনের মাধুর্য চুরমার করে বীভৎস ধর্ষণ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনিও। তাঁর বিরুদ্ধে বিকৃত কামনা চরিতার্থ করার অভিযোগও তুলেছেন ওই গৃহবধূ। ভাশুরের স্ত্রীর সঙ্গেও যে তাঁর স্বামীর শারীরিক সম্পর্ক আছে, সেটা অচিরেই স্পষ্ট হয়ে যায় বধূর কাছে।

পুলিশ জানায়, স্বামী, ভাশুর ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ি এবং বড় জায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ওই যুবতী। পুরো ঘটনায় বড়় জায়ের বিবৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান এক পুলিশকর্তা। তাঁরা সেই মহিলার বক্তব্য জানার চেষ্টা করছেন। নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগকারিণী বধূর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে।

পুলিশি সূত্রের খবর, বছর তেত্রিশের ওই বধূর বাপের বাড়ি চেতলায়। বছর চোদ্দো আগে বালিগঞ্জ পার্কের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সেন পরিবারের ছোট ছেলে সুরঞ্জনের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ওই গৃহবধূ পুলিশকে জানিয়েছেন, বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, বড় জায়ের (ভাশুরের স্ত্রী) সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক আছে। তার পরে এক দিন ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হন ভাশুর। সে-দিন বধূ আত্মরক্ষা করতে পারলেও পরে আর পারেননি। ভাশুর তাঁকে নিয়মিত ধর্ষণ করে যেতে থাকেন। স্বামী তাঁকে জানান, তাঁদের বাড়িতে এটা চলে!

সেই থেকে ১৪ বছর ধরে ভাশুর ও স্বামীর লালসা মিটিয়ে আসছিলেন ওই বধূ। অভিযোগ, প্রতিবাদ করলে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ত। তাঁকে দিয়েই বিকৃত কামনা চরিতার্থ করতেন স্বামী। সেই সঙ্গে পণের দাবিতেও চলত অত্যাচার। বছর ছয়েক আগে তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ায় অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যায়। ওই ব্যবসায়ী পরিবার বধূকে জানায়, তারা কন্যাসন্তান চায় না। মেয়ের জন্মের পরে বাপের বা়ড়ি থেকে টাকা এবং শিশুর যাবতীয় জিনিসপত্র আদায় করা হয়েছিল।

সেন পরিবার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই বধূরই চরিত্রের দিকে আঙুল তুলছে। প্রশ্ন উঠছে, ওই গৃহবধূ এত দিন অত্যাচার সহ্য করছিলেন কেন? কেন যাননি পুলিশের কাছে? বাপের বাড়িতেই বা সব কিছু জানাননি কেন?

তরুণীর বাপের বাড়ির বক্তব্য, স্বামীর পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে মেয়ে মুখ বুজে ছিলেন। শুক্রবার চেতলার বাড়িতে বসে অভিযোগকারিণীর মা বলেন, ‘‘মেয়ে প্রথমে কিছুই বলেনি। সম্প্রতি এক দিন জামাইয়ের মা ফোন করে বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে যান। নইলে ছেলে বলছে, পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেবে।’ তার পরেই মেয়ে আর ছ’বছরের নাতনিকে নিয়ে চলে আসি।’’ কিন্তু মেয়ে ভয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে যেতে চাইছিলেন না। তাঁর ‘ট্রমা’ এখনও কাটেনি। শেষে বাপের বাড়ির সাহায্যে বৃহস্পতিবার কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবতী।

ওই রাতেই পুলিশ যুবতীর ভাশুর ও স্বামীকে গ্রেফতার করতে গেলে সেন পরিবার বাধা দেয়। পুলিশকে মারধরও করে বলে অভিযোগ। গ্রেফতারের পরে সুরঞ্জন-নীলাঞ্জনকে শুক্রবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। যুবতীর দুই আইনজীবী গোপাল হালদার ও অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানান, পুলিশকে মারধরের অভিযোগে দু’জন অন্তর্বর্তী জামিন পেলেও বধূ-নির্যাতনের মামলায় তাঁদের সোমবার পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।

Crime Rape Complaint Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy