Advertisement
E-Paper

ডাইনি অপবাদে মারধরের নালিশ, পিংলায় নিখোঁজ বধূ

ডাইনি অপবাদে এক আদিবাসী বধূকে মারধরের অভিযোগ উঠল পিংলায়। শনিবার রাতে ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন খামার কুসুমদা গ্রামের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের রানি হাঁসদা। অভিযোগ, রানিদেবীর বাড়ির সামনেই বসেছিল সালিশি সভা। সভায় রানিদেবীকে মারধর করা হয়।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৭
নিখোঁজ বধূর সন্ধান চলছে পিংলায়

নিখোঁজ বধূর সন্ধান চলছে পিংলায়

ডাইনি অপবাদে এক আদিবাসী বধূকে মারধরের অভিযোগ উঠল পিংলায়। শনিবার রাতে ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন খামার কুসুমদা গ্রামের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের রানি হাঁসদা। অভিযোগ, রানিদেবীর বাড়ির সামনেই বসেছিল সালিশি সভা। সভায় রানিদেবীকে মারধর করা হয়। রানিদেবী পালানোর চেষ্টা করেন। বাড়ির কাছের ধান জমিতে তাঁকে ধরে ফেলে অভিযুক্তরা। ফের মারধর করা হয় তাঁকে। যদিও রবিবার রাত পর্যন্ত রানিদেবীর সন্ধান পায়নি পুলিশ।

ঘটনায় পুলিশে মাকে মারধর করে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন নিখোঁজ বধূর ছোট ছেলে বাপি হাঁসদা। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বধূর বড় ভাসুর মঙ্গল হাঁসদা, মেজ ভাসুর হরিপদ হাঁসদা, ছোট ভাসুর গুরুপদ হাঁসদা ও হরিপদর স্ত্রী সুমি হাঁসদাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘ডাইনি অপবাদে পিংলায় এক মহিলাকে মারধর করা হয়। তারপর থেকে ওই মহিলা নিখোঁজ।’’ তিনি জানান, পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। মামলা রুজু করে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কুসুমদা গ্রামে তিন ভাইয়ের সঙ্গেই থাকেন শ্রীমৎ। রানিদেবীর পরিবারের লোকেদের দাবি, বছর কয়েক ধরেই হাঁসদা পরিবারে নানা অঘটন চলছে। ২০০৯ সালে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মঙ্গলের বড় ছেলে খেলারামের। এরপরে খেলারামের স্ত্রী সোনালি ছোট দেওর সানোকে বিয়ে করে। তাঁদের ছেলে জন্মালে তার মধ্যে নানা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। গত সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয় মঙ্গলের স্ত্রী মুগলির। এ সবের জন্য শ্রীমৎবাবুর তিন ভাইয়ের পরিবারের লোকেরাই রানিদেবীকে ডাইনি সাব্যস্ত করেন। তাঁদের অভিযোগ, ভাসুরদের পরিবারের ক্ষতি করে সব সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছেন রানিদেবী। গত বছর পুজোর সময়ও ডাইনি অপবাদে তাঁকে মারধর করা হয়। পিংলার মীরুপুরে বাপের বাড়িতে চলে যান রানিদেবী। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় ফের বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু তারপরেও ডাইনি অপবাদ থেকে তিনি রেহাই পাননি বলে অভিযোগ।

গত বৃহস্পতিবার ফের গুরুপদর ছেলে পল্টু মাঠে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। ফের হাঁসদা পরিবারের লোকেদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে, ঘটনার পিছনে রানিদেবীরই হাত আছে। নিখোঁজ বধূর পরিবারের লোকেদের দাবি, শনিবার রাতে ওই প্রৌঢ়ার বাড়ির উঠোনে ঘটনার বিচার করতে সালিশি সভা বসে। সেখানে ছিলেন শ্রীমৎবাবুর তিন ভাইয়ের পরিবারের লোকেরা। ছিলেন রানিদেবীর স্বামী ও ছেলেরাও। সালিশিতে রানিদেবীকে মারধর করা হয়। তিনি ছুটে পালানোর চেষ্টা করেন। বাড়ির উত্তর দিকের ধান জমিতে তাঁকে ধরে ফের মারধর করা হয়। তারপর আর রানিদেবীর খোঁজ মেলেনি। মঙ্গলের বউমা সোনালিরও দাবি, “আমাদের পরিবারের অনেক ক্ষতি করেছে মেজ কাকিমা। তাই ওর বিচার হচ্ছিল।”

বাপির অভিযোগ, “কাকারা মাকে ডাইনি অপবাদ দিয়েছিল। ছোট কাকার ছেলে বৃহস্পতিবার মাঠে পড়ে যাওয়ায় সালিশি ডেকে মাকে মারধর করা হয়। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদেরও মারধর করা হয়। তারপরে ওঁরা মাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে জানিনা।” সুমিদেবীরও দাবি, ‘‘বৃহস্পতিবার আমার ছেলে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। শনিবার তারই বিচার চলাকালীন গোলমাল বাধে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমার জাকে খুন করা হয়েছে জানি। জায়ের দেহ নিয়ে গ্রামের পশ্চিম দিকে সবাই যাচ্ছিল। তবে কোথায় ওঁর দেহ রয়েছে
জানি না।’’

পুলিশ সূত্রেও খবর, রানিদেবীকে পিটিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করেছে সুমিদেবী। রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল। রানিদেবীর খোঁজে গ্রাম জুড়ে চলে তল্লাশি। সুমিদেবীর দাবি অনুযায়ীরা গ্রামের পশ্চিম দিকেও তল্লাশি চালানো হয়। যদিও কোথাও রানিদেবীর সন্ধান মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বোনের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে রবিবার মীরুপুর আসেন রানিদেবীর দাদা নফর টুডু। তাঁর অভিযোগ, “আগেও বোনের ওপর ডাইনি অপবাদে অত্যাচার হয়েছে। মারধরের সময়ে আমার ভাগ্নেরা কী করছিল?’’ নফরবাবুর দাবি, ‘‘আমার বড় ভাগ্নেও ওঁর কাকাদের সঙ্গে মিলে রয়েছে। আমরা কাউকে ছাড়ব না।”

state news witch beated woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy