প্রতীকী ছবি।
চাষ-আবাদের সঙ্গে সঙ্গে হস্তশিল্পের নানা সামগ্রী তৈরি করছেন জেলের বাসিন্দারা। কারাগারের অন্দরে এ বার তৈরি হবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। এবং তা তৈরি করবেন বন্দিনীরাই।
অভিনব এই কর্মসূচির সূচনা হচ্ছে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। রাজ্যের কারাকর্তাদের দাবি, বাংলা তো বটেই, সারা দেশের মধ্যে এই প্রথম জেলের মধ্যে বন্দিনীদের হাতে তৈরি হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন।
কারা দফতর সূত্রের খবর, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই ন্যাপকিন তৈরি করবে বর্ধমান জেল। বৃহস্পতিবার ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করে এ কথা জানান ডিজি (কারা) অরুণকুমার গুপ্ত। তিনি জানান, প্রথমে ১৫ জন বন্দিনীকে ন্যাপকিন তৈরির প্রশিক্ষণ দেবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। পরে আরও ১০ জনকে ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জেলেই একটি ছোট জায়গায় উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে ন্যাপকিন তৈরির যন্ত্রপাতি। সেখানেই বন্দিনীদের ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরে পুরোদস্তুত ন্যাপকিন উৎপাদন শুরু হবে বর্ধমান জেলে।
কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, পুরোদস্তুর উৎপাদন শুরুর পরে দিনে ২৫০০টি ন্যাপকিন তৈরি করবেন বন্দিনীরা। এই প্রাথমিক প্রকল্প সফল হলে এটি অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও তা চালু করার পরিকল্পনা আছে কারা দফতরের। সেই জন্য ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে বর্ধমান জেলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
কেন এই প্রকল্প?
‘‘বন্দিনীদের স্বনির্ভর করে তোলাই এই প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য। আরও কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
১) বন্দিনীরা স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করলে এই নিয়ে ছুতমার্গ অনেকটাই কমবে।
২) জেলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়লে জেলের পরিবেশ আরও স্বাস্থ্যসম্মত হবে,’’ বলেন এক কারাকর্তা।
এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন জয়া মিত্রের মতো সমাজকর্মীরা। জয়াদেবী জানান, ৪০ বছর আগে মহিলাদের জন্য জেলে বিপুল পরিমাণে গজ কাপড় আসত। কিন্তু সেগুলো দিয়ে বাড়তি সুবিধাপ্রাপ্ত বন্দিদের মশারি তৈরি হতো। সে-দিক থেকে দেখতে গেলে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির উদ্যোগ ভালই। ‘‘কিন্তু আমেরিকায় ব্যক্তি-মালিকানার মুনাফার স্বার্থে বন্দিদের যে-ভাবে স্বল্পমূল্যের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এখানেও সেটাই হচ্ছে না তো! এখানেও এ-সব তৈরির জন্য বন্দিদের খুব কম পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এটা কিন্তু নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে,’’ বলেন জয়াদেবী।
কারা দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হচ্ছে, উৎপাদনকারী বন্দিনীদের দৈনিক মজুরি তো দেওয়া হবেই। সেই সঙ্গে বাইরে ন্যাপকিন বিক্রি করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি যে-আয় করবে, তার একটি অংশ জমা পড়বে বন্দি কল্যাণ তহবিলে। তার একটি অংশও দেওয়া হবে বন্দিনীদের। বন্দিনীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয় বিনা পয়সায়। জেলে উৎপাদিত ন্যাপকিন বন্দিনীদের জন্য কিনতে পারবেন জেল-কর্তৃপক্ষও। অন্যান্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের থেকে তার দাম অনেকটাই কম পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy