কেউ বলছেন, ‘‘পেন ডাউন করুন।’’ কেউ বলছেন, ‘‘হাওয়াই চটি পরে অফিসে যাই।’’ কেউ কেউ আরও এগিয়ে বলছেন, ‘‘মিছিল-মিটিং করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হোক।’’
দীর্ঘদিনের কোনও দাবি পূরণ না-হলে কর্মীরা এ ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন। করছেনও। তফাতটা শুধু এখানে যে, এগুলো বিরোধী শিবিরের কো-অর্ডিনেশন কমিটির কোনও সদস্য বা কংগ্রেস পরিচালিত কর্মী ফেডারেশনের নেতা-কর্মীর কথা নয়। মূলত বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা নিয়ে ক্ষোভের এমন প্রকাশ সমানে চলেছে শাসক দল তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সচিবালয় শাখায়।
ত্রিপুরায় ভোটের প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ভোটে বিজেপি জিতলে সপ্তম বেতন কমিশনের সুযোগ-সুবিধা ত্রিপুরার সরকারি কর্মীদেরও দেওয়া হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরে ত্রিপুরায় সরকারি কর্মীদের বিরাট অংশ বিজেপি-কে ভোট দিয়েছেন। তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের উপরেও পড়ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মী সংগঠনের নেতারা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, সংগঠন ধরে রাখতে হলে রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে ডিএ ঘোষণা করতে হবে। দেশের ২৩টি রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ দিতে পারছে না। এতে ক্ষোভ বাড়ছে।
সরকারি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মনোভাব বুঝতে সল্টলেক ও মহাকরণ অঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি দফতরের তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সম্পাদক-সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করছেন সংগঠনের নেতা সঞ্জীব পালেরা। নবান্নে তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সচিবালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীববাবু এবং কার্যনির্বাহী সম্পাদক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, বাম আমলেও সরকারি কর্মীরা কখনওই পুরো ডিএ পাননি। সচিবালয় শাখার কর্মী সংগঠনের এক নেতার কথায়, ‘‘বামেরা চলে যাওয়ার সময় ১৬ শতাংশ ডিএ বকেয়া ছিল। এখন ৩৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি দুই শতাংশ ডিএ বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বকেয়া।’’
সংগঠনের নেতা বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী চালু করেছেন। সাইকেল দিচ্ছেন। রাস্তা, আলো, জল দিয়ে উন্নয়ন করছেন। দেনার দায়ে জর্জরিত বাংলা। ৪৫ হাজার কোটি টাকা দেনা নিয়ে উন্নয়ন করতে গিয়ে সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ দিতে দেরি হচ্ছে। ‘‘এটাই সরকারি কর্মীদের বোঝাচ্ছি। কর্মীদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে ২২ মার্চ কেন্দ্রীয় মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে ডিএ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হবে,’’ বলেন বিশ্বজিৎবাবু।
কর্মী সংগঠনের সচিবালয় শাখার এক নেতা জানান, ২০১৫ সালের নভেম্বরে রাজ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু করার জন্য অভিরূপ সরকারকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গড়া হয়। ছ’মাসের মধ্যে সেই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিশনের চেয়ারম্যানের মেয়াদ দু’দফায় দু’বছর বাড়ানো সত্ত্বেও বেতন কমিশন কোনও রিপোর্ট পেশ করতে পারেনি। এটাকেও সরকারি কর্মীরা ভাল চোখে দেখছেন না।
কর্মীদের শান্ত করতে কোমর বাঁধছেন নেতারা। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৯-এর মধ্যে ডিএ মিটিয়ে দেবেন। সেটাও আমরা কর্মীদের ফের শোনাচ্ছি,’’ বলেন সঞ্জীববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy