Advertisement
E-Paper

ইরানে আটকে রাজ্যের কারিগর

কয়েক মিনিটের ভিডিয়ো ফুটেজ। আর তাতে একটাই আর্জি— ‘যত তাড়াতাড়ি পারেন আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করুন। যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৯
ইরানে আটকে পড়া শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র।

ইরানে আটকে পড়া শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র।

কয়েক মিনিটের ভিডিয়ো ফুটেজ। আর তাতে একটাই আর্জি— ‘যত তাড়াতাড়ি পারেন আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করুন। যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’

ইরানে বন্দি অবস্থায় এই বার্তাটি পাঠিয়েছেন ১২ জন বাঙালি। প্রত্যেকেই সোনার কারিগর। রোজগারের আশায় সাত-আট মাস আগে ইরানের চাবাহারে পাড়ি দিয়েছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় ১২ জন সোনার কারিগর দেশে ফেরত আসার জন্য ছটফট করছেন। কিন্তু পাসপোর্ট, কাগজপত্র না থাকায় ঘর থেকেও বেরোতে পারছেন না তাঁরা। আর তাই বাঁচতে চাবাহার থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে একটি ভিডিয়ো বার্তা পাঠিয়েছেন সোনার কারিগরেরা। আর্জি, যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের দেশে আনার ব্যবস্থা করুক পরিবার। যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদ ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করে ধারাবাহিকভাবে ‘ভয়েস মেসেজ’ পাঠিয়ে চলেছেন তাঁরা। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন, ‘‘আমাদের কনস্যুলেটের তরফ থেকে ওই শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

ওই কারিগদের পরিবার সূত্রের খবর, রোজগারের উদ্দেশে হুগলির বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন মল্লিকের সঙ্গে ইরান পাড়ি দিয়েছিলেন ২৫ জনের একটি দল। সেখানে চাবাহার আজাদ অম্বর-এ ‘লিপারটালা’ বলে এক ইরানীয় সংস্থায় সোনার কারিগর হিসাবে কাজে যোগ দেন তাঁরা। মূলত সোনার গয়নার এবং তার উপর নকশা তৈরি করেন তাঁরা। যাঁদের মধ্যে এ রাজ্যের ২৪ জন। কেউ হুগলি, আবার কেউ বীরভূম কিংবা বর্ধমানের অথবা কোচবিহার বা দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাসিন্দা। আর অন্যজন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। তবে ২৫ জনের মধ্যে এক যুবক কাজ না জানায় এক মাসের মাথায় তাঁকে এবং তিন মাসের মাথায় আরও দু’জনকে দেশে ফেরত পাঠায় সংস্থাটি। এক বছরের মৌখিক চুক্তিতে বাকি ২২জন কাজ করছিলেন। কিন্তু মাস তিনেক আগে আচমকাই ইরানের মুদ্রার দাম পড়ে যায়। তাতেই সমস্যা শুরু হয়। অভিযোগ, বেতন বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। কাজ থেকে দশজনকে বসিয়ে দেওয়া হয়। বেতন বন্ধ হলেও খাবারের জন্য সামগ্রী কেনা এবং সাপ্তাহিক হাতখরচ দিত সংস্থাটি।

গত বৃহস্পতিবার ২২ জনের মধ্যে দশজনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। সেই দশজন ফেরতও এসেছেন। অভিযোগ, দশজন দেশে আসার পরেই সংস্থার তরফে বাকিদের উপর যে ধরনের অত্যাচার শুরু হয়েছে, তাতে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা করছেন বাকি ১২ জন। অভিযোগ, ১২ জনকে সংস্থার তরফ থেকে কোনও খাবার দেওয়া হচ্ছে না। নেই কোনও পানীয় জল। মিলছে না হাত খরচের টাকাও। ফলে নিজেরাও খাবার কিনতে অপারগ। উল্টে পাসপোর্ট কিংবা কোন সংস্থার হয়ে ইরানে রয়েছেন সে সংক্রান্ত কাগজপত্রও সংস্থাটি আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। সে কারণে ভয়ে গৃহবন্দি হয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। কারণ, বেআইনিভাবে ইরানে থাকার অপরাধে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে।

ভিডিয়োতে আর্জি জানানো যুবক মইনুদ্দিন শেখের দাবি, একাধিকবার সংস্থার ম্যানেজারকে ফোন করার পরে শনিবার তিনি আসেন। জানান, ১৩ জনকে ইরান থেকে ফেরত পাঠাতে সংস্থার অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে। এই ১৩ জনের জন্য যে ১৮ হাজার দিরহাম (সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মুদ্রা) খরচ হয়েছে তা পাওয়া গেলে পাসপোর্ট ফেরতের সঙ্গেই দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করবে সংস্থাটি।

এমতাবস্থায় মানব পাচার রোধের সঙ্গে যুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন আটক ১২ জনের পরিবারের সদস্যরা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর, বিদেশ মন্ত্রক, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং সিআইডিকে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি সংস্থার তরফে পাঠানো হয়েছে। ওই বেসরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান শেখ জিন্নার আলি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’’

Workers West BEngal Iran Stuck
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy