Advertisement
E-Paper

যেমন খুশি চলো, এটাই নিয়ম হলুদ ট্যাক্সির

রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ ট্যাক্সি। কিন্তু অভিযোগ, মিটারে যাবে না কেউ। এমনকি, মিটারের চেয়ে কিছু টাকা বেশি দিলেও নড়বে না।

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪০
রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ ট্যাক্সি। কিন্তু অভিযোগ, মিটারে যাবে না কেউ। ছবি: সংগৃহীত।

রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ ট্যাক্সি। কিন্তু অভিযোগ, মিটারে যাবে না কেউ। ছবি: সংগৃহীত।

দৃশ্য ১: দমদম স্টেশনের আন্ডারপাস। রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে হলুদ ট্যাক্সি। নিউ টাউন যাবেন বলে ট্যাক্সি খুঁজছিলেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। কোনও চালকই মিটারে যেতে রাজি নন। মিটারের উপরে ১০০ টাকা বেশি দিতে চাইলেন দম্পতি। চালকেরা জানিয়ে দিলেন, তাঁদের নির্ধারিত ভাড়াতেই যেতে হবে। হিসেবে দেখা গেল, সেই টাকা নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। সে কথা জানাতেই চালকেরা দম্পতিকে জানিয়ে দিলেন, ‘কেউ যাবে না। অন্য গাড়ি দেখুন।’ অসহায় দম্পতি দাঁড়িয়ে রইলেন রাস্তায়।

দৃশ্য ২: বারাসতের কলোনি মোড়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরেই ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। বারাসত থেকে নাগেরবাজার যেতে দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকলেন চালকেরা। কেন? তাঁদের যুক্তি, ফিরতি পথে যাত্রী পাওয়া যায় না। কৃষ্ণনগর রোড ধরে তখন কলকাতার দিকে আসছিল একটি ফাঁকা ট্যাক্সি। সেটিকে দাঁড় করাতেই বাধা দিলেন স্ট্যান্ডের চালকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘স্ট্যান্ডের সামনে থেকে রানিং ট্যাক্সি ধরা যাবে না।’ কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে সেই ‘রানিং’ ট্যাক্সি অবশ্য পাওয়া গেল। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে চালক জানালেন, বাড়তি ৫০ টাকা দিতে হবে। কারণ, ওই স্ট্যান্ডে তাঁকে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।

রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ ট্যাক্সি। কিন্তু অভিযোগ, মিটারে যাবে না কেউ। এমনকি, মিটারের চেয়ে কিছু টাকা বেশি দিলেও নড়বে না। চালকের দাবি মতো টাকা দিয়ে যেতে হবে গন্তব্যে। এমনই হয়ে চলেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, ভিআইপি রোড, যশোর রোড এবং বি টি রোডে। দমদম, নাগেরবাজার, সেন্ট্রাল জেল মোড়, লেক টাউন থেকে শুরু করে বাগুইআটি, কৈখালি, বিমানবন্দর, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম— সর্বত্র এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে। মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় জাতীয় সড়ক ও ফুটপাত জুড়ে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকায় বাস থেকে ওঠানামা করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দিনের ব্যস্ত সময়ে অ্যাপ-ক্যাবগুলিও চড়া ভাড়া হাঁকে। অভিযোগ, সেই সুযোগই নেন ট্যাক্সিচালকেরা। নাগেরবাজারের বাসিন্দা শান্তনু সান্যালের অভিযোগ, ‘‘চাহিদা মতো টাকা না পেলে ট্যাক্সি যেতেই চায় না। খারাপ ব্যবহার করেন চালকেরা। অভিযোগ করলে বলা হয়, অন্য ট্যাক্সি ধরুন।’’

যদিও কেউ অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে দাবি করলেন ব্যারাকপুরের ডিসি (ট্র্যাফিক) অবধেশ পাঠক। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যাখ্যান ঠেকাতে ও মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া চাওয়া আটকাতে চালকদের সঙ্গে বৈঠক করে সতর্ক করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে এমন অভিযোগ কেন উঠছে, খতিয়ে দেখব।’’

তবে ভাড়া ফিরিয়ে দিয়ে ‘লাভ’-এর রহস্যটা জানালেন দমদম স্টেশন ও কলোনি মোড়ের দুই ট্যাক্সিচালক। তাঁদের কথায়, স্ট্যান্ড থেকে ‘রানিং’ ট্যাক্সি ধরিয়ে দিলে সেই চালকের থেকে বখরা মেলে। এ ছাড়াও সারা দিনে দু’থেকে তিন জন ‘মুরগি’ মিলেই যায়। ‘মুরগি’ মানে? এক চালকের কথায়, ‘‘ধরুন, ট্রেন থেকে নেমে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ আবার চোরাপথে বনগাঁ সীমান্তে যাবেন। কেউ বাংলাদেশ থেকে নতুন এসেছেন, যাবেন কলকাতা। এমন সব ভাড়া। এ সবে দু’-তিন গুণ টাকা পাওয়া যায়। মালিককে রোজের প্রাপ্য দিয়েও হাতে ভালই থাকে।’’

Taxi Transportation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy