Advertisement
০৫ মে ২০২৪
লিখিত অভিযোগও হল না

রাজুর মৃত্যু কী ভাবে, ধন্দ বহাল

কী ভাবে মারা গেলেন বোলপুরের যুবক রাজু থান্দার, সেই রহস্য রবিবার তাঁর দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পরেও পরিষ্কার হল না। রাজুর পরিবারের অভিযোগ, ওই যুবককে চোর সন্দেহে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে টানা তিন দিন থানা লকআপে আটকে রেখে পিটিয়ে মারা হয়েছে।

বিষণ্ণ পূজা। —নিজস্ব চিত্র।

বিষণ্ণ পূজা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

কী ভাবে মারা গেলেন বোলপুরের যুবক রাজু থান্দার, সেই রহস্য রবিবার তাঁর দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পরেও পরিষ্কার হল না। রাজুর পরিবারের অভিযোগ, ওই যুবককে চোর সন্দেহে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে টানা তিন দিন থানা লকআপে আটকে রেখে পিটিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু, সোমবার অবধি মৃতের পরিবারের তরফে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

মৃতের স্ত্রী অন্নদেবী এ দিন বলেন, “পুলিশ পিটিয়ে খুন করেছে, এটা এখন সবারই জানা। অভিযোগ করে আর কী হবে! স্বামী তো আর ফিরে আসবে না। পুলিশের সঙ্গে কি আমরা পেরে উঠব? তাই উপরওয়ালার উপরেই সব ছেড়ে দিয়েছি। তিনিই ইনসাফ করবেন!’’

মৃতের পরিবার অভিযোগ না করলেও রাজুর মৃত্যুকে ঘিরে রবিবার রাতে বোলপুর থানায় জনতার চড়াও হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে বোলপুর থানার পুলিশ। এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে আহত, মৃতের আত্মীয়রা বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায়, তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ দিনও ওই ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি বীরভূম জেলা পুলিশের কোনও কর্তাই। তবে, বাড়তি গণ্ডগোলের আশঙ্কায় থানায় আশেপাশের একাধিক থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী, র‍্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন ছিল।

কী ভাবে মারা গেলেন ২৮ বছরের রাজু থান্দার, সেই চর্চায় এ দিনও শহর ছিল সরগরম। পরিবারের দাবি, বৃহস্পতি থেকে শনিবার—এই তিন দিন টানা রাজুকে থানায় আটকে রাখলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার দেখায়নি। উল্টে শনিবার গভীর রাতে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে রাজুকে নিয়ে এসে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালায়। কী কারণে এত দিন তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে, কেনই বা তল্লাশি হচ্ছে, সে সব জানতে চাওয়ায় পুলিশ পরিবারের লোকেদের মারধরের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ বোলপুর হাসপাতালের সামনে রাজুর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের একটি সূত্রের খবর, সকালে ওই দেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশই।

সেই খবর ছড়াতেই উত্তেজনা বাড়ে। রাতে এলাকাবাসীর একাংশ থানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ রবার বুলেট চালায় বলে অভিযোগ। তাতে আহত হন মৃতের শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জন। দুই হাঁটুর উপরে রবার বুলেট লাগায় বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয় রাজু থান্দারের শ্বশুর মিহির বীরবংশীকে। এ ছাড়া, মৃতের মামাশ্বশুর কমল বীরবংশী, মাসি শাশুড়ি নমিতা বীরবংশী এবং শ্যালিকা পিঙ্কি দাস বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবার রাতে কড়া পুলিশ পাহারায় নিহত রাজু থান্দারের দেহ বোলপুরের সতীঘাট শ্মশানে দাহ করা হয়।

এ দিন বোলপুরের দু’নম্বর ওয়ার্ডের দর্জিপাড়ার ঝুপড়িতে বসে, রাজুর স্ত্রী অন্ন বলেন, ‘‘রাজুর ইচ্ছে ছিল, লেখাপড়া করিয়ে মেয়েকে পুলিশ করবে। তাই প্রাইভেট টিউশন দিয়েছিল। বছর এগারোর মেয়ে পূজাই ছিল ওর সব কিছু। বলেছিল মৃত্যুর পরে, পুজাই যেন তার মুখাগ্নি করে। হলও তাই।’’ কিছুটা থেমে চোয়াল শক্ত করে বললেন, ‘‘রবিবার রাতে স্বামীর চিতা যখন জ্বলছে, আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, মেয়েকে আর পুলিশ করব না। যে পুলিশ তার বাবাকে পিটিয়ে খুন করল, সেই পুলিশ কেন হবে? তাই আমার কোনও অভিযোগ নেই।’’ হতদরিদ্র পরিবারের পাশে কে দাঁড়াবে, মেয়ের পড়াশোনাই বা কেমন করে চালিয়ে যাবে, সেই প্রশ্নেই এখন দিশাহারা রাজুর স্ত্রী। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসেছিল সদ্য পিতৃহারা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পূজা।

এ দিকে রবিবার রাতে থানা-ভাঙচুরের ঘটনার পরে সোমবার সকালে এলাকা ঘুরে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জে বি থমাস। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যেই মৃতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। গরিব পরিবার এবং মৃতের মেয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। রাজুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা রুজু হয়েছিল আগেই। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে, সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE