Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Afghanistan Crisis

Afghanistan Crisis: ‘আর গাইতে পারবে হুমারা?’

আফগানিস্তান থেকে অনেক দূরে, ভারতের উত্তরাখণ্ডের একটি শহরে বসে স্মৃতির ডালি মেলে ধরলেন অভিষেক অধিকারী।

কাবুলে আফগান ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গানের স্কুলে অভিষেক।

কাবুলে আফগান ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গানের স্কুলে অভিষেক। নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪৫
Share: Save:

‘বাহারোঁ ফুল বরষাও/ মেরা মেহেবুব আয়া হ্যায়......’

মহম্মদ রফির এই গান খুব প্রিয় ছিল আফগান তরুণী হুমা রহামির। বাড়িতে, গানের স্কুলে গলা ছেড়ে কত বার এই গান গেয়েছেন তিনি! কিন্তু এখন আর এই গান গাওয়ার সাহস নেই তাঁর। শুধু হুমা নয়, বহু আফগান তরুণ-তরুণীরই প্রিয় গায়ক-গায়িকা ছিলেন রফি আর লতা মঙ্গেশকর। অনেক ঘরেই বাজত রফির গান। এখন কি সবই বন্ধ হয়ে যাবে?

আফগানিস্তান থেকে অনেক দূরে, ভারতের উত্তরাখণ্ডের একটি শহরে বসে স্মৃতির ডালি মেলে ধরলেন অভিষেক অধিকারী। বছর দুই আগেও কাবুলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মিউজিকে সেতার শেখাতেন তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মূর্ছনা। কাবুল থেকে চলে এলেও অনলাইনে সেতার শেখানো বন্ধ হয়নি। “গানবাজনা সবই বোধ হয় বন্ধ হয়ে গেল। তালিবানের কাছে তো গানবাজনা নিষিদ্ধ। হারাম,” ফোনে বললেন অভিষেক।

বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অভিষেক রবীন্দ্রভারতী থেকে সঙ্গীতে স্নাতকোত্তর করে স্ত্রী মূর্ছনাকে নিয়ে ২০১৫ সালে কাবুল পাড়ি দেন। আফগান সরকারের সঙ্গীত স্কুলে সেতারের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন দু’জনেই। তাঁর সেই সব ছাত্রছাত্রীর কথা বলতে গিয়ে গলা ভারী হয়ে আসে অভিষেকের। বললেন, “আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা সেতারশিল্পী ছিলেন আমাদের স্কুলের ছাত্রী। ওরা আমাকে উস্তাদজি বলত। একমাত্র আমাদের স্কুলেই একসঙ্গে গান শিখত ছেলেমেয়েরা। হিন্দুস্থানি সঙ্গীতে কী ভাল গলা ছিল কয়েক জনের! দেশে চলে আসার পরেও সম্পর্ক থেকে যায় ওদের সঙ্গে। অনলাইনে সেতার শেখাতাম। সব বোধ হয় বন্ধ হয়ে গেল। ওদের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।”

কাবুলে ওই গানের স্কুল বন্ধ করার জন্য তাঁদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে, জানালেন অভিষেক। বলেন, “তালিবানের হুমকির ভয় ছিল ঠিকই। তবে ২০১৫ থেকে ২০১৯, যে-পাঁচ বছর ওখানে ছিলাম, খুব আনন্দে ছিলাম। গান শেখানোর মাধ্যমে ওদের কাছে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার একটা আনন্দ ছিল। আমাদের স্কুলে সেতার, সরোদ, পশ্চিমী সঙ্গীত, হিন্দুস্থানি ধ্রুপদী সঙ্গীত— সবই শেখানো হত। আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিদেশেও অনুষ্ঠান করেছি।”

অভিষেক জানান, শুধু কাবুলে নয়, তাঁদের সঙ্গীতচর্চার পরিধি এতটাই প্রসারিত হয়েছিল যে, সঙ্গীত শিক্ষার স্কুল খোলা হয়েছিল আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটা প্রদেশে। গানবাজনার চর্চা শুরু করেছিলেন বহু আফগান যুবতী। আফগানিস্তানের খারাবাদে গানবাজনার চর্চা ছিল খুব বেশি। অনেক উস্তাদজি খারাবাদে থাকতেন। তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে সেখানে গানের স্কুল খুলেছিলেন।

সম্প্রতি কয়েক জনের শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন অভিষেক। তিনি জানান, ওঁদের কয়েক জন জানিয়েছেন, খুব ভয়ে ভয়ে রয়েছেন ওঁরা। সেতারগুলোকে কম্বলে মুড়ে বাড়ির এমন জায়গায় রেখে দিয়েছেন, যাতে চট করে কারও নজরে না-পড়ে। তাঁরা গানবাজনা করতেন, এটা জানলে তালিবান তাঁদের দিয়ে রাস্তাঘাট ও নর্দমা সাফ করাবে, এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে। “এত দূরে আছি। ওদের প্রকৃত অবস্থাটা কী, আমরা কেউই জানি না। সবাই তো আর দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারবেন না। যাঁরা ওখানেই থেকে যাবেন, তাঁরা কি আর কোনও দিন মহম্মদ রফির গান গাইতে পারবেন,” অভিষেকের গলায় সপ্রশ্ন বিষাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan Crisis song Afghan Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE