Advertisement
E-Paper

অচেনা তালুকে ভয় ভাঙাতে দৌড় সুভাষিণীর, মুগ্ধ কর্মীরা

গোলঘর থেকে বীজপুর। হাজিনগর থেকে আমডাঙা। ব্যারাকপুর থেকে বারাসত। ভোট মিটে যাওয়ার পরে তিন দিনে অবিশ্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন এক প্রৌঢ়া। পরনে দেহাতি কায়দায় ডান দিকে আঁচল ফেলে শাড়ি। হাতের মোবাইল থেকে একের পর এক ফোন যাচ্ছে এখানে-ওখানে। নানা জায়গায় আক্রান্ত, সন্ত্রস্ত মুখের সামনা-সামনি হয়ে জানতে চাইছেন, কীসের ভয়!

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:৪৭
ভোট-সংঘর্ষে আহতদের দেখতে বারাসত হাসপাতালে ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি। —ফাইল চিত্র।

ভোট-সংঘর্ষে আহতদের দেখতে বারাসত হাসপাতালে ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি। —ফাইল চিত্র।

গোলঘর থেকে বীজপুর। হাজিনগর থেকে আমডাঙা। ব্যারাকপুর থেকে বারাসত। ভোট মিটে যাওয়ার পরে তিন দিনে অবিশ্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন এক প্রৌঢ়া। পরনে দেহাতি কায়দায় ডান দিকে আঁচল ফেলে শাড়ি। হাতের মোবাইল থেকে একের পর এক ফোন যাচ্ছে এখানে-ওখানে। নানা জায়গায় আক্রান্ত, সন্ত্রস্ত মুখের সামনা-সামনি হয়ে জানতে চাইছেন, কীসের ভয়!

দু’মাস আগে শিয়ালদহ স্টেশনে যখন নেমেছিলেন, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাম মহলে নানা অসন্তোষ। কেন এমন বাইরে থেকে আনা প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়া হল? ফল শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, ভোট-পর্বের মধ্যেই সেই শিল্পাঞ্চলের সিপিএম শিবিরের মনোভাব বদলে দিতে পেরেছেন সুভাষিণী আলি! ভোটের দিন আক্রান্ত বাম কর্মী-সমর্থকদের প্রত্যেকের বাড়িতে হাজিরা দিয়েছেন ফল বেরোনোর আগের তিন দিনে। শাসক দলের আক্রমণে কোণঠাসা কর্মী-সমর্থকদের জন্য তাঁর একটাই বার্তা যো ডর গ্যয়া, ওহ্ মর গ্যয়া!

সুভাষিণীর এই লড়াই বাম শিবিরের মধ্যেই এখন রাতারাতি অন্য চর্চা শুরু করিয়ে দিয়েছে। ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকার সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরাই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা সুভাষিণী যদি এ ভাবে সন্ত্রস্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন, দলের জেলা বা রাজ্যের নেতারাই বা পারবেন না কেন? বিষয়টি অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে বুঝে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্যও এখন দলের প্রার্থীর সঙ্গে সঙ্গে দৌড়তে শুরু করেছেন!

শুরুটা কিন্তু করেছিলেন সুভাষিণী একাই। ভোটের দিন কিছু এলাকায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সমর্থকদের ভোট দিতে বেরোতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। ভোটের পরেও সহমর্মিতা অব্যাহত। বীজপুরের রেখা মণ্ডল যেমন। পঞ্চায়েত সদস্য রেখা ছিলেন বুথের এজেন্ট। তাঁকে ভয় দেখানোর অভিযোগ তো ছিলই। সেই হুমকি উপেক্ষা করে রেখা যখন বুথে ডিউটি করছেন, তাঁর বাড়িতে তখন ভাঙচুর চলেছে। রেখার সেই বাড়িতে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সুভাষিণী। আর এক পঞ্চায়েত সদস্য রমা মণ্ডল ছাড় পাননি শাসক দলের সমর্থকদের হাতে। পায়ে ভাল রকমের জখম। তাঁকেও দেখতে গিয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী। জগদ্দলের এক সিপিএম সমর্থক আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানে গিয়েও শাসক দলের লোকজন ওই আক্রান্তের এক সঙ্গীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। সুভাষিণী দৌড়ন হাসপাতালে। সেখান থেকে আহতকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য হাসপাতালে। পরে সেই সমর্থকের হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরাও নিশ্চিত করে এসেছেন প্রয়াত প্রেম ও লক্ষ্মী সহগলের কন্যা।

প্রচার চলাকালীন ব্যারাকপুরের কংগ্রেস প্রার্থী সম্রাট তপাদার যখন আক্রান্ত হলেন, তখনও হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন সুভাষিণী। আবার ভোটের দিন বীজপুর ও আমডাঙার বেশ কিছু মহিলা শারীরিক ভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েও ভোট দিয়ে এসেছেন জেনে তাঁদের কুর্ণিশ জানাতে চলে গিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী।

বুধবার ফের গিয়েছিলেন আমডাঙার বোদাই গ্রামে মহিলাদের নালিশ শুনতে। তাঁর অভিজ্ঞতা, কোথাও কোথাও পুলিশ-প্রশাসন সহযোগিতা করেছে। আবার অনেক জায়গাতেই পুুলিশ বা নির্বাচন কমিশন পাশে দাঁড়ায়নি। তবে সুভাষিণীর কথায়, “আমি যখন গিয়েছি, আমাকে কিন্তু কেউ ভয় দেখায়নি!”

বেলঘরিয়ায় আক্রান্ত দলের কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বা দমদমের প্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত গিয়েছিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীও আক্রান্তদের কাছে গিয়ে থাকেন। কিন্তু একেবারে বহিরাগত হয়ে এসে সুভাষিণী যে ভাবে মার-খাওয়া সমর্থকদের সাহস জোগাতে চেষ্টা করেছেন, তাতে অভিভূত বাম কর্মীরা। অনিরুদ্ধ দাস, প্রশান্ত ঘোষেদের বক্তব্য, রাজ্য এবং বিভিন্ন জেলার নেতাদের সুভাষিণীকে দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত! কংগ্রেসের এক স্থানীয় নেতারও অভিমত, ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানোর মতো মহিলা মুখ সাম্প্রতিক কালে সিপিএম বিশেষ পায়নি।

কানপুর থেকে আগে সাংসদ হয়েছিলেন সুভাষিণী। তার পরেও ভোটে লড়েছেন। উত্তরপ্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গে ভোটে লড়ার মধ্যে কী ফারাক দেখছেন? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যের কথায়, “উত্তরপ্রদেশ কেন, ভারতের অন্য কোনও জায়গার সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের এই ভোটের কোনও তুলনা হয় না! এখানে প্রথমে ভয় দেখানো হচ্ছে। না শুনলেই হিংসা! এ রকম কোথাও হয় না!” জেলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশ যে দাবি তুলতে শুরু করেছেন হেরে গেলেও ব্যারাকপুরের সঙ্গে তাঁর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা চলবে না, তা-ও কানে গিয়েছে সুভাষিণীর। বলছেন, “এখন এ সব আলোচনা করা ঠিক নয়। এটা পার্টিকে ভাবতে হবে।”

পার্টি কী ভাববে, পরের কথা। আপাতত ব্যারাকপুরের সিপিএম কর্মীরাই তাঁদের প্রার্থীর নতুন নাম দিয়েছেন সাহসিনী!

subhashini ali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy