Advertisement
E-Paper

অবশেষে ধৃত ১, এখনই চাকরি নেবেন না ভাই

সালকিয়ার প্রতিবাদী যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর খুনের ঘটনায় এক অভিযুক্ত রাজু তিওয়ারী ওরফে রাজীবকে বারাণসী থেকে গ্রেফতার করল হাওড়া সিটি পুলিশ। তাকে হাওড়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরূপের বাড়ি গিয়ে তাঁর ভাই অমরকে চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতারের পরেও অমর জানালেন, সমস্ত অপরাধী ধরা না পড়া পর্যন্ত চাকরি নেবেন না তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪

সালকিয়ার প্রতিবাদী যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর খুনের ঘটনায় এক অভিযুক্ত রাজু তিওয়ারী ওরফে রাজীবকে বারাণসী থেকে গ্রেফতার করল হাওড়া সিটি পুলিশ। তাকে হাওড়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরূপের বাড়ি গিয়ে তাঁর ভাই অমরকে চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতারের পরেও অমর জানালেন, সমস্ত অপরাধী ধরা না পড়া পর্যন্ত চাকরি নেবেন না তিনি।

অরূপের মৃত্যুর পিছনে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ রয়েছে বলে বুধবারই বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোড়ন শুরু হয়েছে। এ বার এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর আসা নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিয়ে বৃহস্পতিবার তাতে ইন্ধন জোগালেন তাঁরই দলীয় বিধায়ক আশোক ঘোষ।

এ দিন তিনি স্পষ্টই বলেন, “এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। তা আমাকে কেউ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। কোন অদৃশ্য কারণে এটা হল জানি না। তবে অন্য নেতা ও কাউন্সিলরেরা ঠিক খবর পেয়েছিলেন।” অশোকবাবুর দাবি, তিনি ওই সময়ে ব্যক্তিগত কাজে অন্য জায়গায় ছিলেন। সেখানে বসে তিনি জানতে পারেন, অরূপের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন।

বুধবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী যখন সালকিয়ার বিবিবাগানে অরূপের বাড়িতে যান, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায়। এ ছাড়াও দেখা গিয়েছিল মেয়র পারিষদ তথা উত্তর হাওড়া তৃণমূলের সভাপতি গৌতম চৌধুরী-সহ মেয়র পারিষদ বাণীসিংহ রায়, কাউন্সিলর রজত মজুমদার ও মধ্য হাওড়ার আর এক কাউন্সিলর শ্যামল মিত্রকে। অশোকবাবু বলেন, “জেলা সভাপতি কেন আমাকে মুখ্যমন্ত্রী আসার বিষয়টি জানাননি, তা উনিই বলতে পারবেন।”

যদিও জেলা সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আচমকা ফোন করে ডাকেন। উনি আমাকে বলেছিলেন, ওঁর যাওয়ার বিষয়ে কাউকে যেন জানানো না হয়। দলনেত্রীর নির্দেশ তো অমান্য করতে পারি না। অন্যেরা কে কোথা থেকে খবর পেয়ে এসেছে, তা জানি না।”

উত্তর হাওড়ার প্রবীণ ওই বিধায়ক আরও অভিযোগ করেন, হামেশাই মন্ত্রী অরূপ রায় উত্তর হাওড়ায় এলেও তাঁকে জানানো হয় না। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর স্পষ্ট নির্দেশই রয়েছে, কোনও মন্ত্রী কোনও এলাকায় গেলে সেখানকার বিধায়ককে জানাবেন। অশোকবাবুর দাবি, ‘‘দলনেত্রী বললেও এই মন্ত্রী তা কখনওই করেন না।’’ অরূপবাবুর যুক্তি, “আমি দলের জেলা সভাপতি (শহর)। তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলে যেতে হয়। উত্তর হাওড়া থেকে যাঁরা আমায় আমন্ত্রণ জানান, তাঁরা ওঁকেও জানিয়ে দেন। তাই আমার আলাদা করে জানানোর কিছু নেই।”

সালকিয়ার প্রতিবাদী যুবকের মৃত্যুর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে বিতর্ক তৈরি করে গিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এ বার মুখ্যমন্ত্রী আসার বিষয়ে খবর না পাওয়ায় অশোকবাবুর এই মন্তব্যে সেই বিতর্কই আরও কিছুটা উস্কে গেল বলে মত জেলার শীর্ষ নেতাদের। যদিও এ দিন অশোকবাবু বলেন, “অরূপের মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা বলেননি। দু’টি পাড়ার মধ্যের গণ্ডগোলকেই বুঝিয়েছেন। আর তাতেই এক জন আক্রান্ত হন।”

তবে অরূপের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতিতে বৃহস্পতিবারও এতটুকু ভাটা পড়েনি। এ দিন সকালে ওই যুবকের বাড়িতে আসেন বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য।

মুখ্যমন্ত্রীর ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ তত্ত্বের বিরুদ্ধে শমীকবাবু বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে সংবেদনশীল বলেই জানতাম। কিন্তু ওঁর এই কথা শুনে বিস্মিত। আসলে উনি খুব ক্লান্ত। ওঁর বিশ্রাম দরকার।” বেলা বাড়তেই বিবিবাগানে অরূপের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বামনগাছির নিহত প্রতিবাদী যুবক সৌরভ চৌধুরীর বাবা, দাদা ও বন্ধুরা। এ দিন বিকেলে বুদ্ধিজীবীদের একটি দল হাওড়ার ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সালকিয়ায় আসেন।

সবার সঙ্গে অরূপের ভাই অমরের আলোচনার সময়ে উঠে আসে রাজ্যের তরফে তাঁকে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়টিও। পরে অমর স্পষ্ট বলেন, “অপরাধী ধরা পড়ার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস এবং পরিবারের কথা চিন্তা করে চাকরির ব্যবস্থা করায় আমরা কৃতজ্ঞ। তবে সবেমাত্র এক জন ধরা পড়েছে। আরও চার জন রয়েছে। আগে সবাই ধরা পড়ুক। তার পরে চাকরির বিষয়। তাতে চাকরিতে যোগ দেওয়ার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে হোক।” একই বক্তব্য অরূপের বন্ধু অভিজিত্‌ বসুরও। তাঁর জন্য হাওড়া পুরসভায় চাকরির ব্যবস্থা করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন অভিজিত্‌ বলেন, “চাকরির তো দরকার রয়েইছে। তবে অপরাধীরা ধরা না পড়া সত্ত্বেও চাকরিটা নিলে নিজের বিবেকের কাছে আমি হেরে যাব।”

মুখ্যমন্ত্রীর চাকরি দেওয়ার বিষয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “মনে হচ্ছে, উনি চাকরির নিয়োগপত্র দিতে গিয়েছিলেন। আমরা গর্বিত যে, নিহতের ভাই সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। তাঁরা চেয়েছেন আগে অপরাধীরা ধরা পড়ুক, শাস্তি হোক।” তিনি আরও বলেন, “এই সরকারের কাজই হল প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের আড়াল করা।” রাজ্যে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ, শুক্রবারই মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত প্রতিবাদ-মিছিলের ডাক দিয়েছে বামেরা।

arup bhandari murder salkia raju tiwari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy