Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
কড়া দাওয়াই কমিশনের

অভিযুক্ত আধিকারিকদের সরানোর ইঙ্গিত

পক্ষপাতদুষ্ট অফিসারদের দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে বলে কলকাতা ছাড়ার আগে ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভিএস সম্পত। শনি ও রবিবার দু’দিন রাজ্যের ভোট প্রস্তুতি পর্যালোচনা করে সম্পতের নেতৃত্বাধীন কমিশনের ‘ফুল বেঞ্চ’ বা পুরো দল। কলকাতা ছাড়ার আগে সম্পত বলেন, “নির্বাচনের কাজে যুক্ত অফিসারদের বলা হয়েছে পুরোপুরি নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। বেশ কয়েক জন অফিসারের উপর আমাদের নজর রয়েছে। আর একটু অপেক্ষা করুন। খুব দ্রুত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত। রাজারহাটে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত। রাজারহাটে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

পক্ষপাতদুষ্ট অফিসারদের দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে বলে কলকাতা ছাড়ার আগে ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভিএস সম্পত।

শনি ও রবিবার দু’দিন রাজ্যের ভোট প্রস্তুতি পর্যালোচনা করে সম্পতের নেতৃত্বাধীন কমিশনের ‘ফুল বেঞ্চ’ বা পুরো দল। কলকাতা ছাড়ার আগে সম্পত বলেন, “নির্বাচনের কাজে যুক্ত অফিসারদের বলা হয়েছে পুরোপুরি নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। বেশ কয়েক জন অফিসারের উপর আমাদের নজর রয়েছে। আর একটু অপেক্ষা করুন। খুব দ্রুত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কমিশন সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকের শুরুতেই সম্পত বলেন, এ রাজ্যে প্রশাসনিক স্তরে নিরপেক্ষতার ঘাটতি হচ্ছে বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। সেই ভাবমূর্তি বদলাতে হবে। তবে কয়েক জন অফিসার যে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছেন, সে খবরও পেয়েছেন তাঁরা। এমনকী, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল।” সম্পতের বক্তব্য, তবে সেটাই শেষ নয়। শুধু কয়েক জন অফিসার নন, সমগ্র প্রশাসন যে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে, তা দৃশ্যমান হতে হবে। সে ব্যাপারে তত্‌পর হতে হবে অফিসারদের। পরে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর সাফ কথা, শুধুমাত্র জেলাশাসক বা পুলিশ সুপার নয়, তার চেয়েও উচ্চপদস্থ অফিসারদের উপর নজর রাখছে কমিশন। প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কমিশন সূত্রের ইঙ্গিত, আজ সোমবারই বেশ কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার এবং দু’এক জন জেলাশাসককে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। রবিবার দিনভর জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকেও তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। কমিশন সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে কমিশনের ফুল বেঞ্চের তোপের মুখে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ, মালদহের জেলাশাসক স্মিতা পাণ্ডে ও পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী। ওই প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে কাকে সরানো হতে পারে, তা সোমবারই চূড়ান্ত করা হবে বলে কমিশন সূত্রের খবর।

সওয়াল জবাব

• গত বারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী
• প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী
• প্রতিটি বুথে অন্তত দু’জন সশস্ত্র পুলিশ
• বিধিভঙ্গ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের রিপোর্ট তিন দিনে কমিশনে পৌঁছতে হবে
• তদন্তে পক্ষপাতদুষ্ট বা নিষ্ক্রিয় থাকলে কড়া ব্যবস্থা
• জামিন অযোগ্য পরোয়ানা দ্রুত কার্যকর করা
• সব দিক খতিয়ে দেখে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের ব্যবস্থা
• স্কুলগুলির বুথে মেরামতি দরকার হলে টাকা দিতে হবে শিক্ষা দফতরকে

বিরোধী দলগুলি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) সুনীল গুপ্তের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে এ দিনও সম্পতের কাছে সরব হয়েছে। তবে দিনের শেষে সুনীলবাবুর পাশেই দাঁড়িয়েছে কমিশন। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ ছিল, বারবার দরবার করার পরে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সিইও-র দফতর যে জবাব পাঠিয়েছে, তা হাস্যকর। এ ভাবে সিইও-র দফতর কাজ করলে রাজ্যে অবাধ নির্বাচন হওয়া যে সম্ভব নয় বিরোধী দলের কেউ কেউ কমিশনের কাছে এমন আশঙ্কাও করেছেন। তবে সাংবাদিক সম্মেলনে সম্পত বলেন, “সিইও-র কাজে আমি সন্তুষ্ট।”

কমিশন সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে হাবরা-কাণ্ড নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের তোপের মুখে পড়েন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল এবং পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। সম্পত তাঁদের জিজ্ঞাসা করেন, হাবরার বিডিও-র প্রথম অভিযোগপত্রে স্থানীয় বিধায়কের নাম থাকলেও তাঁর নামে এফআইআর করা হল না কেন? জেলাশাসক যে ব্যাখ্যা দেন তাতে সন্তুষ্ট হননি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। পুলিশ সুপার এই অবস্থায় বলেন, বিডিও-র দ্বিতীয় অভিযোগে বিধায়কের নাম ছিল না। তা সত্ত্বেও বিধায়ককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ফুল বেঞ্চ তখন জানতে চায়, বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা করা হল না কেন? এখানে বিডিও-র অভিযোগই যদি কার্যকর না করা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা তাঁরা বুঝতে পারছেন বলে মন্তব্য করেন তিন সদস্যের এক জন।

এ দিনের বৈঠকে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষকেও ভর্ত্‌সনা করা হয় বলে কমিশন সূত্রের খবর। সম্পত জানতে চান, কেশপুরে কিছু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ এসেছে। ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা সঠিক ছিল না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই জেলা পুলিশ মামলা করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। কমিশন সূত্রে বলা হয়, ভারতীদেবী জানান, কেশপুরের ঘটনার পদস্থ অফিসারদের দিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

কমিশন সূত্রের খবর, একই ভাবে মালদহের জেলাশাসক স্মিতা পাণ্ডে এবং পুলিশ সুপার রাজেশ যাদবের কাছে নির্বাচন কমিশনার হরিশঙ্কর ব্রহ্ম এবং নাসিম জাইদি জানতে চান, কালিয়াচক এলাকায় অপরাধীরা দিনের আলোয় ঘুরে বেড়াচ্ছে কী করে? পুলিশ সুপার তাঁদের জানান, কালিয়াচক থেকে খুব বেশি অভিযোগ আসেনি। ব্রহ্ম ওই জবাবে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দিল্লিতে বসে কমিশন যে অভিযোগ পাচ্ছে, তা জেলার পুলিশ সুপারের কাছে নেই! এটাই আশ্চর্যের! জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে ব্রহ্ম তাঁদের বলেন, নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করুন। অপরাধীদের গ্রেফতার করুন। বালুরঘাটে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্তা মানিক ভট্টাচার্য শনিবার তৃণমূলের কর্মিসভায় গিয়ে যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তা নিয়েও এ দিন খোঁজখবর নেয় কমিশন। এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর কাছে এ দিন তা জানতে চান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।

রাজ্যে প্রথম দফার ভোট ১৭ এপ্রিল। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিঙের চারটি আসনে ভোট হবে সে দিন। এ দিন জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে প্রথমেই এই তিন জেলার প্রস্তুতি নিয়ে চর্চা হয়। কোচবিহারের জেলাশাসক পি মোহনদাস গাঁধীর কাছে স্পর্শকাতর এলাকা এবং সন্ত্রস্ত ভোটারদের তালিকা দেখতে চাওয়া হয়। সেই তালিকা দেখাতে পারেননি জেলাশাসক। তাঁকে তিন দিনের মধ্যে তা দিতে বলে কমিশন। দুষ্কৃতীদের তালিকা তৈরিতে ঢিলেমি এবং সন্ত্রস্ত ভোটারদের তালিকা অসম্পূর্ণ থাকায় কমিশনের তোপের মুখে পড়েন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার। পাশাপাশি পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীকে আরও কার্যকর ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার রাজীব মিশ্রর কাছে শেখ বিনোদের পরিচয় জানতে চান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। কমিশন সূত্রে বলা হয়, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন, বিনোদের বাহিনী নাকি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সে জেল থেকে কবে বেরোবে, তা-ও জানতে চায় কমিশন। যুগ্ম-কমিশনার জানান, শেখ বিনোদ এখন জেলে। তবে বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় যে কোনও দিন বাইরে আসতে পারে সে। বাইরে এলেও পুলিশ তার উপর কড়া নজর রাখবে বলে কমিশনকে জানান তিনি।

সম্পত উবাচ

বিরোধী দল: রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ
কমিশন: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক

বিরোধী দল: সিইও দফতর এ ব্যাপারে কিছু করছে না।
কমিশন: শান্তি বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিরোধী দল: সিইও দফতর বিধিভঙ্গের তদন্তে নিষ্ক্রিয়।
কমিশন: দফতরের কাজকর্মে আমরা খুশি।

বিরোধী দল: কিছু সরকারি অফিসার পক্ষপাতদুষ্ট।
কমিশন: অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত শীঘ্রই।

বিরোধী দল: মাইক বিধি শিথিল হোক।
কমিশন: সিদ্ধান্ত শীঘ্রই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vs sampat election commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE