Advertisement
E-Paper

অভিযুক্তদের বন্দি রেখেই বিচার চায় সিবিআই

যতক্ষণ জলে রয়েছে, কুমির ততক্ষণ শক্তিশালী। তার দাঁত ভাঙতে হলে ডাঙায় তুলে আনতে হবে। এই আপ্তবাক্য মেনে সারদা মামলায় এ বার ‘কাস্টডিয়াল ট্রায়াল’-এর আবেদন পেশের তোড়জোড় করছে সিবিআই। আদালত আর্জি মঞ্জুর করলে ধৃত সকলকেই মামলার নিষ্পত্তি হওয়া ইস্তক জেলে থাকতে হবে। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে যাঁরা জামিন পেয়েছেন, তাঁদেরও ফিরতে হবে কারা-অন্তরালে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৪

যতক্ষণ জলে রয়েছে, কুমির ততক্ষণ শক্তিশালী। তার দাঁত ভাঙতে হলে ডাঙায় তুলে আনতে হবে।

এই আপ্তবাক্য মেনে সারদা মামলায় এ বার ‘কাস্টডিয়াল ট্রায়াল’-এর আবেদন পেশের তোড়জোড় করছে সিবিআই। আদালত আর্জি মঞ্জুর করলে ধৃত সকলকেই মামলার নিষ্পত্তি হওয়া ইস্তক জেলে থাকতে হবে। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে যাঁরা জামিন পেয়েছেন, তাঁদেরও ফিরতে হবে কারা-অন্তরালে।

এমন চেষ্টা কেন? কেন্দ্রীয় ব্যুরোর তদন্তকারীরা সেই ‘কুমির-তত্ত্ব’ তুলে ধরছেন। ওঁদের মতে, সারদা-মামলায় ধরা পড়া কেউ জামিনে ছাড়া পাওয়ার অর্থ, ডাঙায় তোলা কুমির জলে ফিরে গেল। ফলে সে আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। সাক্ষ্য-প্রমাণ ঘেঁটে দিয়ে তদন্তকে দুর্বল করে তোলাও তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়।

এ হেন আশঙ্কারই প্রেক্ষাপটে সিবিআই চাইছে, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সাঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত সারদা কেলেঙ্কারির সব অভিযুক্ত ফাটকের ও-পারে থাকুন। ব্যুরো-সূত্রের খবর: দেশের যত অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা ‘কাস্টডিয়াল ট্রায়াল’ চাইবে। এ ব্যাপারে আবেদন জানানো হবে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতগুলোয়, যেখানে ওই সব মামলার শুনানি চলছে।

সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর ছায়াসঙ্গিনী দেবযানী মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ ও সদ্য প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, ইস্টবেঙ্গল-কর্তা দেবব্রত সরকার, প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা রজত মজুমদার, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ কিংবা ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবাল সারদা কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়া এমন বেশ কয়েক জনের নামে সিবিআই মামলা করেছে। সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তো বটেই, সারদা-কাণ্ডে ভবিষ্যতে যাঁরা গ্রেফতার হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কাস্টডিয়াল ট্রায়াল চায় সিবিআই। উল্লেখ্য, ধৃতদের মধ্যে সৃঞ্জয় ও রজত ইতিমধ্যে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন।

সিবিআই-সূত্রের বক্তব্য: মন্ত্রী থেকে নেতা, প্রাক্তন পুলিশকর্তা, থেকে ব্যবসায়ী সারদা-কাণ্ডে যাঁরাই এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন, প্রত্যেকের সমাজে প্রভাব আছে। এক সিবিআই-কর্তার কথায়, “রাজ্যের এক মন্ত্রী তো দু’মাসের বেশি জেলে রয়েছেন। অথচ তাঁর মন্ত্রিত্ব যায়নি! এতেই স্পষ্ট, ওঁদের প্রভাব কতখানি।” তদন্তকারীদের আশঙ্কা, ‘প্রভাবশালীরা’ জামিনে ছাড়া পেলে মামলার সাক্ষীদের নানা ভাবে প্রভাবিত করতে পারেন, ভয়ও দেখাতে পারেন। “এতে সাক্ষীরা বিরূপ হয়ে গেলে অভিযুক্তদের সাজা হওয়া মুশকিল।” পর্যবেক্ষণ ওই অফিসারের।

তাই কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের ভাবনা। গত নভেম্বরে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস মামলায় চার্জশিট পেশের সময়েই কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের চেয়ে সিবিআই নিম্ন আদালতে আবেদন করেছিল। কিন্তু ওই মামলায় তদন্ত শেষ না-হওয়ায় আদালত কোনও নির্দেশ দেয়নি।

এই অবস্থায় সিবিআই ঠিক করেছে, মামলা যা-ই হোক না কেন, তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের জন্য কাস্টডিয়াল ট্রায়াল চাওয়া হবে। সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা জানান, সারদা মামলার তদন্তভার তাদের হাতে তুলে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, গরিব, নিম্নবিত্ত প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। অনেকে মেয়ের বিয়ের টাকা জমিয়েছিলেন, কেউ চিকিৎসার জন্য। সব গিয়েছে। “এর পিছনে যাঁরা, তাঁদের অপরাধ কোনও ব্যক্তি বা দল কিংবা রাজ্যের প্রতি নয়। ওঁদের অপরাধ গোটা সমাজের প্রতি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না-হলে ভবিষ্যতে ফের এমন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।” বলেন এক সিবিআই অফিসার।

বস্তুত গুরুত্বপূর্ণ মামলায় কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের বেশ কিছু নজির দেশে রয়েছে। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মতে, তদন্তকারীদের হাতে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের দরকার পড়ে না। “প্রভাবশালী ব্যক্তি জামিনে ছাড়া পেলেও তদন্তকারীর হাতে যদি উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ থাকে, তা হলে সাজা দেওয়া কঠিন নয়।” বলছেন তিনি। তবে সারদা-কাণ্ডে ব্যাপারটা অন্য। অরুণাভবাবুর মন্তব্য, “শোনা যাচ্ছে, সারদার বেশির ভাগ লেনদেন হয়েছে নগদে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সিবিআইয়ের হাতে যথেষ্ট লিখিত প্রমাণ নেই। তাই সাক্ষীর সাক্ষ্যদান খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

এবং সেই সাক্ষ্য অবাধ করার স্বার্থেই কাস্টডিয়াল ট্রায়াল করার যথেষ্ট যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন অরুণাভবাবু। আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্রও একসুর। তিনি বলেন, “তদন্ত চলাকালীন সাক্ষীদের থেকে যে বয়ান নেওয়া হয়, শুনানির সময়ে আদালতকে তা জানাতে হয়। কোর্ট সাক্ষীকে ডেকে পাঠিয়ে সেই বয়ান যাচাই করে। সাক্ষী ভয় পেয়ে গেলে তখন বলতে পারেন, আমার মনে নেই। সে ক্ষেত্রে মামলা লঘু হয়ে যাবে।”

ফলে সারদা-র মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলায় কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের যুক্তি দীপনারায়ণবাবুও মানছেন। পুরোটাই অবশ্য নির্ভর করছে বিচারকের সিদ্ধান্তের উপরে।

saradha scam sunanda ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy