আইন সংশোধন করে ‘অনাথ’ টোটোর দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত রাজ্যের পরিবহন দফতরের হাতেই তুলে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে পরিবেশবান্ধব ওই তিন চাকার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, সেই বিতর্কেরও অবসান ঘটল।
চালকের লাইসেন্স নেই, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেই, ব্যাটারিতে চলেএমন গাড়ি হাওড়া, কলকাতা ও নিউটাউন-সহ রাজের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নামলেও কে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়ে এত দিন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রাজ্য সরকার। এ বছরের জুলাই মাসে হাওড়ার ৫২ এবং ৫৮ নম্বর রুটের বাস অপারেটরেরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে আদালত জানিয়ে দেয়, স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা টোটোর রেজিস্ট্রেশন দেবে। অর্থাৎ পুরসভা ও পঞ্চায়েতের হাতেই দায়িত্ব তুলে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সেই প্রস্তুতি চলাকালীনই কেন্দ্র জানিয়ে দিল, অটোর মতো টোটোকেও নিয়ন্ত্রণ করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পরিবহণ দফতর।
পরিবহণ দফতরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, এ বছরের গোড়ায় দিল্লিতে টোটো থেকে পড়ে একটি শিশুর মৃত্যুর জেরে ওই গাড়ি বাতিলের দাবি তীব্র হয় রাজধানীতে। কিন্তু টোটোর নিয়ন্ত্রণ কারও হাতে না থাকায় গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি সরকার। এর মধ্যেই একটি জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে এপ্রিলের মাঝামাঝি দিল্লিতে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয় সেখানকার হাইকোর্ট। ক্ষমতায় এসে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রের নতুন বিজেপি সরকার। সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশে টোটো চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিল্লির ‘ব্যাটারি রিকশা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ আন্দোলনে নামায় কেন্দ্র কিছুটা চাপে পড়ে যায়। তারই প্রেক্ষিতে সব রাজ্যের সম্মতি নিয়ে পরিবহণ আইন সংশোধন করে সড়ক মন্ত্রক।
নবান্নের খবর, আইন সংশোধনের পরে শহরের রাস্তায় টোটো চলতে যে আর কোনও বাধা রইল না, তা জানিয়ে দিন দশেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ী। এই পরিবেশবান্ধব গাড়ির সুবিধা কী, তারও ব্যাখ্যা রয়েছে ওই চিঠিতে। সংশোধিত আইনে সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রক জানিয়েছে, মূলত প্রান্তিক পথে, অর্থাৎ শহরের মূল সড়কের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তায় ওই গাড়ি চলবে। তবে কোনও ভাবেই চার জনের বেশি আরোহী নেওয়া যাবে না। চালকের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স থাকতে হবে এবং তিন বছর অন্তর তা পুনর্নবীকরণ করতে হবে। এই গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক। যাত্রী-নিরাপত্তার স্বার্থে টোটোর মতো হাল্কা যানের চালক যাতে ইচ্ছে মতো গাড়ির গতি বাড়াতে না পারে, তার জন্য মোটরের শক্তি দু’হাজার ওয়াটের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে গাড়ির গতি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটারের বেশি তোলা যাবে না। সেই নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে সংশোধিত আইনে।
রাজ্য সরকার অবশ্য টোটোকে ‘আইনি’ করার কাজে নেমে পড়েছে। পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সংশোধিত আইন আমাদের হাতে এসেছে। টোটোকে দ্রুত আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।” কিন্তু রাজ্যের কোন শহরে কত টোটো চলে, তাতে কত শক্তির মোটর লাগানো, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেই পরিবহণ ভবনে। দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমাদের হাতে টোটো সম্পর্কিত কোনও আইন ছিল না। তাই ওই সব তথ্যও আমাদের কাছে থাকার কথা নয়। এ বার দেখব।” কিন্তু দিনদিন যে হারে টোটোর সংখ্যা বাড়ছে তাতে কত দিনে তাদের লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শেষ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে পরিবহণকর্তাদের একাংশ।
টোটো পরিবেশবান্ধব বলে নিউটাউনেও ওই গাড়ি বাড়াতে চায় হিডকো। আগামী ২ নভেম্বর টোটোর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিয়ে একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। সংস্থার পরিকল্পনা, নিউটাউনের কিছু মোড়ে টোটোর স্ট্যান্ড থাকবে। সেখানে থাকবে মোটরের ব্যাটারি ‘চার্জ’ দেওয়া ব্যবস্থা। এর জন্য বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে এক প্রস্ত কথাও হয়েছে। তবে আরোহীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সব রাস্তায় টোটো চলতে দেওয়া হবে না। মূলত বড় রাস্তার সঙ্গে সংযোগকারী পথেই ওই গাড়ি চলার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে সেই পথগুলি এখনও চূড়ান্ত নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy