Advertisement
E-Paper

আবু অধরাই, তবে ছাড়তে হচ্ছে সরকারি পদ

বিতর্কের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু বিত্ত উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরতে হচ্ছে তৃণমূল নেতা আবু আয়েশ মণ্ডলকে। তবে, পুলিশ এখনও তাঁকে ধরার সাহস দেখায়নি। ডানকুনি টোল প্লাজার কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে আবু আয়েশ রীতিমতো ‘জুতোপেটা’ করার পরে ওই প্লাজার কর্মচারীদের সংগঠন তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছিল। ওই সংগঠনও তৃণমূলের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:১২

বিতর্কের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু বিত্ত উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরতে হচ্ছে তৃণমূল নেতা আবু আয়েশ মণ্ডলকে। তবে, পুলিশ এখনও তাঁকে ধরার সাহস দেখায়নি।

ডানকুনি টোল প্লাজার কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে আবু আয়েশ রীতিমতো ‘জুতোপেটা’ করার পরে ওই প্লাজার কর্মচারীদের সংগঠন তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছিল। ওই সংগঠনও তৃণমূলের। এর পরে মঙ্গলবার আবু আয়েশ ফোন করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তখনই তাঁকে সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। ঘটনা সম্পর্কে আবু আয়েশের বক্তব্যও লিখিত ভাবে দলকে জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শুধু সরকারি পদ থেকে সরতে বলেই কি আবু আয়েশের দায় ঝেড়ে ফেলবে শাসক দল? টোল প্লাজায় কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ ওঠার পরেও কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না?

তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, “পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে কেউ তো বারণ করেনি! দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশের যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নিতেই পারে।” শাসক দলের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, সরকারি নিগমের চেয়ারম্যানের পদ থেকে আবু আয়েশ আনুষ্ঠানিক ভাবে সরে যাওয়ার পরে পুলিশ ‘নড়েচড়ে’ বসতে পারে।

তবে, হুগলি জেলা পুলিশের দাবি, টোলপ্লাজার কর্মীরা আবুর বিরুদ্ধে জুতোপেটা ও গালিগালাজ করার যে অভিযোগ দায়ের করেছেন ও ঘটনার ধরন এবং সূত্র পরম্পরা মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে অপরাধটি ‘নন-কগনিজেবল’ (আদালতগ্রাহ্য নয়, থানা স্তরেই মেটানো যাবে এমন অপরাধ) এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার আগে সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কী সেই নির্দেশিকা?

জেলা পুলিশ জানায়, ওই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে নোটিস পাঠাতে হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। আক্রান্তদের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট চাওয়া হয়। অভিযুক্তকে ডাকামাত্র পাওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হয়। ঘটনার ব্যাপারে অভিযুক্ত কোনও সরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করেছিলেন কি না, তা দেখা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিতে হয়। অভিযুক্ত তদন্ত এড়াতে চাইছেন কি না, তা দেখা হয়।

জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ইতিমধ্যেই আবুকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত টোলপ্লাজার কর্মীদের কাছ থেকে ডাক্তারি পরীক্ষার শংসাপত্র চাওয়া হয়েছে। সোমবার অভিযুক্ত নিজেই থানায় এসেছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। রবিবার ঘটনার পরে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে এক বিধায়ককেও তিনি ঘটনার কথা জানিয়েছেন। থানাতেও ফোন করেছিলেন।

এ দিনও জেলা পুলিশ দাবি করেছে, রবিবার ডানকুনি টোলপ্লাজায় ওই ঘটনার যে সিসিটিভি-র ফুটেজ মিলেছে, তা অন্তত ২০ ফুট দূর থেকে উঠেছে। তা ছাড়া, সেই ফুটেজে অন্যান্য গাড়ি, যাত্রী, আবু আয়েশ ও টোলপ্লাজার কর্মীদের ছবি এমন ভাবে মিলেমিশে রয়েছে তা থেকে ঘটনাটি স্পষ্ট হচ্ছে না। এ জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের খোঁজ চলছে। এই সমস্ত পদ্ধতি মেটার পরেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা আইনসম্মত হবে। তবে, আবুর গাড়িতে লালবাতি ব্যবহারের বিরুদ্ধে পুলিশ যে কোনও ব্যবস্থা এখনই নিচ্ছে না, তা তাদের কথাতেই স্পষ্ট। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সব দিক দেখা হচ্ছে।”

বিরোধীরা অবশ্য পুলিশি-তত্ত্ব মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ভাঙড়ের আরাবুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করার পরেও তিনি যেমন পুলিশি ব্যবস্থা থেকে ছাড় পেয়েছিলেন, এখানেও সম্ভবত তা-ই হতে চলেছে।

কিন্তু টোল প্লাজা কাণ্ডে শাসক দল যে যারপরনাই অস্বস্তিতে পড়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আবু আয়েশ ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, আবু আয়েশ শারীরিক কারণে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। সেই ইচ্ছাই মঞ্জুর করা হচ্ছে। বিতর্কে জড়ানোর পরেই হঠাৎ শরীর খারাপের প্রশ্ন এল কেন, তা নিয়ে রহস্য অবশ্য থাকছেই! দলের ‘নির্দেশ’-এই তাঁকে পদ ছাড়তে হচ্ছে বলে ইঙ্গিতও মিলেছে।

পার্থবাবু বলেন, “উনি ইস্তফা দিতে পারেন। তবে তাঁকে বলা হয়েছে, ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে। তার পরে দলের যা করণীয়, করা হবে।” আবু আয়েশও টোল প্লাজার কর্মীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। সেই ব্যাপারে কর্মীদের বক্তব্য ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এখন তাঁরা আবু আয়েশের লিখিত জবাবের অপেক্ষা করছেন। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, বুধবার দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত টোলপ্লাজায় গিয়ে সেখানকার দলীয় সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে ঘটনা নিয়ে কথা বলবেন। তার ভিত্তিতেই রিপোর্ট পাঠাবেন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।

abu ayesh mondal tmc leader dankuni toll plaza
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy