পাড়ুই হত্যাকাণ্ডের পরে এ বার আমতার গণধর্ষণ মামলায় উচ্চ আদালতের তোপের মুখে পুলিশ।
বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষের হত্যা মামলায় তদন্তে অবহেলার জন্য বুধবার খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে ভর্ৎসনা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২৪ ঘণ্টা পরে, বৃহস্পতিবার আমতার গণধর্ষণ মামলায় ফের পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সরব হল তারা।
হাওড়ার আমতায় শাশুড়ি ও বৌমার গণধর্ষণের মামলায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এ দিন মন্তব্য করেন, “এ এক অদ্ভুত সময়! হাইকোর্ট কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে না। কেউ গ্রেফতার হয় না। পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকে। সব ক্ষেত্রেই এখন এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।” ঘটনাচক্রে পাড়ুই কাণ্ডের শুনানিও চলছে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। পরপর দু’দিন দু’জেলার দু’টি মামলায় পুলিশকে দুরমুশ করলেন তিনিই।
মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ ও ধর্ষিতার পুড়ে মৃত্যু, পাড়ুই হত্যাকাণ্ড-সহ সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। বিচারপতি দত্তও বহু বার খেদ প্রকাশ করে বলেছেন, আদালত খোঁচা না-দিলে পুলিশ নড়েচড়ে বসার তাগিদই দেখায় না। আমতার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তাঁর উষ্মার কারণ ঠিক কী?
৬ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার আমতা থানার মুক্তিরচক গ্রামে একই পরিবারের বধূ ও শাশুড়িকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ৭ ফেব্রুয়ারি ওই পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তার পরে দীর্ঘদিন পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা যথাযথ তদন্ত শুরু না-করায় হাইকোর্ট ক্ষুব্ধ।
শুধু তা-ই নয়, ধর্ষিতা শাশুড়ি হাইকোর্টে জানান, তাঁরা নির্যাতিতা, অথচ তাঁদেরই বাড়ি ছেড়ে থাকতে হচ্ছে। কারণ, পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। অথচ যারা অভিযুক্ত, তারা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বহাল তবিয়তে। তাঁরা যাতে নিজেদের গ্রামে পরিবারের সকলের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে পারেন, তার জন্য কোর্টের হস্তক্ষেপ চান আবেদনকারিণী।
পুলিশ যে বসে নেই, আদালতে তা প্রমাণের চেষ্টা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মনজিৎ সিংহ। তিনি জানান, ওই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধরা পড়েছে প্রধান অভিযুক্ত রঞ্জিত মণ্ডলও। আবেদনকারিণীর কৌঁসুলি উদয়শঙ্কর ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, এই মামলা দায়ের করার পরে সবে গত সপ্তাহেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অথচ গণধর্ষণের ঘটনা ৬ ফেব্রুয়ারির। মূল অভিযুক্তকে ধরতে পুলিশ এক মাসেরও বেশি সময় নিয়েছে। এতেই বোঝা যায়, পুলিশ মামলাটিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে!
উদয়বাবু বলেন, ধর্ষিতাদের পরিবার গ্রামছাড়া। যারা অভিযুক্ত, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁদেরই! এর থেকেও বোঝা যায়, অত্যাচারিতদের পাশে পুলিশ কতটা দাঁড়িয়েছে!
সব শুনে ক্ষুব্ধ বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, গণধর্ষণের মতো গুরুতর মামলাতেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় কেন? ক্ষতিগ্রস্তেরা কোর্টের দ্বারস্থ না-হলে পুলিশ কেন নিজের থেকে নিজেদের কাজ করবে না? তার পরেই তিনি বলেন, লাঞ্ছিতাদের পরিবারের সকলে যাতে গ্রামে বাস করতে পারেন, সুরক্ষা-সহ তা সুনিশ্চিত করতে হবে আমতার সার্কেল ইনস্পেক্টরকে। নির্দেশ পালন করা হল কি না, ৬ মে রাজ্য সরকারকে তা জানাতে হবে। দিতে হবে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট, তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্টও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy