Advertisement
E-Paper

আলুবীজ তৈরি করেও দিতে পারছে না রাজ্য

আলুবীজের জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন চাষিরা। বীজ তৈরি হয়ে পড়েও রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় তা চাষিদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। আলু চাষের বীজের জন্য ফের ভিন্-রাজ্যে খোঁজ করতে হচ্ছে এ রাজ্যের তিন জেলার কৃষিজীবীদের। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর বক্তব্য, “যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে ঠিক হয়নি। কেন এমন হল তা বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের থেকে জানতে চাইব।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫

আলুবীজের জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন চাষিরা। বীজ তৈরি হয়ে পড়েও রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় তা চাষিদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। আলু চাষের বীজের জন্য ফের ভিন্-রাজ্যে খোঁজ করতে হচ্ছে এ রাজ্যের তিন জেলার কৃষিজীবীদের।

রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর বক্তব্য, “যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে ঠিক হয়নি। কেন এমন হল তা বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের থেকে জানতে চাইব। চাষিরা আমাকে সরাসরি জানালে প্রতিকারের চেষ্টা করব।”

এ রাজ্যে আলু চাষের জন্য বীজ লাগে ৫৫ লক্ষ প্যাকেট (প্রতি প্যাকেটে ৫০ কেজি)। অক্টোবর থেকেই রাজ্যে আলু চাষ শুরু হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ দেশের প্রথম সারির আলু উৎপাদক রাজ্য হলেও বীজের জন্য পঞ্জাব বা হিমাচলপ্রদেশের উপরে নির্ভরশীল এখানকার চাষিরা। সেখান থেকে চড়া দামে ওই বীজ কিনতে হতো তাঁদের।

রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূল সরকার আশ্বাস দিয়েছিল, রাজ্যে আলুবীজ উৎপাদন করা হবে। ন্যূনতম দামে (৫০ কেজির প্যাকেটপিছু ১,২৫০ টাকা) সেই আলুবীজ রাজ্য সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করবে চাষিদের।এ বার আলু চাষের মরসুম শুরুর আগে রাজ্য বীজ নিগম আলুবীজ তৈরির জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করে। সেইমতো দু’দফায় অন্তত ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে।

এই আয়োজনের কথা চাষিদের বিভিন্ন কৃষি সমবায়ের কর্তা এবং ফার্মার্স ক্লাবের কো-অর্ডিনেটরের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। বীজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা জমা দেন ১,৮০০-২,০০০ চাষি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাষিদের থেকে আলুবীজের পুরো দাম নেননি। চাহিদা অনুয়ায়ী, অগ্রিম বাবদ কারও কাছে এক হাজার, কোনও ক্ষেত্রে পাঁচ বা দশ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। টাকা জমা দেওয়ার রসিদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন ফার্মার্স ক্লাব এবং কৃষি সমবায়কে আলুর বীজ দেওয়ার বিধিবদ্ধ টোকেন দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ১২০ টন বীজ তৈরি করে। কিন্তু মরসুমের শুরুতে বলা হয়, ওই আলুবীজ চাষিদের দেওয়া যাবে না। কারণ, রাজ্য বীজ নিগম এখন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি বীজ দেওয়ায় আইনি বাধা আছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে।

ফলে, রাজ্যের প্রধান আলু উৎপাদক জেলা হুগলি, বর্ধমান এবং নদিয়ার বেশ কয়েকটি কৃষি সমবায়-সহ তিন জেলার বিভিন্ন ফার্মার্স ক্লাবের সদস্য চাষিরা বিপাকে পড়েন। আলুবীজের অভাবে অনেকেই এখনও চাষ শুরুই করতে পারেননি। ইতিমধ্যে রাজ্য বীজ নিগমেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।

কেন আলুবীজ দেওয়া যাচ্ছে না চাষিদের? বীজ নিগমের এক কর্তা বলেন, “বিধি অনুযায়ী, সরকারি ব্র্যান্ডনেম ছাড়া অন্য কেউ আলুবীজ বিক্রি করতে পারে না। তাতে বীজের মান নিয়ে সংশয় থাকে চাষিদের মনে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্র্যান্ডনেমে এ বার আলুবীজ বিক্রি করতে চেয়েছিল। সেই কাজে আপত্তি জানিয়েছে বীজ নিগম।” বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তাও মেনেছেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কিছু অফিসার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডনেমে আলুবীজ বিক্রির পরিকল্পনা করেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, নিজস্ব ব্র্যান্ডনেমে আলুবীজ বাজারে আনায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই নাম হবে। অন্য কোনও মতলব ছিল না। কিন্তু সরকারি নিয়মের কথা জানতে পেরে আমরা প্রকল্পটি বন্ধ করে দিই। আমাদের ওই অফিসারেরা বীজ দিতে না পারায় চাষি ও কয়েকটি সমবায় সমিতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।”

কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ নয়। এমনিতেই গত মরসুমে আলু ফলিয়েও রাজ্য সরকারি সিদ্ধান্তে তা ভিন্-রাজ্যে পাঠাতে না পেরে ক্ষতি হয় চাষিদের। এ রাজ্যের আলুর ক্রেতা ওড়িশা এ বার আলুর উৎপাদন বাড়িয়ে ফেলেছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে অনেক কৃষিজীবীই ভাবেন, কম দামে বীজ পেলে, তাঁদের সমস্যা কমবে। সমস্যা কমেনি। বরং বেড়েছে। চাষিদের বক্তব্য,“কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা জমা দিয়েছিলাম। সেই রসিদ এখনও আমাদের কাছে রয়েছে। তার উপরে এখন কোথা থেকে আমরা ফের বীজ কেনার টাকা জোগাড় করব?” কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমরা চাষিদের পাশে আছি।” বীজ নিগম এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সদুত্তর দিতে পারেননি।

potato seed gautam bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy