Advertisement
E-Paper

আসছেনই না উপাচার্য, অব্যাহত অচলাবস্থাও

এক দিকে উপাচার্য। অন্য দিকে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। তিন পক্ষের লড়াইয়ের কোনও সমাধানই দেখা যাচ্ছে না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়েই আসছেন না, অথচ শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য একের পর এক নির্দেশ বেরোচ্ছে! উপাচার্যকে না পেয়ে শিক্ষকরা ছুটছেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। সব মিলিয়ে জটিলতর হচ্ছে যাদবপুরের সমস্যা। সমাধান কোথায়, বুঝতে পারছে না কোনও পক্ষই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৩

এক দিকে উপাচার্য। অন্য দিকে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। তিন পক্ষের লড়াইয়ের কোনও সমাধানই দেখা যাচ্ছে না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়েই আসছেন না, অথচ শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য একের পর এক নির্দেশ বেরোচ্ছে! উপাচার্যকে না পেয়ে শিক্ষকরা ছুটছেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। সব মিলিয়ে জটিলতর হচ্ছে যাদবপুরের সমস্যা। সমাধান কোথায়, বুঝতে পারছে না কোনও পক্ষই।

খাতায়-কলমে গত ১০ অক্টোবর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অভিজিৎ চক্রবর্তী। অথচ পুজোর ছুটির পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দ্বিতীয় দিন, মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসমুখো হলেন না। সোমবার শিক্ষক-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের জন্য জারি হয় শৃঙ্খলারক্ষার নির্দেশিকা। তা নিয়ে বিতর্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল নানা মহলে। সেটা মেটার আগেই মঙ্গলবার শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁদের বিভাগীয় প্রধানের কাছে থেকে নতুন নির্দেশিকা পান। তাতে বলা হয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতি দিন ক’টি ক্লাস নিলেন, ক’টি নিতে পারলেন না, ব্যাখ্যা-সহ ধারাবাহিক ভাবে তার রিপোর্ট জমা দিতে হবে বিভাগীয় প্রধানদের কাছে। এই নির্দেশিকা নিয়ে শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

সোমবারের মতো এ দিনও অবশ্য বেশ কিছু ক্লাস হয়েছে ক্যাম্পাসে, হয়েছে পরীক্ষাও। আন্দোলন অব্যাহত রাখলেও ছাত্রছাত্রীদের একাংশ ক্লাস বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা দূর হওয়া কঠিন বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্তদের একটা বড় অংশ।

যাদবপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সোমবারই হস্তক্ষেপ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “স্বাভাবিকতা ফেরাতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের মিলিত ভাবেই। তার বাইরে সরকার আর কী করবে? তবে এটাও ঠিক, দিনের পর দিন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা মেনে নেওয়াও রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়!” কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সেখানে রাজ্য কি হস্তক্ষেপ করতে পারে? সরাসরি জবাব এড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “চেষ্টা করছি আলোচনা করে পথ বার করতে। সেই জন্যই জুটার সঙ্গে কথা বলেছি, বুধবার অন্য শিক্ষক সংগঠন ‘অ্যাবুটা’কে ডেকেছি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বলছি, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ক্লাসে ফিরুন।”

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্লাস করতে ইচ্ছুক কিছু পড়ুয়া তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করছেন। তাঁদের অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীদেরই একাংশের বাধায় ক্লাসে ফিরতে পারছেন না তাঁরা। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি আন্দোলনকারীরা। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানিয়েছেন, এমন কোনও অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি। তাঁর আশ্বাস, ক্লাস করতে ইচ্ছুক কোনও পড়ুয়াকে বাধা দেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ করবেন।

এত কিছুর মধ্যে উপাচার্য কোথায়?

গত শুক্রবার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদে গিয়েছিলেন উপাচার্য। গত শুক্রবার সেখান থেকেই তিনি স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে খাতায়-কলমে দায়িত্ব নেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে সংসদের দফতরে থাকাটা ভাল ভাবে নেয়নি সরকার। মঙ্গলবার আর সংসদে যাননি তিনি। বরং সেখানে তাঁর যে সব ফাইল ছিল, সেগুলি মঙ্গলবার অভিজিৎবাবুর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান উচ্চশিক্ষা দফতরের এক সূত্র।

মঙ্গলবার সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকলোনজি (আইআইইএসটি, পূর্বতন বেসু)-তে যান অভিজিৎবাবু। সেখানে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক কাটিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। কিন্তু কোথায়? অভিজিৎবাবুর জবাব, “বলব কেন? অবান্তর প্রশ্ন কেন জিজ্ঞাসা করছেন?” বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে যাবেন, তা-ও জানাতে চাননি তিনি। তিনি ক্যাম্পাসে না গেলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি কী করে ফিরবে? অভিজিৎবাবুর জবাব, “আমি উপাচার্য। আমার বিষয় আমি বুঝব।”

মঙ্গলবারও উপাচার্য ক্যাম্পাসে না এলেও তাঁর বিরোধিতায় বিক্ষোভ, স্লোগানে উত্তপ্ত ছিল ক্যাম্পাস। কাল রেজিস্ট্রারের নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে এ দিন ফের সরব হয় শিক্ষক সংগঠন জুটা। বেলা ১২টা নাগাদ জুটার কয়েক জন প্রতিনিধি এই দাবিতে দেখা করেন রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষের সঙ্গে। রেজিস্ট্রার জানান, উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবেন। সন্ধ্যায় অবশ্য প্রদীপবাবু বলেন, “নির্দেশিকা বহাল আছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি, উপাচার্যের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ ইত্যাদির প্রতিবাদে কালা দিবস, মিছিল, কনভেনশনের ডাক দিয়েছে জুটা। সোমবারই এ নিয়ে জুটার সভাপতিকে চিঠি দেন রেজিস্ট্রার। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ জুটা জানায়, তাদের কর্মসূচি বহাল থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রেজিস্ট্রার ফের একটি চিঠি দিয়ে জানান, সোমবারের ওই চিঠি আসলে আবেদন, নির্দেশ নয়। জুটা জানিয়েছে, হয় সোমবারের চিঠি প্রত্যাহার করা হোক, অথবা সেটি বহাল থাকুক। মঙ্গলবার সন্ধ্যার চিঠিকে আমল দিতে রাজি নন তাঁরা। আজ, বুধবার জুটার সাধারণ সভার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের পর থেকে ক্লাস বয়কট চালাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ক্লাস হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে প্রাত্যহিক ক্লাসের খতিয়ান চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিভাগীয় প্রধানেরা শিক্ষকদের সে কথা জানিয়েছেন। যার পরে অধিকাংশ শিক্ষকেরই বক্তব্য, “দৈনন্দিন কাজের হিসেব চাওয়ার মানে কী? আমরা কি দিনমজুর?” পরে রেজিস্ট্রার জানান, ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কি না, তা আদালতকে জানাতে হলে ক্লাসের রেকর্ড লাগবে। তবে কর্তাদের একটা অংশের ব্যাখ্যা, আদালতের নির্দেশের আড়ালে আসলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসমুখী করার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়।

আন্দোলনকারী এক ছাত্র বলেন, “১৭ অক্টোবর ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ সভার বৈঠক। সেখানে আলোচনা করে পরবর্তী পদ্ধতি স্থির করা হবে।” কিন্তু এ ভাবে ক্লাস বয়কটে তাঁদের ক্ষতি হচ্ছে না? ছাত্রটি বলেন, “কর্তৃপক্ষই তো সেটা করতে বাধ্য করছেন!”

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ, গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা এ দিন ক্লাস হচ্ছে কি না, পরীক্ষা হচ্ছে কি না, সে সবের খোঁজ নেন। এ নিয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে ক্ষোভ জানান শিক্ষকেরা। রেজিস্ট্রার তাঁদের লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাতে বলেছেন। যদিও আইবি-র এক কর্তার দাবি, খোঁজখবর করা তাঁদের কাজ। কর্তৃপক্ষও তাঁদের আটকাননি।

এ দিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গেটে পুলিশ প্রহরা ছিল। রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে অস্বীকার করায় দুপুরে কিছু ক্ষণের জন্য এক নম্বর গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল।

abhijit chakrabarty juta vice chancellor jadavpur university ju
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy