Advertisement
E-Paper

এলাকায় শিকড় রাখতে স্থায়ী বুথ কমিটির প্রস্তাব

যেনতনপ্রকারে রক্তপাত আটকানোই এখন লক্ষ্য সিপিএমের। দলের রাজ্য সম্মেলনে এ বার সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে সেই বিষয়টিই। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই সম্মেলনে পেশ-হওয়া খসড়া রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রতিবেদনে এ বার স্থায়ী বুথ কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এত দিন পর্যন্ত নির্বাচনের আগেই শুধুমাত্র বুথভিত্তিক কমিটি তৈরি করা হত। এখন তার বদলে স্থায়ী কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। এবং সেখানে দলীয় সদস্যের বাইরেও লোকজনকে রাখার কথা বলা হচ্ছে।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৭

যেনতনপ্রকারে রক্তপাত আটকানোই এখন লক্ষ্য সিপিএমের। দলের রাজ্য সম্মেলনে এ বার সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে সেই বিষয়টিই। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই সম্মেলনে পেশ-হওয়া খসড়া রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রতিবেদনে এ বার স্থায়ী বুথ কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এত দিন পর্যন্ত নির্বাচনের আগেই শুধুমাত্র বুথভিত্তিক কমিটি তৈরি করা হত। এখন তার বদলে স্থায়ী কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। এবং সেখানে দলীয় সদস্যের বাইরেও লোকজনকে রাখার কথা বলা হচ্ছে।

তার পাশাপাশিই, দলের গণ-সংগঠনগুলির মধ্যে ছাত্রফ্রন্ট সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ছাত্রফ্রন্টকে প্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক হওয়ার প্রবণতা থেকে বার করে এনে অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন তৈরির করা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে সিপিএমের অন্দরে।

রাজ্য সম্মেলনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতি বছরই এ রাজ্যে কোনও না কোনও নির্বাচন হয়। নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটার তালিকা সংশোধন, সংযোজন এবং বিয়োজনের কাজও চলতে থাকে। ওই সময়ে কমিশনের সঙ্গে কাজ করার জন্য এক জন করে বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) নিয়োগ করতে হয়। তাই সম্মেলনের প্রতিবেদনে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ‘প্রতিটি বুথে স্থায়ী ভাবে একটি বুথ কমিটি গঠন করা হোক। এই বুথ টিম শুধু পার্টি সদস্যদের নিয়েই গঠিত হবে, এটা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে যে মাপকাঠি আমাদের মেনে চলা আবশ্যিক, সেগুলি হল:

১) পার্টির আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা,
২) সাহসিকতা,
৩) এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা,
৪) ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতা।
অপর যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে সেটি হল, এলাকার জনবিন্যাস। এই সমস্ত দিকগুলি বিবেচনায় রেখে আমাদের বুথ টিম গড়ে তুলতে হবে। বিএলএ হবেন এই বুথ টিমের অন্যতম সদস্য।’

দলের ক্ষেত্রে যেমন শাখা কমিটির তলায় স্থায়ী বুথ কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তেমনই ছাত্রফ্রন্টের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বেরিয়ে এলাকায় সংগঠন গড়ে তোলার উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এ বার। রাজ্য সম্মেলনের হিসেবই বলছে, রাজ্যে পালাবদলের পরে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাত্রফ্রন্ট। গত তিন বছরে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনে পার্টি সদস্যের সংখ্যা ৪৪৪২ থেকে কমে হয়েছে ৩২৯১ জন। এর কারণ হিসেবে দলীয় নেতারা মনে করছেন, সাধারণ ভাবে এসএফআই কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-কেন্দ্রিক সংগঠন গড়ে তোলে। কিন্তু রাজ্যের পালাবদলের পর থেকে যে ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শাসক দলের হিংসা নেমে এসেছে, তাতে সংগঠন গড়ে তোলাই যাচ্ছে না। তাতেই ধাক্কা খেয়েছে ছাত্র সংগঠন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘অধিকাংশ জেলাতেই কলেজ নির্বাচনের সময় ছাড়া জোনাল কমিটি ও জেলায় কর্মরত ছাত্রফ্রন্টের কর্মীদের সমন্বয় থাকে না।’ এ বার সেই কারণেই সংশ্লিষ্ট কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের এলাকাতেও ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যাতে কলেজের ক্যাম্পাসের মধ্যে বিশেষ লোকবল না থাকলেও এলাকায় এসএফআইয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকে।

রাজ্য সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিদের একাংশের দাবি, স্থায়ী বুথ টিম ও শিক্ষাঙ্গনের বাইরে ছাত্রফ্রন্টকে ছড়িয়ে দিতে পারলে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র সমস্যা অনেকটাই দূর করা সম্ভব হবে। ‘দুর্বল’ এলাকাগুলিতেও সংগঠন এর ফলে মজবুত হবে। এক প্রতিনিধির কথায়, “শুধু পার্টিকে সক্রিয় করাই নয়, পার্টি সদস্যের বাইরেও বিপুল সংখ্যক বামপন্থী মানুষ সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই সক্রিয় পার্টি সদস্য না থেকেও সমর্থক হয়ে থাকতে চান। তাঁদের দৈনন্দিন কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত করে পার্টি-বৃত্তের মধ্যে নিয়ে আসাও বুথ কমিটির অন্যতম লক্ষ্য।”

সিপিএমের একাংশের এ-ও বক্তব্য, ২০১১-র পর থেকে দলের বিভিন্ন স্তরে এলাকায় অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় মুখকে সামনে নিয়ে আসার পিছনে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পার্টি-সদস্য না হলেও তাঁকে দলের বিভিন্ন কাজে সামনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটির তরফে। আসন্ন পুর নির্বাচনে এ ধরনের জনপ্রিয় মুখকে প্রার্থী করার উপরেও জোর দিচ্ছে সিপিএম। এ ধরনের মুখ তুলে আনার ক্ষেত্রে বুথ কমিটি সাহায্য করবে বলেই মনে করছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্যে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা সিপিএমের গর্বই ছিল বুথভিত্তিক ভোটার তালিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব রাখা। সেই কাজটাই গত কয়েক বছর ধরে ধাক্কা খেয়েছে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ায়। তার জেরে এখন নির্বাচনের আগে নিজেদের ক্ষয়ের আগাম সম্ভাবনাও অনেক ক্ষেত্রে আঁচ করতে পারছে না দল। স্থায়ী বুথ কমিটি তৈরি হলে এই প্রবণতাও কমবে বলে মনে করছেন বিমান বসুরা।

cpim state conference atri mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy